শিশু ধর্ষণ চেষ্টা

বাদীর কাছে টাকা নিয়ে ফাঁসছেন এসআই

সিরাজুম সালেকীন
ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৩ জুলাই ২০১৯, ১২:১৬

‘মেয়েটি ধর্ষিত হলো আর উল্টো আপনি ওর পরিবার থেকে চার হাজার টাকা নিলেন। ওরা গরিব মানুষ... টাকাটা কি খরচের জন্য নিছেন?’ ‘মামলাটা ভাই আপনি একটু চালান তো...। একটা মামলা চালাতে অনেক কিছু লাগে... আপনি থানায় আসেন...। আমি তো বলছি, একটা মামলা চালাতে অনেক টাকা লাগে... সঙ্গে অনেক ঝামেলা বাবারে।’ ‘সরকার কি আপনাকে মামলা চালাতে টাকা দেয় না? সরকার কি আপনাকে বেতন দিচ্ছে না? তাহলে থানা-পুলিশ কিসের জন্য?’

রাজধানীর কাফরুল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কুদ্দুস বেপারি ও একটি মানবাধিকার সংগঠনের চেয়ারম্যান আনোয়ার-ই-তাসলিমা এরকমই একটি কথোপকথন ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

অভিযোগ উঠেছে, এসআই কুদ্দুস ধর্ষণ চেষ্টার মামলার তদন্ত করতে দ্বিতীয় শ্রেণির স্কুলছাত্রীর পরিবার থেকে চার হাজার টাকা নিয়েছেন। আরও টাকা নিতে পরিবারকে চাপ দিচ্ছেলেন। পুরো টাকাটাই নেয়া হয়েছিল মামলার জন্য ‘খরচ হবে’ দাবি করে। পরে অবশ্য চাপের মুখে তিনি সেই টাকা ফেরত দিয়েছেন।

ঘটনার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির একজন ঢাকা টাইমসকে বলেনন, ‘বর্তমানে সে (এসআই) বরখাস্ত আছে। আমরা তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছি। এখন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর বাবা একজন ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী। ২১ মে বাবার দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে দ্বিতীয় শ্রেণি পড়–য়া শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন স্থানীয় এক যুবক। স্থানীয়রা বিষয়টি দেখে ফেলে এবং ভুক্তভোগী শিশুটিকে উদ্ধার করে। এসময় উত্তেজিত জনতা ধর্ষণচেষ্টায় অভিযুক্ত যুবককে মারধর করে। পরে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

পরদিন রাতে শিশুর বাবা কাফরুল থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশের দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কুদ্দুস বেপারি টাকা দাবি করেন। বলেন, ‘টাকা লাগবে। টাকা ছাড়া মামলা চালানো সম্ভব নয়।’ চার হাজার টাকা আদায়ও করেন তিনি। পরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ওই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা নেয়া হয়। ওই মামলার তদন্তভারও থানা থেকে তাকেই দেওয়া হয়।

অভিযোগ, মামলার পর ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবারের কাছে আবার টাকা চান এসআই কুদ্দুস বেপারি। কারণ হিসেবে বলা হয়, ‘একটি মামলা চালাতে টাকার দরকার হয়’।

বিষয়টি স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংগঠনের নজরে আসে। সংগঠনের পক্ষ থেকে মামলার পর কেন ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবারের কাছে টাকা চাওয়া হচ্ছে সেটা জানতে চাওয়া হয়। এই নিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা ও ‘সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটি’ নামে একটি মানবাধিকার সংগঠনের চেয়ারম্যানের একটি অডিও ভাইরাল হয়।

মানবাধিকার সংগঠনটির চেয়ারম্যান তাসলিমা এসআইয়ের কাছে জানতে চান ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে কি না? তখন এসআই জবাব দেন রাতেই মামলা হয়েছে?

তাসলিমা বলেন, ‘কিন্তু ওদের কাছ থেকে রাতে চার হাজার টাকা নিছেন কেন? এরা গরিব মানুষ। টাকাটা কি খরচের জন্য নিছেন?’

