এক বাড়িতেই ১১ প্রতিবন্ধী, ভাতা পান একজন

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০১৯, ০৮:৫৭

আজহারুল হক, ময়মনসিংহ

শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বাড়ির নাম হয়ে গেছে ‘আব্রাদের বাড়ি’। সেই বাড়ির ১১ জন বাসিন্দাই বাক প্রতিবন্ধী। তাদের মধ্যে একজন সরকারি ভাতা পেলেও বাকিরা পান না। পরিবারের অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী হলেও থেমে নেই তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। প্রতিনিয়ত চালিয়ে যেতে হচ্ছে জীবনযুদ্ধ। ভিক্ষা ও অন্যের জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা।

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটি ইউনিয়নের পলটিপাড়া গ্রামে বাড়িটির অবস্থান। সেই বাড়িতে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধসহ ৩০ জনের মতো বাসিন্দা থাকেন। যাদের মধ্যে ১১ জনই বাক প্রতিবন্ধী।

বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার শিকার বাড়ির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য এ প্রতিবেদককে সহায়তা করেন পাশের বাড়ির গৃহবধূ জেসমিন নাহার। জেসমিন বলেন, ‘তিনি এখানে বধূ হিসেবে আসার পর থেকে এই বাড়ি বাসিন্দাদের সঙ্গে ইশারায় কথা বলতে গিয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি তাদের সুখ-দুঃখের কথা বুঝতে পারেন। তার ইশারাও বাক প্রতিবন্ধীরা বুঝতে পারেন।’

জেসমিন বলেন, ‘এই বাড়ির তিন মেয়ে হচ্ছেন- চান বানু (৬৫), তাহের বানু (৫৫) ও জাহের বানু (৪৫)। তারা তিনজনই বাকপ্রতিবন্ধী। চান বানুর দুই সন্তান হচ্ছেন-  আবদুল মালেক (৩৩) ও আবদুল খালেক (৩৬)। তারাও বাক প্রতিবন্ধী। তাহের বানুর এক সন্তান সুস্থ ও স্বাভাবিক। জাহের বানু নিঃসন্তান। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তাদের কেউ কাজে নেয় না। ফলে তারা ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এই নারীদের বিয়ে হলেও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বেশিদিন স্বামীর ঘর করার সৌভাগ্য হয়নি। স্বামীরা তাদের বাবার বাড়িতে ফেলে রেখে গেছে। ফলে ভাইদের আশ্রয়ে থাকতে হচ্ছে তাদেরকে।’

এদিকে চান বানুর ছেলে আবদুল মালেকের তিন সন্তানের মধ্যে আবার দুজনই বাকপ্রতিবন্ধী। আরেক ছেলে আবদুল খালেকের তিন সন্তানের মধ্যে একজন বাক প্রতিবন্ধী। প্রতিবেশী গৃহবধূর মাধ্যমে কথা বলে জানা যায়, অন্যের জমিতে মজুর খেটে সংসার চলে তাদের। তাদের বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে শ্রবণ সমস্যা। কেউ কাজে নিলেও ডেকে সাড়া পান না। ছোট কিছু দিয়ে শরীরে ঢিল ছুঁড়ে দিয়ে সাড়া পেতে হয়।’

ওই বাড়ির দুই ছেলে (চান বানুদের ভাই) হচ্ছেন- মেরাজ মিয়া (৬৫) ও আবদুস সাত্তার (৫৫)। তারা দুজনও বাক প্রতিবন্ধী। মেরাজ মিয়া বিয়ে করলেও প্রতিবন্ধকতার কারণে স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। আবুদস সাত্তারের এক সন্তানও বাক প্রতিবন্ধী।

একই পরিবারের ১১ জন বাক প্রতিবন্ধী হলেও কেবল আবদুস সাত্তার সরকার থেকে দেয়া প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। তবে সাত্তারের এক বছরের (জুলাই ১৫ ইং থেকে জুন ১৬ ইং) ভাতা সহনাটি ইউনিয়নের একজন জনপ্রতিনিধি আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ প্রতিবেদক যখন তাদের (প্রতিবন্ধী) তথ্য সংগ্রহ করছিলেন তখন বাক প্রতিবন্ধীরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। ক্ষোভের কারণ জানতে চাইলে ‘দোভাষীর’ দায়িত্ব পালনকারী গৃহবধূ জেসমিন বলেন, ‘অর্থ আত্মসাৎ ও সহনাটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে একাধিকবার বাক প্রতিবন্ধীদের তথ্য সংগ্রহ ও ছবি তুলে নিলেও সরকারি কোনো ভাতা না পাওয়ার কারণে এ প্রতিবেদককে ইউপির লোক মনে করে ক্ষোভ দেখান তারা। পরে বুঝিয়ে বললে তারা শান্ত হন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহনাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার কাছে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডই আসে কম। তাই সারা ইউনিয়নের প্রতিবন্ধীর সংখ্যা মাথায় রেখে বিতরণের কাজটি করতে হয়। সুযোগ পেলে ওই বাড়িতে সরকারি ভাতার একাধিক কার্ড দেবেন বলে জানান।’

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দেখি ওই বাড়িতে একটি নলকূপ দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারি কি না।’

(ঢাকাটাইমস/১৩জুলাই/এলএ)