ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

পরিত্যক্ত মিলের সঙ্গে ধান ছাঁটাইয়ের চুক্তি

মমিনুল ইসলাম বাবু
 | প্রকাশিত : ০৯ জুলাই ২০১৯, ০৮:৩৮

কুড়িগ্রামের উলিপুরে গম চাল ও ধান কেনায় খাদ্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি গম, ধান ও মিলারদের কাছ থেকে চাল কেনার কথা থাকলেও তা না করে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা একটি আস্থাভাজন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রকল্পের ডিও সমন্বয় করে গম ও চাল কিনছেন বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও গত দুই সপ্তাহ আগে ওই গুদাম কর্মকর্তার পছন্দের তিনটি পরিত্যক্ত রাইস মিলের সঙ্গে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ধান ছাঁটাইয়ের চুক্তি করে। যদিও সংশ্লিষ্ট দুই মিল মালিক চুক্তির ব্যাপারে কিছুই জানেন না। এই দুর্নীতির কারণে সরকারের ক্রয় অভিযান ভেস্তে যেতে বসেছে।

এসব দুর্নীতির সঙ্গে উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক ফজলুল হক একমত না হওয়ায় তাকে নানাভাবে হেনস্তার পর জরুরি ভিত্তিতে বদলি করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় উপজেলার ধান চাষি, সাধারণ মিল মালিক ও সুশীল সমাজের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে প্রথম দফায় উপজেলায় ৬৩৭ মেট্রিকটন ধানের বরাদ্দ আসে। প্রশাসন ও শাসক দলের টানাপোড়েনের কারণে বেশ বিলম্বে দুই দফায় লটারি অনুষ্ঠিত হয়। ততক্ষণে প্রকৃত কৃষকরা তাদের কষ্টার্জিত ফসল বাজারে পানির দরে বিক্রি করে দেন।

এদিকে, লটারি অনুষ্ঠানের পরপর খাদ্য গুদামকেন্দ্রিক সরকারি দলের পরিচয়ে গড়ে উঠা একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট গুদাম কর্মকর্তার যোগসাজশে নির্বাচিত কৃষকদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও কৃষিকার্ড সংগ্রহ করে তাদের স্বাক্ষর জাল করে গুদামে ধান বিক্রি করে আসছেন। অন্যদিকে, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মহিবুল হক অত্যন্ত গোপনে নিয়মবহির্ভূতভাবে ১০০ মেট্রিকটন ধান ছাঁটাইয়ের জন্য রাজা-রানা চালকলে ৩০ মেট্রিকটন, রিফাত চালকলে ৩০ মেট্রিকটন ও আজাদ চালকলের সঙ্গে ৪০ মেট্রিকটন ধান ছাঁটাইয়ের জন্য চুক্তি চুক্তির পর বরাদ্দপত্র দেন।

কিন্তু চুক্তির দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও রিফাত ও আজাদ চালকলে গিয়ে দেখা যায়, এসব মিলে বয়লার, হাউজ, চাতাল, গুদামঘর দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে ধান ছাঁটাইয়ের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। আজাদ চালকলের মালিক আবুল কালাম আজাদ হতবাক হয়ে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ধান ছাঁটাইয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি এমন খবর আপনাদের মাধ্যমে জানলাম।’ রিফাত চালকলে গিয়ে দেখা যায় মিলটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, উলিপুর খাদ্য গুদামে সক্রিয় সিন্ডিকেটটির সঙ্গে গুদাম কর্মকর্তা মনোয়ারুল ইসলাম অবৈধ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন। ছাঁটাইয়ের বিষয়টি গোপন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে ওই কর্মকর্তা ধান ছাঁটাইয়ের বরাদ্দ আদেশ পেয়ে ১০০ মেট্রিকটন ধান মিল তিনটিতে না পাঠিয়ে নির্বাচিত কৃষকদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও কৃষিকার্ড নিয়ে কাগজ-কলমে ধান ক্রয় দেখিয়ে মনোনীত ব্যক্তির সাহায্যে ডাব্লিউকিউএসসির মাধ্যমে সিন্ডিকেটের হাতে টাকা তুলে দেন। এরপর সিন্ডিকেটটি সময়মত বাজার থেকে নি¤œমানের চাল কিনে তা ধান ছাঁটাইয়ের চাল হিসেবে গুদামে জমা দিচ্ছে। প্রতিমণ ধানের সরকারি মূল্য এক হাজার ৪০ টাকার বিপরীতে বর্তমান বাজারে ২৬ কেজি চালের মূল্য ৫২০ টাকা, এতে প্রতিমণ ধানে লাভ হচ্ছে ৫২০ টাকা। ১০০ মে.টন ধান ছাঁটাই দেখিয়ে তারা মোট লাভ করছেন ১৩ লাখ টাকা।

এদিকে, মিল মালিকদের সাথে নতুন চাল কেনার চুক্তি হলেও একই পদ্ধতিতে বাজার থেকে নি¤œমানের চাল কিনে গুদামে দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডিকেট চক্র। এতে গুদাম কর্মকর্তা প্রতি কেজিতে পিসি ছাড়াও অতিরিক্ত পাঁচ টাকা পকেটে ঢোকাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

১৩১ মেট্রিক টন গম কেনার জন্য লটারির মাধ্যমে ২৬২ জন কৃষক নির্বাচিত করা হয়। গত ২৬ জুন পর্যন্ত সিন্ডিকেটের সহায়তায় কৃষকদের ভোটার আইডি/কৃষি কার্ড নিয়ে তাদের স্বাক্ষর জাল করে মাত্র ৫৪ মেট্রিকটন গম সংগ্রহ দেখানো হয়। পরে অবশিষ্ট ৭৭ মেট্রিকটন গম তিন দিনে ক্রয় দেখানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, ডিও-র মাধ্যমে সরবরাহ করা পুরাতন গম কিনে খামালের মাঝখানে রেখে চতুর্দিকে নতুন গমের বস্তা দিয়ে খামাল সাজানো হয়েছে। যার হিস্যা পাচ্ছেন অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুস সালাম মিয়া ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মহিবুল হক।

এসব ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মনোয়ারুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার এখানে কোনো অনিয়ম হয় না।’

দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুস সালাম মিয়া অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে ধান ছাঁটাইয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ মিলের তালিকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মহিবুল হকের সাথে কথা হলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আগে বললে এসব ব্যাপার খতিয়ে দেখা যেত।’

রংপুর বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রায়হানুল কবিরের সঙ্গে এসব অনিয়মের বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি দুর্নীতির বিষয়গুলো এড়িয়ে যান।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানমের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, নীতিমালা অনুযায়ী মিল পরিদর্শনের পর ছাঁটাইয়ের জন্য মিল মালিকদের সাথে চুক্তি হবে। এখানে নীতিমালার কোনো ব্যত্যয় ঘটলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :