ভেঙে পড়েছে পশ্চিম রেলের সিডিউল

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০১৯, ১৫:২৭

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
চারঘাটায় তেলবাহী ট্রেনের আটটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় রাজশাহীর সঙ্গে ২৯ ঘণ্টা ঢাকার যোগাযোগ বন্ধ থাকে।

রাজশাহীতে তেলবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে প্রায় ২৮ ঘণ্টা রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সিডিউল ভেঙে পড়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও শুক্রবার পর্যন্ত সিডিউল বিপর্যয় কাটেনি। বিভিন্ন রুটের ট্রেনগুলো রাজশাহীতে এসেছে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে।

একইভাবে রাজশাহী থেকেও নির্ধারিত সময়ে বিভিন্ন রুটের ট্রেনগুলো ছেড়ে যেতে পারেনি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। তবে এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্ঘটনার কারণেই ট্রেন যাত্রায় এমন বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে। দ্রুতই ট্রেনের সিডিউল ঠিক হয়ে যাবে।

গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার হলিদাগাছি দীঘলকান্দি এলাকায় তেলবাহী ট্রেনের আটটি ট্যাংকার ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়। পরে রাত ১০টার দিকে ঈশ^রদী থেকে রিলিফ ট্রেন গেলে উদ্ধার কাজ শুরু হয়। এর ২৫ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে আটটি বগি লাইনে তোলা সম্ভব হয়।

এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী থেকে ‘পদ্মা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। অথচ এই ট্রেনটির রাজশাহী ছাড়ার কথা ছিল বিকাল ৪টায়। পদ্মা এক্সপ্রেস ছাড়ার পর ভোররাত ৪টার দিকে ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ ঢাকার উদ্দেশ্যে রাজশাহী ছাড়ে। অথচ এই ট্রেনটির যাত্রার সময় রাত ১১টা ২০ মিনিটে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ধূমকেতু এক্সপ্রেস ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে।

একইভাবে শুক্রবার ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ট্রেনও সময় মতো ছাড়তে পারেনি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাজিদুজ্জামান নয়ন নামে এক ব্যক্তি। তিনি লেখেন, ঢাকা-রাজশাহী রাত ১১টার পদ্মা ট্রেন ছাড়লো দিন ১০টার দিকে। পৌঁছাতে আরও প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় লাগবে। বাড়ি আর যাব কী? এদিকেই সময় গেল দেড় দিনের মতো। কি আর করার? সবই কপাল।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন রুটে রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোরও অনেক দেরি হয়েছে। গোয়ালন্দগামী সকাল ৭টার আন্তঃনগর মধুমতি এক্সপ্রেস, ৬টা ২০ মিনিটের চিলাহাটিগামী আন্তঃনগর তিতুমীর এক্সপ্রেস, ভোর ৬টা ৪০ মিনিটের খুলনাগামী আন্তঃনগর সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ট্রেনের প্রতিটি ছেড়ে গেছে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পর। ঢাকাগামী সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের আন্তঃনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস শুক্রবার বেলা আড়াইটাতেও স্টেশনে ছিল। সিডিউল বিপর্যয়ের মধ্যে রাজশাহী থেকে বেলা ৩টার নীলফামারিগামী বরেন্দ্র এক্সপ্রেসও সময় মতো স্টেশন ছাড়তে পারেনি।

এদিকে পশ্চিম রেলের বিভিন্ন রুটের মেইল ট্রেনগুলোরও সিডিউল ভেঙে পড়েছে। রাজশাহী থেকে পার্বতীপুরগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেন দুপুর সাড়ে ১২টায় ছাড়ার কথা থাকলেও আড়াইটা পর্যন্ত ছাড়তে পারেনি। সকাল ১০টার সিরাজগঞ্জগামী রাজশাহী এক্সপ্রেস কমিউটার ট্রেন স্টেশন ছেড়েছে দুপুর ২টার পর। ট্রেনের এমন ভয়াবহ সিডিউল বিপর্যয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। তাই রেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে গেছে কাউকে কাউকে।

দুপুরে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে বসে ছিলেন সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী মৌসুমী রহমান। তিনি বলেন, রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু লাইন ঠিক থাকে না। লুটপাটের কারণে নাজুক অবস্থায় থাকে রেললাইনগুলো। ফলে ক’দিন পর পরই ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। আর ভোগান্তি পোহায় আমরা সাধারণ যাত্রীরা। মৌসুমী জানান, ট্রেনের জন্য সকাল ৭টা থেকে তিনি স্টেশনে বসে আছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার শহীদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ সময় লাইন বন্ধ থাকার কারণে রেলের সিডিউল ভেঙে পড়েছে। এ নিয়ে যাত্রীদের কাছে আমাদের দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া উপায় নেই। আমরা তাই করছি। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যেই যেন সিডিউল ঠিক হয়ে যায় তার চেষ্টা আমরা করছি।

প্রসঙ্গত, রাজশাহীর চারঘাট এলাকায় ক’দিন ধরেই রেললাইন সংস্কারের কাজ চলছিল। পুরাতন স্লিপার পরিবর্তন করে নতুন স্লিপার বসানো হচ্ছিল। নতুনভাবে দেয়া হচ্ছিল পাথরও। সংস্কারের সময় স্লিপারের সঙ্গে লাইন আটকানো কয়েকটি ডগস্পাইক পিন খুলে রাখা হয়েছিল। সংস্কার কাজে নিয়োজিত রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রশিদ তা খেয়াল করেননি। ফলে ওই পথ দিয়ে ট্রেন যাওয়ার সময় সেটি লাইনচ্যুত হয়। এতে ২৮ ঘণ্টার জন্য রাজশাহীর সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। দায়িত্ব পালনে গাফিলতির কারণে প্রকৌশলী আবদুর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।

ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/আরআর/এমআর