রাজন-সুমাইয়ার ফুলশয্যা ঘিরে এখন শোকের মাতম

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০১৯, ১৯:৫৫ | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৯, ২১:০০

রানা আহমেদ, সিরাজগঞ্জ

রাজনের বিয়ে উপলক্ষে সোমবার দিনভর সিরাজগঞ্জ সদরের কান্দাপাড়া গ্রামে আলতাফ হোসেনের বাড়িতে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। আত্মীয়-স্বজনের ভরপুর ছিল বাড়িটি। মুহূর্তের একটি দুর্ঘটনায় সেই বাড়িতে নেমে আসে শোকের মাতম। মঙ্গলবার ভোর থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভিড় করে এই বাড়িতে। সেখানে স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে আকাশ-বাতাস।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাড়িটিতে নিস্তব্ধ শোকাবহ পরিবেশ। চোখের পানি ঠেকাতে পারছেন না দূর-দূরান্ত থেকে আসা কেউই। সান্ত¦না দেয়ার ভাষা নেই কারও কাছে। শোকাবহ পরিবেশ দেখে অজান্তেই চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়ে অনেকের। 

কথা হয় চুনিয়াহাটি থেকে আসা রাজিয়া খাতুন, কালিয়ার আব্দুল শেখ, মাসুমপুর মহল্লার রাজু, রায়পুরের হাসিনা বেগমের সাথে। তারা বলেন, নাটক সিনেমা ছাড়া এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখিনি। আল্লাহ এমন শোক যেন আর কাউকে না দেন।

অথচ সোমবার সকাল থেকেই উৎসবে মাতোয়ারা ছিল বাড়িটি। অতিথিদের পদচারণায় মুখরিত ছিল বাড়ির আঙিনা। আলতাফ হোসেনের একমাত্র ছেলে রাজনের বিয়ের উৎসবে হাজির হয়েছিল বাবা-মায়ের দিকে সব আত্মীয়-স্বজন।

প্রতিবেশীরা বলেন, আলতাফ হোসেন একজন গরু ব্যবসায়ী। তার ছেলে রাজন টুইস্টিং মিলের শ্রমিক। বড় মেয়ে স্বর্ণা খাতুনের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে রূপা লেখাপড়া করছে। বাপ-বেটা মিলে সংসারটা ভালোই চালাচ্ছিলেন। সোমবার রাজনের বিয়ে ছিল উল্লাপাড়া উপজেলার এনায়েতপুর গুচ্ছগ্রামের মৃত গফুর শেখের মেয়ে সুমাইয়ার সাথে। বিয়ের জন্য দুপুরে দুটি মাইক্রোবাসে প্রায় ৩০ জন বরযাত্রী নিয়ে যান তারা। উৎসবমুখর পরিবেশে সেখানে বিয়েও হয়ে যায়। বর-কনে ‘কবুল’ বলে একে অপরকে জীবনসঙ্গী করে নেন। নব-দম্পতির চোখজুড়ে যখন একের পর এক সোনালী স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছিল নিয়তি তখন আড়াল থেকে মিটিমিটি হাসছিল।

কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে স্বপ্নগুলো পড়ে রইলো স্বপ্নের জায়গায়। রইলো না স্বপ্ন বোনার মানুষগুলো। ফেরার পথে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন বর-কনে দুজনেই। একই সঙ্গে প্রাণ গেল বিয়ে উৎসবের সফরসঙ্গী আটজনের। দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করতে হলো আরও চারজনকে। আর নিয়তির এ নিষ্ঠুর খেলায় বিয়ে হলেও ফুলশয্যা হলো না রাজন-সুমাইয়ার।

এ দুর্ঘটনায় আরও যারা প্রাণ হারান তারা হলেন, রাজনের মামা শামীম হোসেনের একমাত্র ছেলে বায়েজিদ ওরফে আলিফ (৯), রাজনের দূরসম্পর্কের দাদা কাজিপুরা গ্রামের ভাষান শেখ (৫০), তার ফুফুর শ্বশুর সদর উপজেলার রামগাঁতী গ্রামের আব্দুস সামাদ (৪৫), সামাদের ছেলে শফিউল ওরফে শাকিল (১৯), ধর্ম বোনের স্বামী সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার দিয়ার ধানগড়া মহল্লার আলতাফ হোসেনের ছেলে শরিফ হোসেন (৩২), চাচাতো ভগ্নিপতি রায়গঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণদিয়ার গ্রামের আলম মিয়ার ছেলে খোকন (২৪)। এছাড়াও গুরুতর আহত হয়েছেন রাজনের আপন ছোট বোন স্বর্ণা খাতুনের স্বামী সুমন (৩০)। নিহত বাকিরা হলেন, মাইক্রোবাস চালক নুর আলম স্বাধীন (৫৫) ও তার সহকারী আহাদ আলী (৪৫)।

(ঢাকাটাইমস/১৬জুলাই/জেবি)