নিবন্ধিত রিকশা ৭৯ হাজার, ১০ লাখের বেশি অবৈধ

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০১৯, ২১:১৫

কাজী রফিক
ঢাকাটাইমস
ঢাকাকে বলা হয় রিকশার নগরী। সোমবার থেকে রাজধানীর প্রধান তিনটি সড়কে রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। আর এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে মালিক-চালকেরা। ঢাকার দুই সিটিতে কি পরিমাণ রিকশা চলে তার সঠিক কোনও পরিসংখ্যানও নেই। যদিও বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ঢাকায় ১১ লাখের বেশি রিকশা রয়েছে। আর এর মধ্যে মাত্র ৭৯ হাজার রিকশা সিটি কর্পোরেশনে নিবন্ধিত। ১৯৮৬ সালের পর থেকে ঢাকায় রিকশার নিবন্ধন বন্ধ। তবে প্রতিদিনই অবৈধভাবে নতুন রিকশা নামছে রাস্তায়। আর এসব রিকশা নিয়ে গড়ে উঠেছে  রিকশার চালক ও মালিকদের নিয়ে রাজধানীতে গড়ে উঠেছে অন্তত ২৮টি সংগঠন। এসব সংগঠনই নিজেদের মনগড়া ‘লাইসেন্স’ দিয়ে রিকশা নামায় সড়কে।
 
কার্যকর গণপবিহন গড়ে না ওঠায় রাজধানীতে যাতায়াতের অন্যতম বাহন রিকশা। ১৯৮৬ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ রিকশা-ভ্যানের নিবন্ধন দেয়া হয়। তারপর থেকে রাজধানীতে কাগজে-কলমে আর কোনো নতুন রিকশার লাইসেন্স বা অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে, তাদের কাছে নিবন্ধিত রিকশার সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। আর দক্ষিণ সিটিতে সেই সংখ্যা প্রায় ৫২ হাজার। দুই সিটি মিলিয়ে বৈধ রিকশার সংখ্যা ৭৯ হাজার ৫৪৭টি। তবে রাস্তায় চলাচলকারী রিকশার সংখ্যা ১১ লাখের বেশি। অর্থাৎ প্রায় ১০ লাখ অবৈধ রিকশা চলছে রাজধানীতে।
 
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীতে বৈধ রিকশার সংখ্যা সাড়ে ৭৯ হাজার। আর অবৈধ রিকশার সংখ্যা ১০ লাখ। আর এই অবৈধ রিকশা বানিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে ঢাকা বিভাগ রিকশা ও ভ্যান মালিক সমিতি, বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশন, মহানগর রিকশা মালিক লীগ, রিকশা ও ভ্যান মালিক শ্রমিক লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশন, জাতীয় রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগ ও বাংলাদেশ রিকশা মালিক লীগ, রিকশায় এবং শ্রমিক-মালিক লীগ, ঢাকা সিটি মুক্তিযোদ্ধা রিকশা-ভ্যান মালিক কল্যাণ সোসাইটি সহ ২৮ টি সংগঠন।
 
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি শহরের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকার কথা। তবে ঢাকার আয়তনের তুলনায় রাস্তার পরিমাণ মাত্র ৭ শতাংশ। আবার ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মেট্রোরেল নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নের কাজের জন্য প্রায়ই ব্যবহার করা সম্ভব হয় না সড়কের অনেক জায়গা। একদিকে রাস্তার পরিমাণ কম, আরেক দিকে তড়তড় করে বেড়ে চলেছে অবৈধ রিকশার পরিমাণ। আর নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রাস্তায় নামা এসব রিকশা সড়কের বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে।
 
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার পশ্চিমে সাতমসজিদ হাউজিং, চাঁদ উদ্যান, নবীনগর, ঢাকা উদ্যান এলাকায় রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক রিকশার গ্যারেজ। প্রতিটি গ্যারেজে রিকশার সংখ্যা কমপক্ষে ২০ থেকে ৫০টি। গাবতলি থেকে সদরঘাট বাবুবাজার পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সড়কের উভয় পার্শে রয়েছে অগণিত রিকশার গ্যারেজ। এরমধ্যে কেবল স্লুইজগেট সুনিবিড় হাউজিং, আদাবর-১০ নম্বর ও আদাবর-১৬ নম্বর এলাকার রিকশার গ্যারেজ আছে প্রায় শতাধিক। এখানে রিকশার পরিমান হাজারের বেশি।
 
অন্যদিকে ভাটারা, রামপুরা, বনশ্রী, মুগদা, বাসাবো, উত্তরখান, দক্ষিণখান, কুড়িল, মিরপুর, গাবতলি এলাকায় রয়েছে অসংখ্য রিকশার গ্যারেজ। এসব গ্যারেজের রিকশা মিস্ত্রিরা পুরনো রিকশা মেরামতের পাশাপাশি প্রতিদিনই তৈরি করছেন নতুন নতুন রিকশা। আর ভূঁইফোড় সংগঠন থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে দেয়া হয় এসব রিকশার নিবন্ধন। যদিও এসব গ্যারেজের প্রতিটিতে রিকশার লাইসেন্সের সংখ্যা এক থেকে দুইটি করে। আর প্রতিটি লাইসেন্সের বিপরীতে রিকশা চলছে ১০ থেকে ২০টি পর্যন্ত।
 
বাংলাদেশ রিকশা ভ্যান মালিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আর এ জামান ঢাকা টাইমসকে জানান, নিবন্ধিত রিকশার তুলনায় রাজধানীতে অনিবন্ধিত রিকশার পরিমাণ অনেক বেশি। অবৈধ রিকশা বন্ধে বারবার সিটি করপোরেশনের কড়া নেড়েও সিটি করপোরেশণের কোনো উদ্যোগ তাদের চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ করেন এই রিকশা মালিক সমিতির নেতা।
 
তিনি বলেন, ‘আমরা অবৈধ রিকশা বন্ধের জন্য সিটি করপোরেশনে অনেক বার বলেছি। কিন্তু তারা অবৈধ রিকশা বন্ধ করতে তারা কোনো উদ্যোগই নেয় না। তারা এই রিকশাগুলো রাইখা কি পায় আমরা জানি না। অবৈধ রিকশা বন্ধ হইলে এখন যে বিষয় নিয়া আন্দোলন তা হইত না। বৈধ রিকশা সব চললেও মেইন রাস্তায় রিকশা খুইজাও পাবেন না।’
 
ঢাকাটাইমস/০৯জুলাই/ডিএম