কেবল আইন করে অপপ্রচার বন্ধ করা সম্ভব নয়

মো. মাহমুদুল হাসান
 | প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০১৯, ১১:২০

ফেসবুক, ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো মানুষের যোগাযোগকে আরো সহজ করেছে। বলা যায় পুরো পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। এসব মাধ্যমের প্রসারের ফলে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের খবর ছড়িয়ে পড়েছে নিমিষেই। সংবাদের সঙ্গে গুজবের মতো অপসংবাদগুলোও ছড়িয়ে যায়, যা মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের দেশের অনেকেরই ধারণা নেই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বলা যায় আমাদের দেশে এই মাধ্যমটির সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। একেবারেই ভুল ও বেঠিকভাবে এই মাধ্যমের ব্যবহার হচ্ছে।

অপব্যবহার ও অপপ্রচার বন্ধের জন্য সবার আগে আমাদের প্রয়োজন বিবেকবান হওয়া, সচেতন হওয়া। যে মাধ্যমগুলো আমরা ব্যবহার করছি সে মাধ্যমগুলোর প্রয়োগ-বিধিনিষেধ ও দেশের প্রচলিত আইন-কানুন সম্পর্কে জেনে ব্যবহার করা। কেবলমাত্র আইন প্রয়োগ করে এর অপপ্রচার ও অপব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয়। আমাদের নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ, বিবেক ও সচেতনতাই পারে এ সমস্যার সমাধান দিতে।

উন্নত বিশ্বের অনুসরণ করা যেতেই পারে। কিন্তু অনুসরণ করার আগে সবসময় মনে রাখতে হবে আমদের সামাজিক, ধর্মীয় অবস্থান। যেহেতু উন্নত দেশগুলোতেও এসকল মাধ্যমের অপব্যবহার হচ্ছে তাই কোনো দেশকে অনুসরণ করার পূর্বে নিজের দেশের প্রেক্ষাপটের ওপর নির্ভর করে অনুসরণ করা যেতে পারে। এমন না হয় যে, অনুসরণের ফলে আমাদের ভালোর চেয়ে খারাপ বেশি হয়।

ফেসবুক বা ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করে, মজার ছলে, বিনোদনের জন্য কিংবা ফলোওয়ারস বৃদ্ধির জন্য যারা এসব কাজ করেন, তারাই পারেন এগুলো বন্ধ করতে। তাদের কৃতকর্মের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিজের ভুল স্বীকার করা উচিত।

যেখানে কোটি কোটি মানুষ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে সেখানে কিছু অপব্যবহার থাকবে এটা খুবই স্বাভাবিক। সবাই সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক চিন্তা করবে এটা চিন্তা করাও আসলে ভুল। কিছু অপব্যবহার তো হবেই। তবে হ্যাঁ সঠিক নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো একটি পোস্ট প্রচার হলে তা নিশ্চিত হওয়ার সহজ মাধ্যম হচ্ছে নির্ভরযোগ্য মাধ্যমগুলোর সাহায্য নেওয়া। এক্ষেত্রে টেলিভিশন, রেডিও অথবা নিউজ পোর্টাল ইত্যাদির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। নিশ্চিত না হয়ে কিংবা সঠিক তথ্য না জেনেই কোনো খবরে বিভ্রান্ত হয়ে ওই সমস্ত তথ্য বা খবর প্রচার করা যাবে না।

পূর্বের তুলনায় বর্তমানে কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো তথ্য প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে তার সত্যতা কতটা তা জানা সম্ভব নয়। এর জন্য দুই-তিন দিন সময় লেগে যায়। তাই হুট করে কোনো তথ্য বন্ধ করা যায় না। তবে কর্তৃপক্ষ এখন অনেক সচেতন এবং এই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম।

একজন ফেসবুক কিংবা অন্যান্য সকল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীকে অবশ্যই সচেতন এবং নৈতিকতাবোধসম্পন্ন হতে হবে। কেবলমাত্র মজা করার জন্য কিংবা ফলোওয়ারস বৃদ্ধির জন্য মিথ্যা বা বানোয়াট তথ্য প্রচার করা যাবে না। যারা এ সকল মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন তাদেরকেও অনেক বেশি সচেতন, নীতিবান এবং বিবেকবান হতে হবে, যাতে করে কোনো মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এমন তথ্যের প্রচার ও প্রসার না ঘটে। মূলত এটি একটি যৌথ কার্যক্রম। তাই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সফলতা অর্জন সম্ভব। এজন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং মিথ্যা, বানোয়াট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এমন তথ্য প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

লেখক: তথ্যপ্রযুক্তিবিদ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :