ভয়াবহ ভাঙন: আতঙ্কে যমুনাপারের মানুষ

প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০১৯, ০৮:২৯

রেজাউল করিম, টাঙ্গাইল

বর্ষার শুরুতেই টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা বানের পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে যায় দুপারের বসত বাড়ি। এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি যমুনায়। গত দু-সপ্তাহ ধরে প্রমত্তা যমুনার সেই ভযংকর রূপ দেখা যাচ্ছে। পাড় ভেঙে যমুনাগর্ভে যাচ্ছে প্রতিদিন। এতে গৃহহীন হচ্ছে যমুনা পূর্ব পাড়ের মানুষ। নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, গাবসারা ও অর্জুনা ইউনিয়নের শতাধিক বড়-ছোট পাকা ও আধাপাকা স্থাপনাসহ ঘর বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। আরও তিন শতাধিক ঘর-বাড়ি যমুনার ভাঙনের কবলে রয়েছে।

উপজেলার গোবিন্দাসী থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত প্রায় ১৮টি বালুর ঘাট তৈরি করেছে ক্ষমতাশীল বালু ব্যবসায়ীরা। এই ঘাট থেকে শত শত ট্রাকযোগে সরকারি রাজস্ব ছাড়াই বালু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া যমুনা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ভিট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

ভূঞাপূরের ছয়টি ইউনিয়নের চারটি ইউনিয়নই যমুনা ঘেরা। ২০১১ সালে গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়িসহ কয়েকটি গ্রামে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। যা বর্তমানে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদীতে এই ভাঙনরোধে স্থানীয়রা একাধিকবার মানববন্ধন, স্মারকলিপিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। যদিও এসব কর্মসূচি পালনের ফলাফল শূন্য। এত কর্মসূচি পালনের পরেও এখন পর্যন্ত নদী ভাঙনরোধে কার্যক্রর কোনো উদ্যোগ নেয়নি টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই উপজেলার চারটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ ভাঙন কবলে পড়েছে।

গত কয়েক বছরে যমুনা নদীর ভাঙনে বেশ কয়েকটি গ্রাম মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। ভেঙে গেছে গোবিন্দাসী থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু গাইড বাঁধ। এছাড়া প্রতি বছরই নতুন নুতুন এলাকায় আঘাত করছে প্রমত্তা যমুনা। এতে গৃহহীন হচ্ছে শত শত পরিবার। যমুনা নদী অব্যাহত ভাঙনে ক্রমশ পূর্বদিকে ধাবিত হচ্ছে। মুল নদীতে জেগে উঠছে বিশাল বিশাল চর। যদিও ভাঙন কবলিত মানুষের দাবি অব্যাহতভাবে যমুনা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। এতে নদী কয়েকটি চ্যানেলে রূপ নিচ্ছে।

খানুরবাড়ি গ্রামের আল মামুন বলেন, ত্রিশ বছরের অধিক সময় ধরে এখানে বসবাস করছি। গত বছর বাড়ির কিছুটা অংশ ভেঙে গেছে। এবছরও বাড়ির অর্ধেক যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাড়ি হতে নদীর দূরত্ব ছিল প্রায় তিন কিলোমিটার। নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এমন ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।

ভাঙন কবলিত অনেকেই জানান, সম্প্রতি যমুনাপারের খানুরবাড়ি, কষ্টাপাড়া ও ভালকুটিয়া গ্রামের ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। একদিকে অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন অন্যদিকে নদী শাসন বা খনন না করায় যমুনা নদীতে ভাঙন অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

এদিকে প্রতি বছরই যমুনা ভাঙনরোধে জোরালো কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে কিছু জিওব্যাগ ফেলে দায় সাড়ার অভিযোগ রয়েেেছ। চলতি বছরে যোগ হয়েছে বালুর পরিবর্তে মাটি ও ঘাস ভরে জিওব্যাগ ফেলা। টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ড এক কিলোমিটার ভাঙন এলাকার মধ্যে ৭৫ মিটার এলাকায় ভাঙনরোধে ৫০ লাখ টাকার প্রকল্প দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জিওব্যাগ ফেলছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, যমুনা নদীতে জিওব্যাগ ফেলানো হচ্ছে তা নি¤œমানের। বালুর পরিবর্তে মাটি ও ঘাস দিয়ে ভর্তি করা হয়েছে জিওব্যাগ। একটি চর থেকে মাটি কেটে ওই ব্যাগগুলো ভর্তি করা হচ্ছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আল আমিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কিছু কিছু নৌকায় জিওব্যাগে মাটি ও ঘাস পাওয়া গেছে। সেগুলো পরিবর্তন করা হচ্ছে।’

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট আব্দুল লতিফ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জিওব্যাগে মাটি ও কিছু ব্যাগে ঘাস পাওয়া গেছে। সেগুলো পরিবর্তনের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে।’

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মফিদুল ইসলাম মজনু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সঠিক জিওব্যাগে বালু ভর্তি করে ভাঙন এলাকায় ফেলানো হচ্ছে। কিছু কিছু নৌকায় জিওব্যাগে একটু সমস্যা আছে সেগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।’

জিওব্যাগ দিয়ে অস্থায়ী প্রতিরোধ না করে স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান স্থানীয়রা।

(ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/জেবি)