ছাত্রদল নিয়ে বেকায়দায় বিএনপি

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০১৯, ১০:২৭

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

ঢেলে সাজাতে গিয়ে ছাত্রদল নিয়ে বেকায়দায় বিএনপি। নানা চেষ্টা করেও ‘বিদ্রোহী’ অংশকে বাগে আনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে নেতাদের।

দল ও অঙ্গ সংগঠন পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন কমিটি করছে বিএনপি। কয়েকটি অঙ্গ সংগঠনে মোটামুটি নির্বিঘেœ নতুন কমিটি দিয়েছে দলটি। তবে গোল বাঁধিয়েছে ছাত্র বিষয়ক সহযোগী সংগঠনটি।

কাউন্সিল করে কমিটি করতে গিয়ে এই ঝামেলার শুরু। শুরুতে হার্ডলাইনে থাকলেও এখন কিছুটা নমনীয় হয়ে নিজেদের দাবিদাওয়া কমিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। তারা বলছেন, সম্মেলনের নিয়মকানুন ঠিক রেখেই নতুন কমিটি হোক। তবে তার আগে সাংগঠনিক ক্ষমতা সম্পন্ন আহ্বায়ক কমিটি করা। অন্তত দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে পরিচয় দেয়ার মত সুযোগ পাওয়া যায়। অন্যথায় আবারো মাঠে নামার ইঙ্গিত দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।

অন্যদিকে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কেউ কেউ এ নিয়ে কিছুটা ইতিবাচক চিন্তা করলেও দলের অনেকেই এর বিরোধিতা করছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দাবির মুখে দলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলে তা বাজে উদাহরণ সৃষ্টি করবে।

ছাত্রলীগের মতো ছাত্রদলেও নেতৃত্বে আসার বয়সসীমা বেঁধে দিতে গিয়েই বাঁধে গোল। ২০০০ সালের আগে যারা এসএসসি পাস করেছে, তারা কেউ নেতা হতে পারবে না- এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। কিন্তু ‘বুড়ো’রা মানতে নারাজ। বিরোধিতার মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে সম্মেলন করে করে নতুন কমিটি করার বিরোধিতাও করছে তারা।

নতুন নিয়ম প্রত্যাহার করে আগের মতো কমিটি করার দাবিতে দফায় দফায় কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠনটির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। ভাঙচুর হয়েছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটেছে। এতেও কোনো কূলকিনারা করতে না পেরে স্থায়ী কমিটির দুই প্রভাবশালী নেতাকে বিক্ষুব্ধদের থামাতে দায়িত্ব দেয়া হয়।

সব পক্ষেরই প্রত্যাশা ছিল তারা সমাধানে আসতে পারবেন। কিন্তু আন্দোলন সাময়িক বিরতি দিলেও এখনো কমিটি নিয়ে জটিলতার কোনো নিরসন করতে পারেননি বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এসব কারণে ঘোষিত সম্মেলন নির্ধারিত সময় করার সুযোগও হারিয়েছে ছাত্রদল। ১৫ জুলাই হওয়ার কথা ছিল নেতৃত্ব নির্বাচনের এই সম্মেলন।

ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বারবার দায়িত্বপ্রাপ্ত এই দুই নেতার সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করলেও তারা ধৈর্য ধরার জন্য বলছেন। সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু এখনো কোনো জায়গায় পৌঁছতে পারছেন না।

অন্যদিকে স্থায়ী কমিটির এই দুই সদস্যসহ নতুন কমিটির জন্য গঠিত সার্চ কমিটির নেতারা বলছেন, শিগগিরই তারা কমিটি নিয়ে সমস্যার সমাধানে পৌঁছতে পারবেন।

গত ৩ জুন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ বিলুপ্ত করে বিএনপি নতুন কমিটি গঠনের একটি প্রক্রিয়া ঘোষণা করে। বলা হয়, ২০০০ সালে এসএসসি কিংবা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে পারবেন। এর প্রতিবাদে ভেঙে দেওয়া ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের নেতারা বিক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন শুরু করেন।

একই সঙ্গে বয়সসীমা নির্ধারণ না করে গতানুগতিকভাবে কমিটি করার দাবিতে গত ১০ জুন থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালন করে। তাদের দাবিকে পাত্তা না দিয়ে ১২ নেতাকে বহিষ্কার করে ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের জন্য কাউন্সিলের তফসিল ঘোষণা করে বিএনপি। এরপর বিক্ষুব্ধরা কাউন্সিল স্থগিত করে পুনঃতফসিলের দাবি জানিয়ে কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় এবং প্রার্থীদের মধ্যে ফরম বিতরণে বাধা সৃষ্টি করে। এর এক পর্যায়ে তফসিল স্থগিত করা হয়।

পরে মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর রায়কে সংকট সমাধানে দায়িত্ব দিলে তারা বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে তারেক রহমানসহ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করবেন। অন্য অঙ্গ সংগঠনে যুক্ত করারও প্রতিশ্রুতি দেন। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপে কথাও বলেন।

সবশেষ আন্দোলনকারীরা কাউন্সিলের তারিখ পিছিয়ে দিয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি দেওয়ার দাবি করেন। দাবি মেনে নেয়া হবে, এই ভাবনায় ৩ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ভাঙচুরের ঘটনায় নিজেরা জড়িত না থাকলেও এজন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

এরপর এক সপ্তাহ পার হলেও এখনো কোনো আশার আলো দেখছেন না ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতারা। তবে শিগগিরই এসব নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।

আন্দোলনে থাকা নেতাদের মধ্যেও নতুন করে দাবি নিয়ে মাঠে নামা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার একটি কলেজের সাধারণ সম্পাদক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দুঃখ প্রকাশ করার পর আমরা আবার কী করে মাঠে নামব? এটা হলো দলের (বিএনপি) একটি চালাকি ছিল। আর দলের বর্তমান প্রধান একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেখান থেকে সরে আসাও দলের জন্য ইমেজের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই নতুন করে আশা দেখার কিছু নেই। যেভাবে আছে সেইভাবে চলবে। তবে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হবে এটা সিউর।’

অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি। আশা করি একটা সমাধানে পৌঁছাতে পারব। ওদের দাবি দাওয়া শুনছি। এ নিয়ে কাজ চলছে। ভালো করে জানতে পারবেন।’

মঙ্গলবার বিকালে মির্জা আব্বাসের শাজাহানপুরের বাসায় বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই দুই সদস্য। এসময় তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে চলমান সংকটের সমাধান হবে বলে বিক্ষুব্ধ নেতাদের আশ্বাস দেন।

বৈঠকে ছাত্রনেতারা তাদের দাবিতে অনড় এই কথা বলে দিয়েছেন। বিএনপির দুই নেতা শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলেছেন।

বৈঠকের বিষয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতাদের অন্যতম এজমল হোসেন পাইলট ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। ধৈর্য ধারণ করার জন্য বলা হয়েছে। তবে আমরা আমাদের অবস্থানে স্থির আছি। সংগঠিত আছি। এখনো আশা করছি, যৌক্তিক দাবি মানবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত এ বিষয়ে সমাধান দেবেন।’

‘কাউন্সিলে যেসব শর্ত দেয়া আছে তা মেনেই সাংগঠনিক ক্ষমতা সম্পন্ন আহ্বায়ক কমিটি দেয়ার কথা বলেছি। আশা করি সেই সিদ্ধান্ত দল মেনে নেবে। এখনো এর বিকল্প ভাবছি না। তবে যদি পটিজিভ কিছু না হয় তাহলে নতুন করে পরিকল্পনা করা হবে।’

ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/বিইউ/এমআর