এসআই কুদ্দুস বলেন, ‘মামলাটা ভাই আপনি চালান তো....।’

তাসলিমা বলেন, মামলা চালান মানে? সরকার কি আপনাকে বেতন দিচ্ছে না? এসব মামলায় সরকারের কি কোনো রেসপনসিবিলিটি (দায়িত্ববোধ) নাই? আমাকে মামলা চালাইতে বলছেন মানে? আপনি কী ধরনের কথা বললেন এটা?

এসআই বলেন, ‘একটা মামলা চালাইতে গেলে অনেক কিছু লাগে আপা। আপনি আসেন, কথা বলতেছি।’

তাসলিমা বলেন, ‘অনেক কিছু কী লাগে? এই মামলা চালাতে থানা পুলিশ কিসের জন্য? রাতে যে ওর কাছ থেকে চারটা হাজার টাকা নিছেন, ওর মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে। আপনি উল্টো তার থেকে টাকা নিলেন। আরও তিন হাজার টাকা নিয়ে যেতে বলছেন। আর আমাকে বলতেছেন মামলাটা আপনি চালান?’

‘চাকরিটা কিসের করতেছেন? সরকার কি আপনাকে আরাম করার জন্য বেতন দেয়? জনগণের টাকায় তো সরকার বেতন দিচ্ছে।’

এসআই কুদ্দুস বলেন, ‘এখানে যে কী পরিমাণ খরচ হয়, সেটা কীভাবে ম্যানেজ করব আপা? অনেক খরচ হয় আপা, অনেক খরচ হয়।’

এই অডিওর সত্যতা সম্পর্কে জানতে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) খাইরুল আমিন তা নিশ্চিত করেন। বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল অনুসন্ধান করা হয়েছে। সে যে ভাইরাল হওয়া অডিওতে কথা বলেছে, এটার সত্যতা পাওয়া গেছে। ওই মর্মে একটা রিপোর্টও দেওয়া হয়েছে। এখন তার শাস্তির বিষয়টি উর্ধ্বর্তন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করবেন। বর্তমানে এসআই কুদ্দুস বরখাস্ত আছেন।’

শিশুটিকে ধর্ষণ চেষ্টার মামলার অগ্রগতি বিষয়ে কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক-উল-আলম ঢাকা টাইমস কে বলেন, ‘এই মামলার একমাত্র আসামিকে ধরা হয়েছে। আসামি বর্তমানে জেলহাজতে আছে। তবে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) এখনও প্রস্তুত হয়নি। সেটা প্রস্তুত করা হচ্ছে।’

মানবাধিকার নেত্রী আনোয়ার-ই-তাসলিমা বলেন, ‘পেশাদার কোনো পুলিশ সদস্য এমনটা করতে পারেন না। ঘটনা শোনার পর আমি এটাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন মনে করে সোচ্চার হয়েছিলাম। ওই এসআইকে অনেকবার ফোন দিছি। কথা বলছি। নিজে থানায় গিয়ে টাকা ফেরত নিয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারকে দিয়েছি।’

যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই এস আই আব্দুল কুদ্দুস ব্যাপারির অবশ্য নাগাল পাওয়া যায়নি গত দুই দিনের চেষ্টাতেও। তার ব্যক্তিগত নম্বরটি কর্মস্থলের কেউ দিতে চাননি।

ঢাকাটাইমস/১৩জুলাই/এসএস/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

জিম্মি নাবিকদের মুক্তির আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডিএনসিসি কার্যালয় সরানোর মধ্য দিয়ে কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু 

বিএসএমএমইউ উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন দীন মোহাম্মদ, বললেন ‘কোনো অন্যায় আবদার শুনব না’

সাত বিভাগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে

বাংলাদেশে মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে সমর্থন অব্যাহত থাকবে: যুক্তরাষ্ট্র

সীমান্তে নিহত দুই বাংলাদেশির লাশ ফেরত দিলো বিএসএফ

ট্রেনে ঈদযাত্রা: পঞ্চম দিনের মতো অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু

৫০ হাজার টন ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :