বদলে যাবে ২৮ উপজেলার কৃষির চিত্র

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০১৯, ০৮:৩২ | আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৯, ১৭:৫৭

জহির রায়হান, ঢাকাটাইমস

বৃহত্তর ফরিদপুর সেচ এলাকা উন্নয়নে সরকার ২০০ কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করবে সরকার। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটির অনুমোদন মিলেছে। এটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকার পাঁচ জেলার ২৮টি উপজেলায় অতিরিক্ত প্রায় ৯১ হাজার ৩০৫ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভব হবে।

আর ভূ-উপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ হবে ২০ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া কৃষকদের আধুনিক সেচ প্রযুক্তি বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে ‘বৃহত্তর ফরিদপুর সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প (৪র্থ পর্যায়)’ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকা বিভাগের পাঁচটি জেলার ২৮টি উপজেলায় অতিরিক্ত প্রায় ৯১ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য শস্য উৎপাদন সম্ভব হবে।

উপজেলাগুলো হলো- ফরিদপুরের সদর উপজেলা, বোয়ালমারি, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা, চরভদ্রাসন, সদরপুর, নগরকান্দা, সালতা, ভাংগা। গোপালগঞ্জ জেলার গোপালগঞ্জ সদর, মুকসুদপুর, কাশিয়ানী, টুঙ্গীপাড়া ও কোটালীপাড়া। রাজবাড়ী জেলার রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ, পাংশা, বালিয়াকান্দি। মাদারীপুর জেলার মাদারীপুর সদর, রাজৈর, কালকিনি, শিবচর। শরীয়তপুরের শরীয়তপুর সদর, নড়িয়া, জাজিরা, ডামুড্যা, ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরঘাট উপজেলা।

এসব উপজেলার কৃষকদের আধুনিক সেচ প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। এর ফলে তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আতœকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে গভীর নলকূপ স্থাপন, ভূ-গর্ভস্থ সেচ নালা নির্মাণ। খাল, নালা খনন ও পুনঃখননসহ অন্যান্য সেচ অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা যায়, খাল, নালা পুনঃখনন, লো-লিফট (এনএনপি) স্থাপন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেচ অবকাঠামো নির্মাণ করা। এর মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় ২০,২৯০ হেক্টর জমিতে ভূ-উপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ ও জলাবদ্ধতা দূর করা। এতে প্রতিবছর অতিরিক্ত প্রায় ৯১ হাজার ৩০৫ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে।

প্রকল্প গ্রহণের যৌক্তিকতা

প্রকল্প এলাকার মধ্য দিয়ে অনেক নদী, শাখা- নদী প্রবাহিত হয়েছে। এখানে ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস রয়েছে। তাছাড়া প্রকল্প এলাকায় অসংখ্য খাল-নালা রয়েছে এবং খালসমূহ প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুস্ক মৌসুমে পানি থাকে না। নদী-খাল-নালাসমৃদ্ধ এ জেলাসমূহে ভূ-উপরিসস্থ পানির উৎস থাকা সত্ত্বেও পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে সেচ কাজে ব্যবহার কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছেনি। যার ফলে আবাদযোগ্য অনেক জমি পতিত রয়ে যায়।

প্রকল্প এলাকায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ৫ দশমিক ০৩ লক্ষ হেক্টর। তার মধ্যে প্রায় ২ দশমিক ৪১ লাখ হেক্টর সেচকৃত জমি রয়েছে এবং প্রায় ২.৬২ লাখ হেক্টর জমি সেচ বহির্ভূত হিসেবে রয়েছে। খাল- নালা পুনঃখনন ও প্রয়োজনীয় সেচ অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে সেচ বহির্ভূত জমির মধ্য থেকে ২০,২৯০ হেক্টর জমিতে ভূ-উপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ প্রকল্প এলাকায় ইতোপূর্বে বাস্তবায়িত ৩টি প্রকল্পের কার্যক্রম ধারাবাহিকতা বজায় রাখার লক্ষ্যে এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রম

খাল-নালা পুনঃখনন ৩৫০ কিলোমিটার। পানি সংরক্ষণ অবকাঠামো নির্মাণ-৫১০টি (রেগুলেটর/ক্রস ড্যাম/ সারমার্জড ওয়্যার ক্যাটল ক্রসিং/কালভার্ট ইত্যাদি); বিদ্যুৎচালিত লো-লিফট পাম্প (এলএলপি) স্থাপন-১৭৮টি। সৌরশক্তি চালিত এলএলপি স্থাপন-২০টি। ভূ-ভর্ভস্থ সেচ নালা নির্মাণ-১৯৮টি। পুরাতন গভীর নলকূপের জন্য ভূ-গর্ভস্থ সেচ নালা নির্মাণ-১১০টি; বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ-১৮৮টি। ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রকল্প এরাকা নির্বাচন করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন মতামত দিয়েছে, ভূ-উপরিস্থ পানিনির্ভর সেচ সুবিধা সম্প্রসারণে লাক্ষ্যে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ ছাড়াও সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলকায় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, যা খাদ্যে স্বয়ংসমস্পূর্ণতা অর্জন ধরে রাখাসহ দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

খালের পারে লাগানো হবে গাছ

সূত্র জানায়, প্রকল্পের বরাদ্দকৃত মোট ২০০ কোটি ৫৯ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার মধ্যে খাল পুনঃখনন বাবদ ৪৯ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। খাল পুনঃখনন করে খালের পাড় বাঁধাই, টারফিং, লেভেলিং ও ড্রেসিং ব্যয় হবে। খালের পাড়ে বৃক্ষ রোপন করা হবে। এক্ষেত্রে ঠিকাদারকে অন্তত এক বছর বৃক্ষসমূহ পরিচর্যার বিষয়টি নিশ্চিত করা কথা বলা হয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এম মান্নান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রকল্পটি যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় সে ব্যপারে আমরা মনিটরিং করবো। সরকার ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছে। কৃষকরা আধুনিক সেচ সুবধার আওতায় আসে সে ব্যপারে সরকার কাজ করছে। সরকার কৃষকদের অধুনিক সেচ প্রযুক্তি সম্পর্কেও প্রশিক্ষণ দিবে।’

ফরিদপুর জেলা পরিষদ সদস্য শেখ শহীদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এটা খুবই ভাল উদ্যোগ। এ উদ্যোগে কৃষিকাজের জন্য ও ওই এলাকার মানুষের পানির সংকট দূর করবে। সুযোগ বাড়বে ভূ-উপরস্থ পানি ব্যবহারের। একাজে সর্বাত্বক সহোযোগিতা থাকবে আমাদের।’

‘চন্দনিয়া বাড়াশিয়াখাল বোয়ালমারির মধ্য দিয়ে আলফাডাঙ্গা হয়ে কাশিয়ানির দিয়ে ভাটিয়াপারা হয়ে মধুমতির সঙ্গে মিসেছে এ খালে নাব্য নেই। এমন অনেক খাল রয়েছে যেগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে খালগুলো সচল হবে। তবে প্রস্থাবিত ডিজাইন অনুসারে যেন খাল খনন হয়  সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিধিনিদের ও জনগনকে কাজে সম্পৃক্ত করলেও সুফল পাওয়া যাবে।’

ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/ডিএম