এই না হলে বিশ্বকাপ ফাইনাল?

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
| আপডেট : ১৫ জুলাই ২০১৯, ১৩:২৫ | প্রকাশিত : ১৫ জুলাই ২০১৯, ১৩:০৪

ভালো কিছু খাওয়ার পর মুখে লেগে থাকে। আমরা প্রায়ই বলি এমন কথা। ‘ইশ্ যা খেয়েছি না! তেলতেলে পেটির টুকরো। সরষে ইলিশটা যা হয়েছিল না, মুখে লেগে আছে।’ আসলেই কি মুখে লেগে থাকে? থাকে না। মনে থাকে। আর মনে হতেই তৃপ্তির ঢেঁকুর ওঠে। ওটাই মুখে লেগে থাকা। সত্যি সত্যি মুখে লেগে থাকলে কেমন দেখাতো, একবার ভেবেছেন? ও মুখ কি দেখাতে পারতেন?

ভাবতে থাকুন। তার আগে কথাটা বলে ফেলি। ‘মুখে লেগে থাকা’ প্রসঙ্গটা আসলো বিশ্বকাপের ফাইনাল নিয়ে। কী খেলাটাই দেখলো বিশ্ব! বিশ্বকাপ বলে কথা। তার ওপর ফাইনাল। অমন না হলে জমে? জমেছে। জমে একেবারে ক্ষীর যাকে বলে।

বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল উচ্ছ্বসিত হয়ে লিখলেন, ‘কী খেলা! এ খেলার definition কী?’ তার ঘণ্টাখানেক পরে আবারও লিখলেন, ‘আমাদের সময়ে দেখার সুযোগ পেয়ে গেলাম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের নতুন ইতিহাস !’

আসলেই নতুন ইতিহাস গড়েছে বিশ্ব ক্রিকেট আসর। এমন খেলা কে দেখেছে স্মরণকালে? ওই যে মুখে লেগে থাকার মতো বলতে হয়, ‘যা দুর্দান্ত খেলেছে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড! চোখে লেগে আছে!’

বিশ্ব ক্রিকেটে এখন তিনশ, সাড়ে তিনশ রান কোনো হিসাবে পড়ে না। সেখানে বিশ্বকাপ ফাইনালে ২৪২ রানের লক্ষ্যে এতটা লড়াই হবে, কেউ আগে ভাবতে পেরেছেন? সেই খেলা গিয়ে গড়ালো সুপার ওভারে। তাও রানের হিসাবে দুই দলই সমান করেছে। যদিও বেশি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ট্রফিটা নিজেদের ঘরেই রাখতে পেরেছে স্বাগতিকরা।

খেলা যারা দেখেছেন, কেউ দুই দলের কোনোটাকেই ছোট করতে পারবেন না। সমান লড়েছে দুই পক্ষ। সেয়ানে সেয়ানে লড়াই, কথাটার কতদিন যে প্রয়োগ হয়নি। দু হাজার উনিশের বিশ্বকাপ নিয়ে বলাই যায় এমন কথা।

বেন স্টোকস আর বাটলারের মারমুখী জুটি কী খেলাই না দেখালো! সুপার ওভারেও ওই তারাই এলেন। রসায়নটা বেশ জমিয়েছেন দুজনে। ধারাভাষ্যের মুখগুলো বিস্ময় প্রকাশ করতে ভুলেননি নিউজিল্যান্ডের নেতা কেন উইলিয়ামসনের কথা বলতে। কী বিচক্ষণ নেতৃত্ব! অধি‘নায়ক’ই বটেন তিনি। কঠিন মুহূর্তে তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অন্যরা অনুসরণ করতে পারেন।

এবারের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের শক্তিই ছিল বোল্ট, নিশাম আর ফার্গুসনরা। বোলিংয়ে এমন শক্ত দল দ্বিতীয়টির দেখা মেলেনি এবারের আসরে। তাই ২৪২ রানের লক্ষ্য মরগানরা সহজেই উতরে যাবে এমনটি হয়তো ভাবেনি কেউ।

খেলার শেষ পর্যন্ত ছিল উত্তেজনা। একেকটি বল, একেক ধরনের সমীকরণ সামনে আনছিল। জিততে জিততে হেরে যাচ্ছিল নিউজিল্যান্ড। চালকের আসনে ইংল্যান্ড। হঠাৎ ভাঙলো উইকেট। চালক এবার নিউজিল্যান্ড। রুদ্ধশ্বাসের ওই খেলায় শেষতক দাপট রাখলো ইংল্যান্ডই। তবে নিউজিল্যান্ডের নৈপুণ্যকে ছোট করার সুযোগ নেই। সমানে সমান।

কাপটা যদি দুদলের নেওয়ার সুযোগ থাকতো? যদি দুদলই যৌথভাবে হতো চ্যাম্পিয়ন? তাহলে হয়তো এত আক্ষেপ, আফসোস কিছুই থাকতো না। গল্পকার মনদীপ ঘরাই ফেসবুক বার্তায় তেমন খেদই ছিল। ‘আফসোস, বিজয়ী একদলই হয়! কে কবে দেখেছে ক্রিকেটের এমন বিজয়?’

পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে এসেছিল ইংল্যান্ড। সেমির ওই ম্যাচে ইংলিশদের উইলোর কাছে পাত্তাই পায়নি অজিরা। তার আগের ম্যাচে দুবারের বিশ্ব সেরা এবং এবারের আসরের ফেভারিট ভারতকে পরাজিত করে উঠে এসেছিল নিউজিল্যান্ড। কেউ তো কম নয়!

সত্যিই ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ অভাবনীয় এক লড়াইয়ের সাক্ষী করলো গোটা বিশ্বকে। এমনটা না হওয়ারই কথা। তা না হলে লোকে একে বিশ্বকাপইবা বলবে কেন?

লেখক: গল্পকার ও সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :