অন্দরমহলের পশু থেকে সন্তানদের কে বাঁচাবে?

প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০১৯, ১৯:৫৫

ইফতেখায়রুল ইসলাম

আমি সত্যিকার অর্থেই জানি না, বুঝি না সম্পূর্ণ মানসিকভাবে আক্রান্ত একজন ব্যক্তি যার লক্ষ্যই ছোট বাচ্চাকে তার বিকৃত মানসিকতার শিকার বানানো। তার কাছ থেকে বাবা মায়ের কোন দুঃসাধ্য চেষ্টা তার নিজ সন্তানকে রক্ষা করাতে পারে?

আমি সত্যিই জানি না যে ছোট্ট শিশু তার নিজ বাসায় নিরাপদ থাকতে পারেনা, তার নিরাপত্তা কে কিভাবে নিশ্চিত করবে। যে ছোট্ট শিশুরা নিজ আত্মীয় স্বজনের বিকৃত চাহিদা থেকে রক্ষা পায় না তার সেইফগার্ড কে, কিভাবে হবে?

যে আমাদের আদরের সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য আমরা নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছি, তার সুস্থ, সুন্দর জীবনই তো অনিশ্চিত করে দিচ্ছে বিকৃত রুচির অমানুষেরা।

শুনতে খারাপ লাগলেও নিজ নানা, নিজ দাদা, নিজ চাচা, নিজ পরম আত্মীয় কে নেই যে আমাদের মেয়েদের সর্বনাশে ভূমিকা রাখছে না। দীর্ঘ আড়াই বছর ক্রাইম জোনের অভিজ্ঞতা আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে নিজ আত্মীয় স্বজনের কাছে আমাদের ছোট্ট শিশুরা অনেকাংশেই অরক্ষিত। বিশ্বাস তাহলে করবো টা কাকে?

আপনি বলছেন ছোট্ট ছেলে মেয়েকে চোখে চোখে রাখেন, আচ্ছা রাখলাম। বাইরের পশু থেকে রক্ষা করলাম, অন্দরমহলের পশু থেকে কে বাঁচাবে? এই ব্যাধির খুব সহজ কোনো সমাধান দেখছি না, পাচ্ছি না। অস্থির লাগছে, খুব অস্থির।

৮ মাসের শিশু, ৯০ বছরের বৃদ্ধা মহিলা ছাড় পাচ্ছে না বর্বর, পাষন্ডদের কাছ থেকে। বর্বরদের তালিকায় কারা আছে? সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রতিটি বর্বরতার পেছনের অমানুষগুলোকে মনে করুন। অমানুষগুলো ঠিক যেন মানুষের মত, খুব অবাক লাগছে তাই না। কোন প্যারামিটারে মাপলে, কোন বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিলে এই সমস্যাকে একটা কাঠামোতে আনা যায়, আমি জানি না।

টাই পড়া ভদ্রলোক থেকে ধরে নিম্নশ্রেণির কে নেই এই তালিকায়? নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয়কে তো আইন দিয়েও সমাধান সম্ভব নয়। সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা কে রাখবে, এই প্রশ্নের উত্তর যদি আপনি বলেন রাষ্ট্র, তবে এই রাষ্ট্র কে বা কারা? আপনি, আমি সবাই মিলেই রাষ্ট্র। আমি জানি না আসলেই সমাধান কি তবুও চেষ্টা করা যেতে পারে।

মানুষ হিসেবে নিজ পরিবারে বা আশেপাশে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদ করুন। প্রয়োজনে সামাজিকভাবে বয়কট করুন। আপনি নিম্ন থেকে উচ্চ যেই শ্রেণির অধিভুক্তই হন, নিজ সন্তানকে দয়া করে ভাল মানুষ বানানোর চেষ্টা করুন। একটু খেয়াল রাখুন আপনার ছেলেটা বখে যাচ্ছে কিনা, প্রয়োজনে নিজ সন্তানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিন, কি পারবেন?

পারিবারিক শিক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ । আমি খারাপ করলে আমার বাবা মা অন্যের কাছে মুখ দেখাবে কি করে। এই বোধ যে সন্তানদের মাঝে থাকে তারা চাইলেই খারাপ পথে যেতে পারে না । ধর্মীয় মূল্যবোধ সন্তানকে যযথাযথভাবে আয়ত্ত করাতে পারলে সমস্যা নিরসনে অনেকটা পথ পাড়ি দেয়া যাবে ।

বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলাকালীন সময়ে একজন বিকৃত রুচির ধর্ষকের জন্যও আইনজীবী দাঁড়িয়ে যান , আপনার পেশার প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেই বলছি এরকম দুই একটি মামলা ছেড়ে দিলে আপনার কোনও ক্ষতি হবে না, দয়া করে একজোট হয়ে একটা উদাহরণ সৃষ্টি করুন। ওদের বুঝতে দিন ওরা ঘৃৃণিত। পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা করুন এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসুন। পাপ এবং পাপী দুজনকেই ঘৃণা করুন। যে সমাজে পাপকে ঘৃণা করতে বলা হয়েছে সেরকম সমাজ আমাদের হয়ে নিক আগে তারপর আমরা না হয় সেরকম ভাববো।

অনেকেই বলছেন ধর্ষণের শাস্তি যেন মৃত্যুদণ্ড করা হয়, আইনে এর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃৃত্যুদণ্ডই আছে। আমাদের দরকার কিছু উদাহরণ। কিছু উদাহরণ প্রতিষ্ঠিত হলেই আশা করা যায় এই প্রবণতা অনেকাংশে কমে আসবে । এইসব বর্বরতার চূড়ান্ত সমাধান আসলে ব্যাপক । চারপাশ থেকে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে নতুবা সমাধান অচিরেই সম্ভব নয় ।

জানি এই বলায় কোনও কাজে আসবে না। তুই পাপী যে নিজের আত্মীয় স্বজনকেই ছাড়িস না তার কাছে কী চাইবো? আমাদের ছোট ছোট বাচ্চা ছেলে মেয়েগুলোকে দয়া করে ছেড়ে দে। এতোটা পশু হয়ে উঠিস না যেন আমাদের বাচ্চারা আমাদেরকেও ভয় পেতে শুরু করে।

আমাদের সন্তানদের দুধে ভাতে বড় হয়ে উঠতে দে দয়া করে। বেড়ে উঠতে দে স্বাভাবিকতায়।

 লেখক: অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন), ওয়ারী।