বন্ধুত্বের বিরল সম্মিলন

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০১৯, ১২:০৮ | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯, ১৭:১০

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

রক্তের জন্য হয়তো কারো বাবা-মা, স্বজনের অপারেশন হচ্ছে না। চিন্তার কিছু নেই। কারণ, দেখলেন সমস্যা শুনতেই রক্ত দিতে অনেকটা লাইন লেগে যাবে!

আবার ঘুরতে হোক বা প্রয়োজনেই হোক বাংলাদেশে যে কোনো প্রান্তে প্রথমবার ঘুরতে গেলেন। কিছুই জানেন না চেনেন না। সেইভাবে পরিচিত কেউ নাই। অথচ আপনার আগমনের খবর কানে গেলেই দেখবেন কেউ একজন স্বাগত জানাতে এগিয়ে আসছে। কোথায় থাকবেন, কোথায় খাবেন কোনো চিন্তাই আর আপনাকে করতে হবে না।

শুনে হয়তো আশ্চর্য হতে পারেন। হওয়ারই কথা। কারণ নাগরিক ব্যস্ততার মধ্যে অন্যের জন্য এত কিছু করার সুযোগ কার আছে? একদল স্বপ্নবাজ তরুণের উদ্যোগে গড়া ‘এসএসসি ০২ ও এইচএসসি ০৪ বাংলাদেশে’র সদস্যরা গত আট বছর ধরে এমনটাই করে আসছেন।

ফেসবুকভিত্তিক এই গ্রুপটির সদস্য হওয়ার অন্যতম যোগ্যতা হলো দেশের যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০২ সালে এসএসসি ও ২০০৪ সালে এইচএসসি পাস হতে হবে। অল্প কিছু মানুষের পরিকল্পনায় যাত্রা শুরু করা গ্রুপটির এখন সদস্য সংখ্যা ৪০ হাজার।

দেশ বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব বন্ধুরা প্রতিক্ষণ একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন ফেসবুকে। সুখ, দুঃখ শেয়ার করার পাশপাশি একে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসে হৃদয়ের টানে।

শুক্রবার রাতে ‘একসঙ্গে দাঁড়াই, আলাদা হলেই পিছলে যাই’ এই স্লোগানে গড়া গ্রুপের আটবছর পূর্তি হয়ে গেল। সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় আটবছর পুর্তির অনুষ্ঠান। ফেসবুকভিত্তিক অনেক গ্রুপ থাকলেও ৪০ হাজার বন্ধুর এমন গ্রুপ পাওয়া সত্যিই বিরল।

দুপুর থেকে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে একে একে অনুষ্ঠানস্থলে আসতে থাকেন গ্রুপের প্রাণভোমরারা। বিকাল হতেই কানায় কানায় ভরে যায় পুরো অডিটোরিয়াম। অনেক দিন পর প্রিয় বন্ধুকে পেয়ে সবাই যেন ফিরে যায় সেই দুরন্ত শৈশবে। কেউ আবার ফেসবুকে দেখা বন্ধুকে সরাসরি পেয়ে আবারও পরিচিত হয়ে নেন।

আগে থেকেই রেজিস্ট্রেশন করা সদস্যরা সারিবদ্ধভাবে টোকেন সংগ্রহ করে একে একে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন। সূচনা বক্তব্যের পর এক পর্যায়ে মঞ্চ থেকে ঘোষণা আসে জন্মদিনের কেক কাটার।

এবার ঢাকাসহ চট্টগ্রামেও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। ইতিমধ্যে ইংল্যান্ড, কক্সবাজার এবং নোয়াখালীতে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে। গত বছরও বিশ্বের ১৭টি দেশ এবং দেশের ৪০ জেলায় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

গত মে মাসের ১২ তারিখ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হলেও পবিত্র রমজানের কারণে দিবসটি পালনের তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়।

হইহুল্লুর করে কেক কাটা শেষে শুরু হয় স্মৃতিচারণ পর্ব। গ্রুপে যুক্ত হওয়ার ইতিহাস থেকে শুরু করে সুবিধা অসুবিধার কথা তুলে ধরেন অনেকে। কেউ আবার গ্রুপকে এগিয়ে নিতে নানা পরামর্শও দেন।

একজন সদস্যের পরামর্শে চলে আসে ফেসবুক কখনো বাংলাদেশে বন্ধ হলে গ্রুপের বন্ধুদের ধরে রাখা যাবে কিভাবে? তাই সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার বিকল্প মাধ্যম খুঁজে বের করার তাগিদ দেন।

একজনের পরামর্শে বর্তমানে দেশে যে ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদে করণীয় বিষয়ে। নৈতিকতার জায়গা থেকে কোনো কর্মসূচি দেয়া যায় কি না সে বিষয়টি। এরপর ঘোষণা আসে সামাজিক দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে একমাস সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। গো গ্রিন, ডু গ্রিন, ইউ মেড গ্রিন বাংলাদেশ- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গ্রুপের সদস্যরা প্রত্যেকে অন্তত দুটি করে গাছ লাগাবে। গত ঈদুল ফিতরের সময় কয়েক হাজার পথশিশুদের মাঝে নতুন পোষাক বিতরণ করেছে গ্রুপের সদস্যরা।

অনুষ্ঠানে এর পরের আয়োজন ছিলো গ্রুপের সদস্য ও সন্তানদের স্টেজ পারফরম্যান্স ও সংগীত সন্ধ্যা। নৃত্যের তালে তালে এসময় অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে আনন্দময়। নেচে গেয়ে পুরো অডিটোরিয়াম মাতিয়ে রাখেন গ্রুপের সদস্যরা।

এরপর জানানো হয় নৈশভোজের আমন্ত্রণ। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান পরিবেশন করা হয় নৈশভোজে। ফাঁকে চলতে থাকে র‌্যাফেল ড্র। যাতে অসংখ্য আকর্ষণীয় পুরস্কার দেয়া হয়। আর গ্রুপের সকল সদস্যকে সুভিনিয়র হিসেবে দেয়া হয় একটি করে গাছ।

গ্রুপের সদস্য আজমীর হাসান কনক,  শরীফ হোসেন হৃদয়, সাদী মুহাম্মদের প্রানবন্ত উপস্থাপনায় পুরো আয়োজন ছিল সরগরম।

অনুষ্ঠানে গ্রুপের এডমিন ও সদস্যদের মধ্যে রেজাউল হক, জাহিদুল আনোয়ার জন, কাওসার আহমেদ, হাবিবুর রহমান, লায়ন রিগান পাটওয়ারী, জাকারিয়া নাহিদ, রাশিদুল হাসান রুমি, বাবু সরকার, নুরুল আবসার, তাসনিম মেহবুবা বাঁধন, এফ এম মোস্তাফিজুর রহমান, আশরাফ শাহীন, নাদিরা, রুনু, রাসেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/১৩জুলাই/বিইউ/ইএস)