ইরানের পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘন গুরুতর নয়: ইইউ

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০১৯, ১৪:১৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

ইরান ২০১৫ সালে করা পরমাণু চুক্তির যে অংশ লঙ্ঘন করেছে- তা তেমন গুরুতর নয় এবং পুনরায় সংশোধনযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান। ফেডেরিকা মোগেরিনি বলেন, ‘ইরানকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি তারা যাতে তাদের পদক্ষেপের সংশোধন করে আবার আগের মতোই চুক্তির শর্ত অনুসরণ করে’।

চুক্তি ভেঙ্গে মে মাস থেকে ইরান ইউরেনিয়াম উৎপাদন বাড়িয়েছে, যা পারমাণবিক চুল্লিতে জ্বালানি হিসেবে এবং সম্ভবত পারমাণবিক বোমা বানাতেও ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে একতরফাভাবে নিজেদের প্রত্যাহার করে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞারোপের জবাবে এমন পদক্ষেপ নেয় তেহরান। ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনি এই চুক্তি লঙ্ঘন করে ইরান।

সংকট তৈরি হয়েছে যুক্তরাজ্য এবং ইরানের মধ্যেও। চলতি মাসে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সিরিয়ায় তেল পাঠানোর অভিযোগে ইরানের একটি তেল ট্যাংকার ব্রিটেন আটক করার পর এই সংকট তৈরি হয়। যদিও এই অভিযোগ নাকচ করেছে ইরান।

পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, নিজেদের উপর আরোপ করা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিনিময়ে পরমাণু কর্মসূচী কমিয়ে নেয়ার কথা জানায় ইরান। এই নিষেধাজ্ঞা দেশটির অর্থনীতির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে মোগেরিনি বলেন, বাস্তবিকপক্ষে এ পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার সবগুলোই সংশোধনযোগ্য। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীদের কেউই মনে করে না যে, চুক্তির যে অংশ লঙ্ঘিত হয়েছে তা গুরুতর। আর তাই তারা এ নিয়ে নতুন করে কোন বিতর্কে যাবে না, যাতে আরও বেশি নিষেধাজ্ঞার মুখে না পড়ে দেশটি।

ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে, ইরানের সঙ্গে সংকট সহজ করে পরমাণু চুক্তি টিকিয়ে রাখার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। এর আগে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেন, চুক্তি টিকিয়ে রাখার খুব ‘ছোট একটি সম্ভাবনা’ রয়েছে। পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে ইরানের এখনো অনেক সময় প্রয়োজন।

বৈঠকের আগে প্রকাশিত এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি চুক্তির পক্ষে নিজেদের সমর্থন জানান দেন।

ইরানের পরমাণু চুক্তি টিকিয়ে রাখা দরকার কেন?

বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিবেদক ফ্র্যাংক গার্ডনার বলেন, ইরান যদি পরমাণু অস্ত্র তৈরি নাও করে, কিন্তু যেকোনো সময় অস্ত্র তৈরি করতে পারে এমন সক্ষমতায় পৌঁছায় তাহলে সেটিকেও এর প্রতিবেশী দেশগুলো নিজেদের উপর বেশ বড় মাপের হুমকি হিসেবেই দেখবে। এ ধরনের অবস্থায় এসব দেশ নিজেরাও একটি করে পরমাণু অস্ত্র রাখতে চাইবে।

এক বিবৃতিতে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রতিপক্ষ সৌদি আরব স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে যে, পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ ইরানকে সহ্য করবে করবে না তারা। আর এ কারণেই, ব্রাসেলসের কূটনীতিকদের মতে, পরমাণু অস্ত্র সংগ্রহের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাবে।

বাস্তবে এর অবস্থা কেমন দাঁড়াবে?

গার্ডনার বলেন, খুব সম্ভবত, সৌদি আরব, তুরস্ক এবং মিশর এমন শক্তিশালী পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ দেশ হতে চাইবে, যা দিয়ে একটি পুরো শহর ধ্বংস করা সম্ভব। আর এটি হবে বিশ্বের এমন একটি অঞ্চলে যেখানে গত টানা ৭১ বছর ধরে সংঘাত চলছে।

সর্বশেষ, ইরান যদি পরমাণু অস্ত্র প্রস্তুত করেও তাহলে আশঙ্কা রয়েছে যে, হিজবুল্লাহর মতো সংগঠনের কাছে এটি দিয়ে দিতে পারে। আর একারণেই উপসাগরীয় অঞ্চলের বাসিন্দা না হলেও ইরানের পরমাণু চুক্তি যে কারো জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

চুক্তিটি নিয়ে কেন অনিশ্চয়তা?

২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে, তার পূর্বসূরি বারাক ওবামার শাসনামলে সই করা চুক্তিটি থেকে এক তরফা ভাবে বের হয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্র। বাকি দেশগুলো ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে এবং জানায় যে তারা চুক্তিতে অটল থাকবে।

দ্য মেইলে গত রবিবার ওয়াশিংটনে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতের ফাঁস হওয়া এক মেমো প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয় যে, ওবামার প্রতি আক্রোশের কারণেই পরমাণু চুক্তি বাতিল করেছেন ট্রাম্প।

চলতি মাসের শুরুর দিকে, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা নিশ্চিত করে যে, ইউরেনিয়াম মজুদের ক্ষেত্রে চুক্তিতে থাকা নির্ধারিত মাত্রা অতিক্রম করেছে ইরান। ইরান জানায়, ট্রাম্প চুক্তি বাতিল করার পর দেশটির উপর আবারও নিষেধাজ্ঞা বহালের প্রতিক্রিয়ায় এমন পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।

ঢাকা টাইমস/১৬জুলাই/একে