‘আবাসন খাত নিয়ে ইনস্টিটিউশন করতে হবে’

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০১৯, ১৯:৫৩ | আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯, ২০:০৬

জহির রায়হান

সুন্দর পরিবেশে জীবনযাপনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে আবাসন খাত। ঝুঁকিপূর্ণ ও জনজীবনে হুমকি এমন বিষয়গুলোর সুন্দর সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে গড়ে তুলছেন বহুতল ভবন। আবাসন খাতের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন নতুনধরা অ্যাসেটস লিমিটেডের এমডি সাদী-উজ-জামান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন  জহির রায়হান।

আবাসনশিল্পের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাই

আমাদের আবাসনশিল্পকে এগিয়ে নিতে এ সেক্টর সম্পর্কে জানতে হবে। এ সেক্টর সম্পর্কে জানানোর জন্য মানসম্পন্ন ইনস্টিটিউট করা প্রয়োজন। সেখানে যারা আবাসন ব্যবসা করবে তাদের শিক্ষা দেওয়া হবে। আবার যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রিয়েল এস্টেট নিয়ে পড়ছেন তাদেরও প্রাকটিক্যাল শিক্ষা দেওয়া হবে। গ্রাহকদেরও বোঝানো হবে তারা প্লট বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য কী বিষয়ে খেয়াল রাখবে। আবাসন সেক্টরে কাজ করতে হলে দক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে। আর গ্রাহকদেরও জানাতে হবে। 

এ খাতের উন্নতিকল্পে করণীয় কী? 
আমাদের গ্রাহকরা কিন্তু প্রতারণার কথা শুনেছে। কিন্তু এ সেক্টরের ভালো দিকগুলো তাদের কাছে তুলে ধরতে হবে। ফ্ল্যাট ও প্লট কিনতে হলে তাদের কি সম্পর্কে জানতে হবে সেটা গ্রাহকদের সেখাতে হবে। আবাসনশিল্পের মূল চ্যালেঞ্জ হলো এ শিল্পের প্রতি গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা। আর এ আস্থা ফিরিয়ে আসবে তখনই যখন এ সেক্টর সম্পর্কে গ্রাহকদের ভালোভাবে জানানো যাবে। 

আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছিÑ যেখানে গ্রাহকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আবাসন খাতে মন্দা মানে দেশের অর্থনৈতিক খাতে মন্দা। এ শল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১২ হাজার প্রতিষ্ঠান নির্ভরশীল। প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা এ খাতের মধ্যে জড়িত আছে। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, এ সেক্টরকে আরও এগিয়ে নিতে ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করুন। গবেষণায় বরাদ্দ রাখুন। 
আবাসন খাতে ক্যারিয়ার গড়তে করণীয়?
আবাসন সেক্টরে দক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে। এ সেক্টর সম্পর্কে  জ্ঞান থাকতে হবে। তা না হলে অন্যের মাধ্যমে মিসগাইড হতে হবে। দেখা যায়, কিছু প্রতিষ্ঠান আছে সেখানে যারা ভাইটাল রোল প্লে করছে তাদের এ ব্যবসার আইন-কানুন সম্পর্কে ধারণা থাকে না। অনেকাংশেই দেখা যাচ্ছে তারা রিয়েল এস্টেট বোদ্ধাদের ওপর ডিপেন্ডেড হয়ে যাচ্ছে। তারা অদৃশ্য বেড়াজালে  ঢুকে যাচ্ছে। মিস গাইডেট হয়ে যাচ্ছে। তাই বলছি ন্যূনতম হলেও বেসিক নলেজ রাখা প্রয়োজন। আর এ জন্য আবাসন শিল্প সম্পর্কে জানার জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। 
এ খাতে আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন।
আমি বাণিজ্যে স্নাতক ও এমবিএ  শেষে ২০০৪ সালে যোগ দেই এইচএসবিসি ব্যাংকে। ব্যাংকে ছয় মাস থাকার পর মনে হলো এ সেক্টরে ক্রিয়েটিভিটি দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। এরপর আমি রিয়েল এস্টেট সেক্টরে চলে আসি। আবাসন খাতের আমিন  মোহাম্মদ, বিশ্বাস বিল্ডার্স, রিজেন্ট গ্রুপ, ইউএস বাংলা গ্রুপে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি, ডিরেক্টর হিসেবে থেকেছি। ল্যান্ড প্রজেক্টে আসার কারণ হলো এটা আমার ব্যাকগ্রাউন্ড।
আমি রিয়েল এস্টেট আইন নিয়ে অনেক পড়াশোনা করেছি। বিভিন্ন কোম্পানিতে থেকে  অভিজ্ঞতা নিয়েছি। আমি দেখেছি এ সেক্টর সম্পর্কে জানার জন্য তেমন কোনো প্লাটফর্ম নেই। আমার অনেক কিছু শেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তেমন কোনো সুযোগ ছিল না। যার ফলে আমি বিভিন্ন জায়গায় কাজের মাধ্যমে শিখেছি। সবার দ্বারে দ্বারে গিয়ে শেখা সম্ভব নয়।  যেটার আমি ভুক্তভোগী হয়েছি সেটা যেন অন্য কেউ না হয়।  এর জন্য প্রফেশনাল ট্রেনিং একাডেমি প্রয়োজন। যেখানে কোর্স করে রিয়েল এস্টেট সেক্টর সম্পর্কে জানা যাবে। এর ফলে তাদের কেউ মিসগাইড করতে পারবে না।  ২০১৩ সালে মার্স ইনস্টিটিউট অব রিয়েল এস্টেট ট্রেনিং (মিরেট) প্রতিষ্ঠা করি। আমি প্রতিষ্ঠাতা সিইও। রিয়েল এস্টেট সেক্টর শুধু প্লট আর ফ্ল্যাটে শেষ না। এখানে অনেক কিছু শেখার আছে। 
আপনাদের নতুন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন
আমরা রিয়েল এস্টেট বিষয়ে ট্রেনিং দেওয়ার জন্য নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছি। এর নাম হবে রিয়েল এস্টেট একাডেমি অব ঢাকা (রিড)।  ইতিমধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এ বছরের শেষ দিকে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করব। আজকাল রিয়েল এস্টেট সেক্টরটি ধ্বংসের অন্যতম কারণ অনেকে বিজনেস সম্পর্কে কিছুই জানেন না। উদ্যোক্তারা শতভাগ পরনির্ভরশীল।  তারা এখানে এ সেক্টর সম্পর্কে জানতে পারবে। 
এখানে প্রশিক্ষণে অংশ নিতে কী যোগ্যতা লাগবে?
এ ইনস্টিটিউশনে যারা ভর্তি হবে বা যারা রিয়েল এস্টেট সেক্টরে কাজ করতে চায় তাদের মিনিমাম গ্র্যাজুয়েশন থাকতে হবে। আর যারা অন্য ব্যবসায় ছিল এখন রিয়েল এস্টেট ব্যবসার কথা চিন্তা করছে তাদের যোগ্যতা হলো তারা ব্যবসায়ী হতে হবে। রিয়েল এস্টেট একাডেমি অব ঢাকা (রিড)  এ বাংলাদেশের স্বনামধন্য রিয়েল এস্টেট বোদ্ধারা ক্লাস নিবে। তাদের কাজের অভিজ্ঞতা জানাবে। এখান থেকে সহজেই প্রাকটিক্যাল অ্যাক্সপেরিয়েন্স নেওয়া যাবে।
কী ধরনের প্রশিক্ষণ পাওয়া যাবে?
আমরা গ্রাহকদের জন্য ট্রেনিং করাতে চাই। আমাদের গ্রাহকরা কিন্তু প্রতারণা আর প্রতারণাই শুনেছে। গ্রাহকরা কি প্রশ্ন করে প্লট বা ফ্ল্যাট কিনতে হবে সেটা জানে না। গ্রাহকদের ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) সম্পর্কে বুঝে প্রশ্ন করতে হবে। রাজউকের প্লান পাস সম্পর্কে জানতে হবে। তারা অনেকটাই এ সম্পর্কে জানে না। আমি চাই গ্রাহকরা প্রশ্ন করা শিখুক। যত বেশি গ্রাহকদের এ সেক্টর সম্পর্কে জানাতে পারব তত বেশি তাদের আবাসন সম্পর্কে ভালো ধারণা জন্মাবে। 
এ বিষয়ে সরকারের কাছে কী চাওয়া
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমাদের অনুরোধ আবাসন সেক্টরের উন্নয়নে যেন গবেষণার টাকা বরাদ্দ থাকে। প্রয়োজনে পিপিপির আওতায় এ গবেষণা করা যায়। যেখানে উঠে আসবে আবাসন খাতের সমস্যা, সম্ভাবনা। গ্রাহকদের চাহিদা কী। যুগোপযোগী ও পরিবেশবান্ধব আবাসন গড়ে তোলার বিষয় থাকবে।

নতুনধরা আবাসন প্রকল্পের সুবিধা সম্পর্কে বলেন
ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের সঙ্গে আমাদের ‘নতুনধরা’ প্রকল্প। চার লেনবিশিষ্ট রাস্তা। সেখানে উন্নয়নের অবিশ্বাস্য কর্মযজ্ঞ চলছে। সবচেয়ে বড় উদাহরণ পদ্মা সেতু। সরকারের এমন উদ্যোগের পাশে নতুনধরা নতুন মাত্রা যোগ করবে। যাবতীয় নাগরিক সুবিধা থাকবে আমাদের প্রকল্পে। নতুনধরার প্রতিটি প্লট প্রিমিয়াম প্লট। সঙ্গে দুটি রোড থাকলে সেটা কর্নার প্লট হয়, যে প্লট লোভনীয়। আর এটা কর্নারের চেয়ে আরও  আকর্ষণীয়। সামনে ৩০ ফিট ও দুই পাশে থাকবে ৯ ফিটের রাস্তা। প্রতিটি প্লটই তিনটি রোডের সংযোগ রয়েছে। এতে আমাদের জায়গা বেশি প্রয়োজন হয়েছে। তারপরও আমরা গ্রাহকের সুবিধায় স্বতন্ত্র আইডিয়া নিয়ে এসেছি।
গ্রাহকের আস্থা অর্জন করে সুন্দর আগামীর দিকে এগিয়ে যাওয়াই নতুনধরা অ্যাসেটস লিমিটেডের  লক্ষ্য। আমরা গ্রাহকদের কাছে দায়বদ্ধ। তাই আমাদের স্লোগান ‘মিথ্যা ও প্রতারণার নেই আর কোনো ভয়, নতুন পৃথিবীতে এবার হবেই স্বপ্নজয়।’