রাণীনগরে সেই বেড়িবাঁধটি এখন গলারকাঁটা

সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ)
 | প্রকাশিত : ১৬ জুলাই ২০১৯, ১৬:০১

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে ছোট যমুনা নদী। গত ২০১৭ সালে বেড়িবাঁধ ভেঙে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছিল রাণীনগর উপজেলা। চলতি বর্ষা মৌসুমে বাড়তে শুরু করেছে ছোট যমুনা নদীর পানি। বর্তমানে এই বাঁধটি উপজেলার মানুষের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।

আর এতেই চরম আতঙ্কে রয়েছে রাণীনগর উপজেলাবাসী। কারণ দীর্ঘদিন কোন সংস্কার না করায় উপজেলার ঘোষগ্রাম, নান্দাইবাড়ী, কৃষ্ণপুর এলাকার বেড়িবাঁধ চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

গত রবিবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা এই বাঁধ এলাকাটি পরিদর্শন করেন।

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদীর দুই ধারের মানুষদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়, কারণ কখন কোথায় বেড়িবাঁধ ভাঙবে তা কে জানে। নদীর পানি আটকানোর জন্য আশির দশকে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঘোষগ্রাম, নান্দাইবাড়ী, কৃষ্ণপুর এলাকায় স্থানীয় সরকারের সহায়তায় স্থানীয়রা তৈরি করেন বেড়িবাঁধ। এরপর থেকে সরকারের কোন দপ্তর এই বেড়িবাঁধের কোন সংস্কার করেনি।

কয়েক বছর আগে স্থানীয়রা বাঁশ ও বালুর বস্তা দিয়ে কোনমতে রক্ষা করে আসছে এই বাঁধটি। বর্তমানে এই বাঁধের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। নদীতে পানির প্রবাহ তেমন বৃদ্ধির আগেই ভাঙতে শুরু করেছে মাটির বড় বড় চাপ। ভাঙনের ফলে বাঁধের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মতো কোন রাস্তাও নেই। যে কোন সময় এই বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে রাণীনগর উপজেলার কয়েকশ গ্রাম আর শত শত বিঘা জমির ফসল। তবুও কোন দপ্তরের নজর নেই এই বাঁধের দিকে।

নান্দাইবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন, গফুর মিয়াসহ আরো অনেকেই অভিযোগ করেন, বর্ষার সময় আমাদের নির্ঘুম রাত কাটে এই বেড়িবাঁধটির জন্য। কারণ প্রায় ৩০ বছর পার হলেও কোন দপ্তরই এই বাঁধটির বিন্দুমাত্র সংস্কার কাজ করেনি। এমনকি কেউ কোন খবরও নেয়নি এই বাঁধের বিষয়ে। বাঁধটি যে কোন মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে। এখনই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

রাণীনগর উপজেলার ৩নং গোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত খাঁন হাসান বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখের বিষয় এই বাঁধটি কোন দপ্তরের আওতায় তাই এখনও জানতে পারিনি। এই বাঁধ নাকি কোন দপ্তরেরই নয়। তাই আমি সংস্কার কাজের আবেদন দেব কোন দপ্তরে। যোগাযোগ করব কোন দপ্তরের সঙ্গে। দপ্তরে দপ্তরে ঘুরে ক্ষয় করেছি কয়েক জোড়া জুতা, কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তাহলে সংস্কার করবে কে? আমাদের পরিষদেও তেমন কোন বরাদ্দ আর আসে না যে, সেখান থেকে কিছু দিয়ে কিছুটা সংস্কার করব। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল পর্যন্ত গিয়েছি, কিন্তু এই বাঁধের কোন মালিক না থাকায় কোন ফল পাইনি। শুধুমাত্র যখন বাঁধ ভেঙে যায়, তখন বড় বড় কর্মকর্তারা এসে বড় বড় আশ্বাস দিয়ে যায়। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বাঁধটি এখন মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে।’

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমরা বাঁধটি পরিদর্শন করেছি। আমরা চেষ্টা করব এই সময়ে বাঁধের কোন সংস্কার করা যায় কিনা। বিষয়টি আমি উর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ’

রাণীনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, ‘বাঁধটি এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ- কিন্তু বাঁধটি কোন দপ্তরের তা কেউ স্বীকার করছে না। আর এই বাঁধটি সংস্কার করার জন্য অনেক টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন যা আমার পরিষদের একার পক্ষে সরবরাহ করা অসম্ভব। তবে সব দপ্তর মিলে যদি পদক্ষেপ নেয়া যায়, তাহলে এই কাজটি করা সম্ভব।’

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘বাঁধটি আমরা নির্মাণ করিনি। তাই স্বাভাবিকভাবেই বাঁধটি আমাদের আওতায় পড়ে না। তবুও আমি বাঁধটি পরিদর্শন করার জন্য জনবল পাঠিয়েছি। পরির্দশনের প্রতিবেদন পেলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :