মানবতা আজ ছুটিতে!

মানিক মুনতাসির
 | প্রকাশিত : ০৮ জুলাই ২০১৯, ২০:৫৫

সমাজের সর্বত্রই মানুষ আছে । দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি । সবাই দেখতে মানুষের মতই। কিন্তু মানসিকতা এতটাই হিংস্র যে পশুর চেয়েও অধম। ধরুন কুকুরের কথাই বলি। এই পশুটির কিন্তু একটা প্রজননকাল রয়েছে। প্রজনন সময় ছাড়া বাকি সময়ে মাদা কুকুর কিন্তু মাদী কুকুরকে ডিস্টার্বও করে না। অথচ মানুষরূপী পশুর চেয়েও অধম হয়ে গেছে সৃষ্টির সেরা জীব মানবজাতি। বাড়িতে, গাড়িতে, অফিসে, রাস্তায়, স্কুলে, মাদ্রাসায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সবখানেই আজ লোলুপ দৃষ্টি ধর্ষকদের। এদের লালসার শিকারে থেকে শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না ।

মানুষের হাত-পা চোখ, নাক, মুখ সবই আছ্।ে নাই কি জানেন মানুষের মানবিকতা নেই। মানবতা নেই । মানবতাকে আমরা আপাতত ছুটিতে পাঠিয়েছি। তার ছুটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত হয়তো মানবিক মূল্যবোধ জাগবে না।

সাত বছর বয়সী সায়মাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। কি লোমহর্ষক ঘটনা। যে কুলাঙ্গার কাজটি করেছে সে কিন্তু দেখতে অবিকল মানুষের মতই । হয়তো তার ঘরেও এমন একটি কন্যা শিশু রয়েছে। কিংবা নেই। এ নিয়ে ফেসবুক, সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আমরা অনেকেই হা-হুতাশ করছি। কিন্তু চোখের সামনে অন্যায় হলে প্রতিবাদ করছি না। চলে আসছি ফেসবুকে। করছি ভিডিও।

বরগুনায় রিফাতকে যখন কোপানো হচ্ছিল তখনো আশপাশে বহু মানুষ ছিল কিন্তু কেউ প্রতিবাদ কিংবা প্রতিরোধ করেনি। যদিও ফেসবুকে আমরা সবাই এর প্রতিবাদ করেছি। প্রতিদিন কত ঘটনা ঘটছে তার সবগুলো হয়তো মিডিয়াতে আসছেও না। তবে ফেসবুকের কল্যাণে আমরা এখন অনেক ঘটনাই খুব দ্রুত ছড়িয়ে দিতে পারি। তবে সেটা হতে হবে ইতিবাচক।

কিন্তু এই ফেসবুক আজ ফেইকবুকে পরিণত হয়েছে। এখানে কথায় কথায় মানুষকে গালিগালাজ করা হয়। ঘটনা আগাগোড়া না জেনেই নির্দোষকে দোষী বানানো হয়। এটাও কিন্তু একটা ভয়াবহ সামাজিক অপরাধ।

মানুষ মানুষকে খুন করছে। কিন্তু হাত কাঁপছে না। খুন আগেও হতো। তবে ধরণ পাল্টেছে। এখন প্রকাশ্যেই খুন করা হয়। কোপানো হয়। এসিড মারার ঘটনা এখন কমে গেছে। এখন জানে মেরে ফেলা খুব সহজ হয়েছে। সেজন্যই হয়তো এসিড মারা কমে গেছে।

পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। মানুষ কতটা নির্মম আর পশুত্বতায় রূপ নিয়েছে। ধিক্কার ঐসব মানুষরূপী জানোয়ারদের। অবশ্য ধিক্কার জানিয়েও লাভ নেই। কেনা আমাদের লজ্জা নেই। আজকে একজনকে কোন অপরাধের দায়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে কালকে হয়তো বুক উচিয়ে একই কাজ করার সাহস কেউ পেত না। ছোট খাটো শাস্তি হেেলা এখন একই ঘটনা বারবার ঘটানো হচ্ছে । কারণ তাদের না আছে লজ্জা, না আছে ভয়। এ যেন সাহসী নয় দু:সাহসী। এর পেছনে কারা কাজ করছে। সেটাও হয়তো আমরা জানি । কিন্তু তারপরও নাম বলি না। প্রতিবাদও করি না ।

ঢাকার অদূরে নারিন্দায় এলাকায় রানা মিয়া নামের এক ব্যক্তি তার বাবাকে রাস্তায় ফেলে গেছে। সংবাদ মাধ্যমে রিপোর্ট হওয়ার পর সে তার বাবা মনু মিয়াকে দেখতে এসেছে। কিন্তু মুন মিয়া এতে খুশি তো হয়ই নি। এমন কি ছেলের সাথে যেতেও চায় না। অবশ্য ছেলেও তাকে নিতে চায় না। এক সময় মনু মিয়ার বাড়ি-ব্যবসা সবই ছিল। ছেলে-মেয়েরা সব লিখে নিয়েছে। মনু মিয়া এখন নি:স্ব। অবশেষে তার স্থান হয়েছে এক বৃদ্ধাশ্রমে। তাও সেটার বন্দোবস্ত করে দিয়েছে এক হকার। এই হচ্ছে সমাজের চিত্র।

এবার আসি একটা ভিন্ন ইস্যুতে। অপরাধীর বিচার হবে এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু বিনা বিচারে অপরাধী মারা পড়ুক কখনো মানবতা সমর্থন করে না। কারণ সেটা কোন সমাধান নয়। সেটা কোন বিচারও নয়। বরং একজন অপরাধীর সঠিক বিচার হওয়াই সভ্যতার অংশ।

এছাড়া অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার আগেই মেরে ফেলা মানে সে অপরাধীর কৃতকর্মের অনেক কিছুতেই আড়ালে থেকে যায়। যা এ দেশের মানুষ, সমাজ এমন কি রাষ্ট্রও হয়তো জানতে পারে না। মানুষ কিংবা সমাজের জানাটা জরুরি নয়। তবে রাষ্ট্রকে জানতে হবে। অপরাধীকে বিচার আওতায় না এনে তাকে শেষ করে দেয়ার মাধ্যমে সে অপরাধীর প্রশ্রয় দাতাদেরই মূলত আড়াল করা হয়। যার মাধ্যমে আসল অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক: সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :