কুড়িগ্রামে বন্যার অবনতি, চার শিশুর মৃত্যু

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০১৯, ১৮:৪৬

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামে সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে চার শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

ধরলা, ব্রহ্মপূত্র ও তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার ৫৫টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্লাবিত হয়েছে ৩৯০টি গ্রামের প্রায় ৩ লাখ মানুষ।

সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, বন্যার পানিতে ডুবে চার শিশুর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে।

এরমধ্যে উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের হাবিবুল্লাহ (৬), ফুলবাড়ীতে একজন ও চিলমারী উপজেলায় দুইজন শিশু বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় নাম নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এদিকে সোমবার সকালে কুড়িগ্রাম-নাগেশ^রী মহাসড়কের ৪/৫ জায়গায় হাঁটু পানি প্রবাহিত হওয়ায় ভারী যানচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে দূরপাল্লার যাত্রীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে যাতায়াত করছেন। নাগেশ্বরীতে নদী তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে স্থানীদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে তিনটি পৌরসভাসহ ৭৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টি ইউনিয়নের ৩৯০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় ৭৩ হাজার ৫১১টি পরিবারের ২ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪ জন মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।

বন্যায় ২৭৫ প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার রাস্তা ও ১৬টি ব্রিজ/কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯শ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ৫২২ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নাগেশ^রীর বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মুড়িয়া এলাকায় দুধকুমোর নদ তীররক্ষা বাঁধের একাংশ ভেঙে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পরেছে এলাকার মানুষ। এছাড়াও হুমকিতে রয়েছে সদর উপজেলার বাংটুর ঘাট ও সারডোব তীররক্ষা বাঁধ। এখানে চর বড়লই বাংলাবাজার এলাকায় পাকা সড়ক ভাঙনের উপক্রম হয়েছে। নাগেশ^রী-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের পাটেশ^রী পুরাতন বাসস্টান্ড, উত্তর কুমরপুর মোড় ও চন্ডিপুর এলাকায় ধরলা নদীর পানি সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে রাস্তা রক্ষায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।

কুড়িগ্রাম সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন সরজমিন পরিদর্শন করে এই ব্যবস্থার কথা সাংবাদিকদের জানান।
উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের ব্যাপারীগ্রামে বাড়ির পেছনে খেলতে গিয়ে হাবিবুল্লাহ নামে এক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। সে ওই গ্রামের কৃষক মাহবুরের পূত্র। হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. রুমানুজ্জামান জানান, সোমবার বিকাল পর্যন্ত ধরলা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপৎসীমার ১১২ সে.মিটার, ব্রহ্মপূত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১০৮ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তবে, তিস্তার পানি কমে গিয়ে ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান জানান, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি সমন্বিতভাবে মোকাবেলার জন্য গতকাল রাতে পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের উপস্থিতিতে এক বিশেষ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সকল বিভাগকে সক্রিয় থেকে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সচিব প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা জানান।

সোমবার জেলার তিনটি বন্যা দুর্গত এলাকায় ২ হাজার পরিবারের প্রতিজনকে ১৫ কেজি করে চাল বিতরণ করেন সচিব।

ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/ইএস