বিদেশিদের নিয়ে ট্রাম্পের কটুক্তি, বিপাকে মেলানিয়া

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০১৯, ১৩:০১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

বিদেশিদের নিয়ে আবারও কটুক্তি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেখান থেকে এসেছেন, সেখানেই ফিরে যান- কংগ্রেসের চার নারী সদস্যের প্রতি এমনই বার্তা ছিল ট্রাম্পের। তবে তার এমন টুইটের পর বেশ বিপাকে পড়েছেন প্রেসিডেন্টের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প। এ নিয়ে অনেকটা নিরবতা পালন করছেন তিনি। কারণ স্লোভেনিয়ায় জন্ম নেয়া মেলানিয়া ২০০১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করেন এবং ২০০৬ সালে দেশটির নাগরিকত্ব পান।

রবিবার ওই টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘গোটা বিশ্বের নিরিখে যেখানে সরকার নিকৃষ্টতম, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অদক্ষ... সেই সব দেশ থেকে আসা প্রগতিশীল মহিলারা... আমেরিকার মতো সেরা এবং শক্তিশালী রাষ্ট্রের নাগরিকদের বোঝাতে এসেছেন, কীভাবে সরকার চালাতে হবে! ওরা যেখান থেকে এসেছেন, সেখানেই ফিরে যাচ্ছেন না কেন! অস্থির, অপরাধপ্রবণ সেই জায়গাগুলো বরং ঠিকঠাক করে আমাদের দেখান না, কীভাবে কাজটা করতে হবে!’

কাকে উদ্দেশ করে এ সব বললেন ট্রাম্প? ধারণা করা হচ্ছে নিউইয়র্কের আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো কর্তেজ, মিনেসোটার ইলহান ওমর, মিশিগানের রশিদা তালিব এবং ম্যাসাচুসেটসের আইয়ানা প্রেসলি হলেন ট্রাম্পের নিশানা। মার্কিন কংগ্রেসের চার অ-শ্বেতাঙ্গ ডেমোক্র্যাট নারী। এদের তিন জনের জন্ম এবং বড় হয়ে ওঠা আমেরিকাতেই। শুধু ইলহান শৈশবে আমেরিকায় এসেছিলেন সোমালিয়া থেকে।

ট্রাম্পের টুইটের পর চারজনই কড়া জবাব দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ট্রাম্পের জাতিবিদ্বেষী মন্তব্যের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনার দিকে এগোচ্ছেন। মার্কিন রাজনীতিতে ‘প্রতিবাদী’ চার নারীকে এখন ‘স্কোয়াড’ বলে ডাকা হচ্ছে। চার মহিলার প্রত্যেকেই অল্প বয়সে অ-শ্বেতাঙ্গ কংগ্রেস সদস্য হয়ে সাড়া ফেলেছেন এবং অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে সরব রয়েছেন।

এদিন ট্রাম্পকে পাল্টা জবাব দিয়ে আলেকজান্দ্রিয়ার টুইটবার্তায় বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আমি যেদেশের নাগরিক এবং যেদেশের জন্য আমরা সবাই শপথ নিয়েছি, তার নাম আমেরিকা। কিন্তু আপনি আমাদের সীমান্তকে অমানবিক শিবির বানিয়ে ধ্বংস করেছেন, যাতে শুধু আপনার এবং সেনাবাহিনীর লাভ হয়! দুর্নীতির কথাটা এক্কেবারে ঠিক বলেছেন, আপনার পায়ের কাছেই সেটা হয়ে চলেছে। আপনি রেগে গিয়েছেন কারণ আপনি সেই আমেরিকার কথা ভাবতেই পারেন না, যে আমেরিকা আমাদের গ্রহণ করেছে। যুদ্ধবাজ মনোভাব থেকে একটা ভয়ানক আমেরিকার উপরে নির্ভর করেন আপনি। যে আমেরিকা আমাদের জিতিয়েছে, তাকে মানতে চান না। আমরা আপনাকে ভয় পাই না, আপনি মানতে পারেন না সেটাও।’

রশিদা ট্রাম্পকে বিঁধে বলেছেন, ‘বিশৃঙ্খল ও সম্পূর্ণ ব্যর্থ প্রেসিডেন্টের উদাহরণ জানতে চান? উনি নিজেই তাই। ওর ভয়ঙ্কর মতাদর্শ সেই সঙ্কট তৈরি করে। ওকে ইমপিচ করা উচিত।’

ইলহান ওমর লিখেছেন, ‘শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদে ইন্ধন জোগাচ্ছেন উনি। আমরা ক‌ংগ্রেসে এসেছি এবং আপনার ঘৃণ্য-রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছি বলে আপনার এত রাগ।’

আইয়ানা ট্রাম্পের টুইটের স্ক্রিনশট দিয়ে লিখেছেন, ‘বর্ণবিদ্বেষ দেখতে অনেকটা এই রকম। আর আমাদের দেখে বুঝুন, গণতন্ত্রের চেহারাটা কেমন।’

তবে মার্কিন গণমাধ্যম ট্রাম্পের ওই টুইটের সারবস্তু তুলে ধরে জানিয়েছে এমন অবস্থায় নিরব রয়েছেন স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প। কারণ ট্রাম্প যাদেরকে কটাক্ষ করে ট্রাম্প এমন বার্তা দিয়েছেন তাদের মধ্যে পড়েন তার স্ত্রীও।

নিজেকে আমেরিকান হিসেবে তুলে ধরে গর্বভরে কথা বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তার পূর্বসূরীরা খুবে বেশিদিন আমেরিকায় পদার্পন করেননি। ট্রাম্পের পিতামহ জার্মানীর অভিবাসী ছিলেন। তার দাদা ফ্রেডেরিক ট্রাম্পের জার্মানীতে নিজের ‘ক্লোনডিক গোল্ড রাশ’ নামের একটি রেস্তোরাঁ ছিল। তার দাদা যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়ে আসেন ১৮৮৫ সালে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবারের আসল পদবি ছিল মূলত ‘ড্রাম্পফ্’ কিন্তু পরে এটি অপভ্রংশ হয়ে ট্রাম্প হয়ে যায়।

ঢাকা টাইমস/১৬জুলাই/একে