কাদের সিদ্দিকীর চলে যাওয়ায় ‘সমস্যা দেখছেন না’ ফখরুল

প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০১৯, ২২:৩২ | আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৯, ২২:৩৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর চলে যাওয়ায় তেমন কোনো সমস্যা দেখছেন না বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘দু-একটা লোক বেরিয়ে যাচ্ছে, আসছে। বরাবরই এমনটা হয়, এটা হবেই।'

বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে মশিউর রহমান যাদু মিয়ার ৯৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনায় তিনি একথা বলেন। সভার আয়োজন করে মশিউর রহমান যাদু মিয়া স্মৃতি জাতীয় কমিটি।

ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ মানুষকে হতাশ হতে দেবেন না, হতাশার কথা বলবেন না। নিশ্চয়ই দেশনেত্রীকে আমরা মুক্তি করতে পারবো। দেশনেত্রী মুক্ত হলেই গণতন্ত্র মুক্তি পাবে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরামর্শ না করে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তার সঙ্গে পরামর্শ করে। আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি তার পরামর্শ নিয়ে, নির্বাচনও করেছি তারই পরামর্শ নিয়ে। আমি এখনো মনে করি, দেশে সত্যিকার অর্থে যদি কোনো নেতা থাকেন যিনি বোঝেন জনগণকে- তিনি হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। সত্যিকার অর্থে তিনি জনগণের নেত্রী। তাকে আটকে রেখেছে কেন? ঠিক সেই সময়ে যখন নির্বাচন এসে যাচ্ছে। তাকে আটকে রেখেছে, তিনি বাইরে থাকলে বানের স্রোতের মতো সবকিছু ভেসে যাবে।’

‘আজকেও তাকে বের করছে না এজন্য যে, তিনি যদি মুক্ত হন তাহলে তাদের (ক্ষমতাসীন) অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। যেখানে জামিন পাওয়াটা তার আইনগত প্রাপ্য, উনি জামিন পেতে পারেন। সেই জামিনটা তারা দিচ্ছে না। অর্থাৎ তারা জানে এই নেত্রী যদি বেরিয়ে আসে তাহলে তাদের কঠিন হবে এ অবৈধ ক্ষমতায় টিকে থাকা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পৃথিবীটা বদলে গেছে, আপনি চিন্তা করেন যে, ভারতে মহাত্মা গান্ধীকে যারা হত্যা করেছিল তারা এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত। ভাবুন পরিবর্তনটা কোথায়? এটাই বাস্তবতা। সেই পরিবর্তনটা অনুধাবন করতে হবে, বুঝতে হবে এবং সেখান গিয়ে আমাদের পথ বের করতে হবে-কোন পথে গেলে আমি সঠিকভাবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।’

‘খুব কঠিন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা, এটা অটোক্রেট সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা, সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করা-এটা সহজ কথা নয়। আমরা চেষ্টা করেছি নির্বাচনের আগে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে এই দানবকে পরাজিত করি। আমরা পারিনি। তার মানে এই না যে, আমরা শেষ হয়ে গেছি, আমরা মুখ থুবড়ে পড়ে গেছি, আমাদের জনগণের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস হয়ে গেছে। কখনোই না। বিষয়গুলো চিহ্নিত করে আমরা যদি একত্রিত হতে পারি, ঐক্যবদ্ধ হতে পারি তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সামনে এগুতে পারব।’

প্রয়াত নেতা মশিউর রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘যাদু মিয়া বাস্তবতা বুঝে কাজ করেছেন। আমরাও সেভাবে কাজ করতে চাই। অনেক এখানে বলেছে, জনগণের বিজয় দেখতে চাই। আমরাও চাই। কিন্তু ধৈর্য ধরতে হবে। কখনোই নিজেকে পরাজিত মনে করলে চলবে না। আমি অনেকের চেহারায় পরাজিতের ছবি দেখতে পাই। আমাকে এটা আহত করে।’

‘আমি কখনোই পরাজিত হতে চাই না। আমরা বিশ্বাস করি, এদেশের মানুষ কখনোই নিজেদের স্বার্থ, নিজের অধিকার সেটা কখনো তারা অন্যকে কেড়ে নিতে দেয়নি। সময় লেগেছে, লড়াই করে সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, যাদু মিয়ার দেখানো যে পথ, সেই পথে আমরা যদি সত্যিকার অর্থে এগুতে পারি, আমরা যদি মওলানা ভাসানীর আদর্শ আদর্শ নিয়ে যদি এগুতে পারি, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ নিয়ে এগুতে পারি, আর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে ত্যাগ, সেই ত্যাগকে নিযে এগুতে পারি অবশ্যই আমরা সফল হবো। দেশনেত্রীকে আমরা মুক্ত করতে পারবো, এদেশের মানুষকে আমরা মুক্ত করতে পারবো।’

মশিউর রহমান যাদু মিয়া স্মৃতি জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শামসুল হকের সভাপতিত্বে ও আরিফুল হোসেন আরিফের পরিচালনায় আলোচনা সভায় গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, সাবেক ছাত্রনেতা কাশেম চৌধুরী, এনামুল হক শহীদ, আখতার হোসেন, নুরুল হুদা নিলু চৌধুরী, গোলাম মোস্তফা আকন, ওসমান গনি ও মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে রিটা রহমান প্রমূখ বক্তব্য দেন।

(ঢাকাটাইমস/১৯জুলাই/বিইউ/জেবি)