ভারতীয় জেলেরা ঝড়ে পড়েই বাংলাদেশে এসেছে?

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০১৯, ১৭:৫১

মোহসীন-উল হাকিম

পুরো জীবনের পুঁজি আর ঝুঁকি নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায় জেলেরা। ইলিশ রক্ষা ও বংশ বিস্তারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার দুই মাসের জন্য মাছ ধরা বন্ধ রেখেছে। প্রণোদনা না পেলেও এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে আমাদের জেলেরা, মাছ ব্যবসায়ীরা। খেয়ে না খেয়ে তারা দিন কাটাচ্ছে, অপেক্ষা করছে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। নিষেধাজ্ঞা উঠলেই ২৪ জুলাই থেকে সাগর-নদীতে জাল ফেলবে তারা।

একটা অভিযোগ এই জেলেরা সব সময়ই করে থাকেন। প্রথম প্রথম সেভাবে বিশ্বাস করিনি। ভেবেছিলাম, যুক্তির খাতিরে কথাগুলো বলছিলেন তাঁরা। অভিযোগটি হলো, নিষেধাজ্ঞার সময় তারা মাছ ধরতে যেতে পারেন না ঠিকই। কিন্তু মাছ ধরা তাতে বন্ধ থাকে না। প্রতিবেশী দেশের জেলেরা এ সময় দলে দলে চলে আসে আমাদের উপকূলে।

এবছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বরং দীর্ঘ সময়ে এই অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি বার বার। বেশ কিছুদিন ধরেই উপকূলের জেলে-ব্যবসায়ীরা বলছিলেন যে আমাদের জলসীমায় ভারতের জেলেরা মাছ ধরছে অবাধে। গতকাল এক খবরে বিষয়টি নিশ্চিত হলাম।

খবরটি ছিলো, বৈরি আবহাওয়ায় বাংলাদেশের পায়রা বন্দরে এসে আশ্রয় নিয়েছে ৩২টি ভারতীয় মাছ ধরার ট্রলার। পাঁচশ’রও বেশী ভারতীয় জেলে আছে সংশ্লিষ্টদের নজরদারিতে। বলা হচ্ছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ট্রলারগুলো আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশের পায়রা বন্দর এলাকায়।

তখন থেকেই মনে একটা প্রশ্ন আসছে। বঙ্গোপসাগরে ভারত সীমান্ত থেকে এই পায়রা বন্দরের দূরত্ব সরল রেখায় দেড়শ’ কিলোমিটারের কম নয়। বৈরী আবহাওয়ায় ভারতের জলসীমায় মাছ ধরতে আসা ট্রলার বাংলাদেশের ভেতরে দেড়-দুইশ’ কিলোমিটার ভেতরে চলে আসবে? সাগরে কমবেশী চলাফেরা করার অভিজ্ঞতা থেকে কথাটি মেনে নিতে রাজি নই। বরং এই ঘটনাটি চোখে আঙ্গুল নিয়ে বুঝিয়ে দেয়, তারা বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ অংশেই মাছ ধরছিলো।

জেলেরাও এই অভিযোগটি বার বার করছে। কিন্তু কেউ তা আমলে নিচ্ছে না, নেয়নি এখন পর্যন্ত। মাঝে মাঝে সাগরে আমাদের জেলেদের ফেলানো জাল ছিঁড়ে ফেলে, উঠিয়ে ফেলে। প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা টলি জাহাজগুলো সব মৌসুমেই এদেশের জলসীমায় চলে আসে। সুন্দরবন উপকূলে চলাফেরার সময় আমি নিজেও দেখেছি সেসব মাছ ধরার বিশাল আকৃতির ট্রলার। কিন্তু উপকূলে অন্য দেশের জেলেদের মাছ ধরা কী আমরা ঠেকাতে পারি না?

যদি ঠেকাতে না পারি, তবে মাছ ধরায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা কী কাজে লাগলো? যেই ইলিশ মাছের বংশ বৃদ্ধি আর বেড়ে উঠার জন্য নিজেদের জেলেদের না খাইয়ে রেখেছি আমরা, সেই মাছ যদি অন্যরা ধরে নিয়ে যায়, তবে লাভটা কার হলো? ইলিশ কি বাঁচলো তাহলে?

আরেকটা কথা। ট্রলারগুলো সবই কিন্তু ইলিশের। আর চাঁদের হিসেবে ইলিশ জালে আসে এই সময়টিতেই।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক: সাংবাদিক