আগে বাংলাদেশের স্বার্থ দেখুন

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০১৯, ২১:৪৫

শরিফুল হাসান

সবার আগে বাংলাদেশের স্বার্থ দেখেন, দেখবেন তাহলে কোথাও কোনো সমস্যা নেই।

হ্যাঁ, এই বাংলাদেশের বহু মানুষ বহুদিন ধরে ভারতবিরোধী মানসিকতা ধারণ করে আছেন, এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু ভারতবিরোধী ছিল না, কিংবা আজও ভারতবিরোধী নয়, এমন বহু মানুষ গত কয়েক বছরে হঠাৎ করে কেন ক্রিকেটে ভারতবিরোধী হয়ে উঠলো? যদি আমার কথা বলি? কেন আমি বা আমার মতো এতো লোকজন ক্রিকেটে ভারত হারলে আনন্দিত হচ্ছে?

উত্তর দিচ্ছি। তবে আগে একটা কথা বলে নেই, ক্রিকেটে এই ভারতবিরোধিতাকে দয়া করে পাকিস্তানপ্রীতি ভেবে ভুল করবেন না। পাকিস্তান চিরকালই বর্বর পাকিস্তান। বাংলাদেশের যেসব লোক পাকিস্তান সমর্থন করে তাদের দেশপ্রেম বা মানসিক সুস্থতা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। কিন্তু যেটা বলছিলাম, কেন সৌরভ-শচীনভক্ত একদল মানুষ ক্রিকেটে ভারতবিরোধী হয়ে উঠলো?

কারণ একটাই ভারত। ক্রিকেটে তারা দিনের পর দিন বাংলাদেশের সাথে যে আচরণ করছে তাতে বাংলাদেশি হিসেবে ক্ষোভ না জমাটাই অস্বাভাবিক। আমি মনে করি ক্রিকেটে ভারতের প্রতিপক্ষ এখন যতোটা না পাকিস্তান তার চেয়ে বেশি বাংলাদেশ। অন্তত তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ তাই বলে। যতোদিন তারা এই মনোভব না বদলাবে আরও ক্ষোভ বাড়বে।

এবার আারেকটা প্রসঙ্গ বলি। ক্রিকেটে ভারত হেরেছে, আর এই সুযোগে আপনি ভারতকে নিয়ে যা তা গালিগালাজ করবেন, সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করবেন; সেটাও কিন্তু অসুস্থতা।

আবার ভারত হারায় আনন্দ করার কারণে ভারতের ভিসা দেয়া বন্ধ করা উচিত, এমন কথা যারা বলছের, তাদের বলবো ভারত আমাদের দয়া করে ভিসা দেয় না। বরং এখানে তার চিকিৎসা-বাণিজ্য আছে, আছে পর্যটন-বাণিজ্য। ভারতে যে দেশের পর্যটকরা সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করে, সেটা ইউরোপ-আমেরিকা না, বরং বাংলাদেশ। কাজেই ভারতপ্রীতির নামে আপনারা যারা বাংলাদেশিদের সমালোচনা করছেন তাদের বলবো, একটু চুপ করুন।

এবার যে লাইন দিয়ে শুরু করেছিলাম সেখানে যাই। আপনার-আমার দেশ বাংলাদেশ। কাজেই ভারত বা পাকিস্তান বা কারও পক্ষে কথা না বলে বাংলাদেশের স্বার্থটাই সবার আগে দেখেন। কারও দালালি করলে বাংলাদেশর করেন। অন্তত এই একটা ব্যাপারে ভারতের কাছ থেকে শিখতে পারেন। শত কোটি ভারতীয়র মধ্যে একজনও পাবেন না, যে ভারত ছেড়ে বাংলাদেশের স্বার্থে কথা বলবে।

ভেবে দেখেন, ভারতে এতো রাজ্য, এতো ভাষা কিন্তু দেখবেন দেশের প্রশ্নে সবাই এক। এর নামই দেশপ্রেম। ভারতীয়রা নিজেদের গাড়ি ব্যবহার করবে, নিজেদের দেশকে সব থেকে প্রাধান্য দেবে। কথায় কথায় বলবে ভারতমাতা। আর আমরা? ভারতের কাপড় না হলে চলে না, বিদেশি গাড়ি না হলে চলে না। আমাদের সরকারি বেসরকারি অফিসে সব বিদেশি গাড়ি। আর ভারতে? দেখে আসেন, নিজেদের জিনিষ ছাড়া তারা ব্যবহার করে না। দেশপ্রেমের প্রশ্নে এভাবে বহু কিছু শেখার আছে ভারতের কাছ থেকে।

আমি এখনো মনে করি আমরা সবসময় যদি শুধু বাংলাদেশকে ভাবতে পারতাম, সব স্বার্থ ভুলে দেশের প্রশ্নে অন্তত এক হতে পারতাম তাহলে বহু সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। কেটে যেতে বহু বিভক্তি। তাই আমার একটাই আহবান, চলুন সব ভুলে একটাই শব্দ জপি, বাংলাদেশ।

লেখক: উন্নয়নকর্মী, কলাম লেখক।