শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার পেছনে মাদক ব্যবসায়ীরা!

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০১৯, ২১:৪৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
শ্রীলঙ্কায় বড়দিনের উৎসবে বোমা হামলা (ফাইল ছবি)

গত বছর খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডে (বড়দিন) উদযাপনের সময় শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে বিভিন্ন গির্জা ও হোটেলে আন্তর্জাতিক মাদক গোষ্ঠী সুপরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপাল সিরিসেন এ দাবি করেন। তবে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংগ প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে সম্পূর্ণ বিশ্বাস না করতে জনগণকে অনুরোধ করেন। 

বোমা হামলার ঘটনায় ২৯০ জন নিহত হয়। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতিও মারা যায়।

প্রেসিডেন্ট বিবৃতিতে বলেন, ‘আমার ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা ও শ্রীলঙ্কায় মাদক নির্মূলকে নিরুৎসাহিত করতে অভিজাত মাদক ব্যবসায়ীরা বোমা হামলা করে। কিন্তু আমি মাদক নির্মূল কার্যক্রম থেকে পিছপা হবো না।’

যদিও বোমা হামলার পরদিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘এ ঘটনার জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়ী।’ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, শ্রীলঙ্কার স্থানীয় সন্ত্রাসী দল ন্যাশনাল তওহিদ জামাত (এনটিজে) বোমা হামলা ঘটায়। পরবর্তী সময়ে দাহেশ গ্রুপ নামক আরেকটি দল বোমা হামলা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার দাবি করে।

প্রেসিডেন্ট তার ঘোষণাটি এমন সময়ে বলেছেন, যখন শ্রীলঙ্কায় চেতনানাশক মাদক অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট মাদকের সাথে জড়িত অপরাধীদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান চালুর পক্ষে কাজ করছেন।

প্রেসিডেন্ট মৃত্যুদণ্ডের বিধান পুনরায় চালু করতে চেষ্টা করছেন। এ বিধানের পক্ষে জনগণের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। তার মতে, শ্রীলঙ্কায় অবৈধ মাদক বাণিজ্য নির্মূলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান সাহায্য করবে। শ্রীলঙ্কার নেতৃস্থানীয় সন্নাসী উমালপি সোবিথা মৃত্যুদণ্ডের বিধান পুনরায় চালু ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার উপদেশ দেন বলেও উল্লেখ করেন।

পুলিশ তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে জানায়, বড়দিনে বোমা হামলার ঘটনায় তদন্ত চলছে। ১০০ জনের বেশি সন্দেহকারী জেলে আটক আছে।

পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, `প্রাথমিকভাবে শ্রীলঙ্কার স্থানীয় কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ঘটনার সাথে জড়িত এ নীতিতে তদন্ত পরিচালনা করছি। বোমা হামলার সাথে জড়িতরা হয় মৃত অথবা তাদের কারাগারে আটক আছে।‘

প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের সাথে সরকারের তথ্য বিভাগের পরিচালকও দ্বিমত পোষণ করেন। জেনারেল সুদর্শন গুণভারদান এএফপিকে বলেন, `আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পুলিশ তদন্ত শেষ করবে। ঘটনার তদন্তে মাদক ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমরা তদন্ত দলের প্রতিবেদনে অবিশ্বাস করতে পারি না।’

সুদর্শন গুণভারদান আরও বলেন, ‘মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি নিশ্চিতের জন্য দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে। মাদক নির্মূলের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান কার্যকর করা প্রয়োজন, তা আমরা বিশ্বাস করি না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, একটি মামলা নিষ্পত্তি হতে কয়েক দশক সময় লাগে।’ প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহ তার দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির নীতি বিরুদ্ধ হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিরোধী।

সাধারণত শ্রীলঙ্কার আদালতে মামলার রায় নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা রয়েছে। হত্যা ও ধর্ষণের অভিযুক্তদের মামলা নিষ্পত্তিতে গড়ে ১৭ বছর সময় লাগে।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৃত্যুদণ্ডের বিধান পুনরায় চালুর পক্ষে সরকারের কোনো সমর্থন পাচ্ছেন না। অনেকে অভিযোগ করেছেন, মৃত্যুদণ্ডের বিধান পুনরায় চালুর জন্য সরকারের সমর্থন না পাওয়ায় প্রেসিডেন্ট ঘটনার সাথে মাদক ব্যবসায়ীরা জড়িত বলে বক্তব্য দিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার সরকার মৃত্যুদণ্ডের পুনরায় চালু না করলে, তিনি একদিনের জন্য জাতীয় শোক ঘোষণা করবেন।

(ঢাকাটাইমস/১৬জুলাই/আরআর/জেবি)