বন্যায় বিশুদ্ধ পানির সংকটে কুড়িগ্রামবাসী

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৪ জুলাই ২০১৯, ২০:১৯ | প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০১৯, ২০:১৫

কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে বাড়ছে বানভাসী মানুষের সংখ্যা। নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় লোকজন উঁচু বাড়ি, বাঁধ বা রাস্তায় আশ্রয় নিচ্ছেন। পানিতে নলকূপ ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন কয়েক লাখ মানুষ। ল্যাট্রিন ডুবে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে জলমগ্নরা। এছাড়াও ফসলি জমি ডুবে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক।

ঘরে খাবার থাকলেও রান্নার অভাবে একবেলা রান্না করে সারাদিনে তা দিয়েই দিন কাটাচ্ছে অনেকেই। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় প্রায় শতাধিক প্রাইমারি বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।

জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, রবিবার দুপুর পর্যন্ত কুড়িগ্রাম জেলায় ৭৬টি ইউনিয়নের মধ্যে৫২টি ইউনিয়নের ২৬২টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ৫৩ হাজার ৫৫১টি পরিবারের ২ লাখ ১৪ হাজার ১০৪ জন মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। বন্যায় ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় এক হাজার ২৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে পানি ওঠায় রবিবার পর্যন্ত ৯২টি বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. রুমানুজ্জামান জানান, রবিবার দুপুর পর্যন্ত ধরলা নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৮১ সে.মিটার ও ব্রহ্মপূত্রের পানি ৩৩ সে.মিটার বেড়ে ৭৬ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে বইছে।

এদিকে তিস্তার পানি ২০ সে.মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চর, দ্বীপচর, নদী সংলগ্ন সবগুলো গ্রামই এখন পানিতে ভাসছে। জেলায় ৭৭টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে তিন হাজার ৮০০ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

প্রধান সড়ক জলমগ্ন হওয়ায় কুড়িগ্রাম ও ঘোগাদহ থেকে যাত্রাপুর যানচলাচল সম্পূর্ণরুপে বন্ধ হয়ে গেছে। সদরের হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব বাঁধ যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বাঁধটি ভেঙে গেলে এই এলাকার কয়েকশ পরিবার জলমগ্ন হয়ে পড়বে। রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা ও রামহরি মৌজার নদী তীরবর্তী এলাকা এখন পানিবিন্দ। হু-হু করে পানি ঢুকছে লোকালয়ে।

বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি জমির। কুড়িগ্রামে বন্যায় দেড় হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে আমনের বীজতলা, আউস, সবজি, কলা ভুট্রা ও পাট। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকার ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ ও কৃষকদের পরামর্শ দেয়ার জন্য কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাফিজুর রহমান জানান, ধরলা ও ব্রহ্মপূত্রের পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে মানুষের মধ্যে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। আমরা পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোয় ৫০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২লাখ ৭৫হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণ শুরু হয়েছে। এছাড়াও সাড়ে চারশত টন চাল ও ৫ লাখ ৭৫হাজার টাকা মজুদ রয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে আরো এক হাজার মেট্রিক টন জিআর চাল, ২০ লাখ টাকা এবং ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :