এজলাসে হত্যায় পুলিশের গাফিলতি ছিল: হাইকোর্ট

প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০১৯, ১৮:৩৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
কুমিল্লায় এজলাসে হত্যা (ফাইল ছবি)

কুমিল্লায় আদালতের এজলাসে বিচারকের সামনেই ছুরিকাঘাতে এক যুবককে হত্যার ঘটনায় নিশ্চিতভাবেই পুলিশের গাফিলতি ছিল বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাইকোর্ট। উচ্চ আদালত বলেছে, কুমিল্লার আদালতের এজলাসে ছুরি নিয়ে ঢুকে যায় লোকজন। সেটা ধরা পড়ে না। পুলিশের কাজ কী? পুলিশ কী করে? যেখানে বিচারকদের নিরাপত্তা নেই সেখানে ন্যায়বিচার আসবে কীভাবে।

বুধবার এ সংক্রান্ত একটি রিট আবেদন নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব কথা বলেন। এরপর এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৩০ জুলাই পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন আদালত।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার এক হত্যা মামলায় জামিনে থাকা দুই আসামি হাসান ও ফারুক গত সোমবার হাজিরা দিতে আসেন, যারা সম্পর্কে মামাতো ফুপাতো ভাই। ওই হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে আগে থেকেই বিরোধ ছিল। এর জের ধরে হাসান আদালত কক্ষেই ফারুককে ছুরি মারেন। আহত ফারুককে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

কুমিল্লার আদালতে ছুরিকাঘাতে আসামি নিহত হওয়ার পর বিচারকদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত চেয়ে করা রিটটি আইনজীবী ইশরাত জাহান। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নিজে একজন বিচারকের স্ত্রী।

আদালত প্রশ্ন তুলেছেন, আদালতে কী নিরাপত্তা দিচ্ছে পুলিশ। জজ সাহেবদের নিরাপত্তা কোথায়? বিচারক, আইনজীবী ও আদালতের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

সারা দেশের আদালতে আইনজীবী, বিচারক ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে কুমিল্লার ঘটনায় যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাও জানাতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে নির্দেশ দেন আদালত।

গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে হত্যা মামলার এক আসামি জামিন নেওয়ার পর তার ওপর বাদীপক্ষের লোকজন হামলা করে। আসামির উকিলও সেখানে আক্রান্ত হন। পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে।

আদালত বলেন, কুমিল্লার পর ১৬ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট বারেও ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় কোর্টে আইনজীবী, জাজ ও কর্মকর্তাদের সিকিউরিটির জন্য কী পদক্ষেপ নিলেন। তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, কুমিল্লা এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের দুটি ঘটনাই ব্যক্তিগত। এ সময় আদালত বলেন, ব্যক্তিগত হোক যাই হোক। কোর্টের ভেতরে ছুরি নিয়ে কীভাবে যায়? পুলিশ কী করে? ডেফিনেটলি এটা পুলিশের নেগলিজেন্সি।

তখন আবেদনকারী আইনজীবী বলেন, নিরাপত্তা তো সবার জন্য। উনিও (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) এমন পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন। তাই আইনজীবী, বিচারকসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

গতকাল আদালতে রিটের ওপর শুনানিতে ইশরাত নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

আদালত ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের আদালতগুলোতে আইনজীবী, বিচারক ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং কুমিল্লার আদালতে ঘটনার দিন ওই সেখানে যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দেয়। মন্ত্রী পরিষদ, আইন, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র‌্যাব মহাপরিচালককে সেখানে বিবাদী করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/ডিএম/জেবি)