চোখের জলে সার্জেন্ট কিবরিয়াকে শেষ বিদায়

সহকর্মী, বন্ধু, আত্মীয় স্বজনদের চোখের জলে তিনদফা জানাজা শেষে সমাহিত করা হল যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যানের চাপায় নিহত ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়াকে।

বুধবার দুপুরে কিবরিয়ার জন্মস্থান পটুয়াখালীর সুবিদখালী র.ই সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে তার তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজায় ইমামতি করেন চতরা ওলামা মঞ্জিল সালেহিয়া দিনিয়া কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা মাও. মো. মোতাহার হোসাইন সুফী সাহেব। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। এ সময় স্বজন ও সহকর্মীদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

এর আগে সকাল ৮টার দিকে ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার মরদেহ বরিশাল নগরীর পুলিশ লাইন্স মাঠে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তার স্ত্রী ট্রাফিক সার্জেন্ট মৌসুমি আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বিলাপ করতে থাকেন মৌসুমি আক্তার। স্ত্রী ও স্বজনদের কান্নায় সেখানে এক বেদনাদায়ক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সময় তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। সবার মুখে ছিল একটাই কথা, এ ধরনের মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। তারা ঘাতক চালকের কঠোর শাস্তি দাবি করেন।

পুলিশ লাইন্স মাঠে জানাজা শুরুর আগে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় মারা গেছেন ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া। তার মৃত্যুতে শুধু বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ নয়, গোটা বাহিনী শোকাহত। পরে তিনি গোলাম কিবরিয়ার জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন। এরপর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর দফতর) হাবিবুর রহমান খান, জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম, উপ-পুলিশ কমিশনার (বিশেষ শাখা) আবু রায়হান সালেহ, উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মেয়াজ্জেম হোসেন ভুইঞা, উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. মোকতার হোসেন, উপ- পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. জাহাঙ্গীর মল্লিকসহ সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্খী ও দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা অংশ নেন।

জানাজা শেষে গোলাম কিবরিয়াকে গার্ড অব অনার ও সশস্ত্র সালাম জানায় মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। এরপর গোলাম কিবরিয়ার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় তাকে এক নজর দেখার জন্য মাঠে অপেক্ষারত মানুষ কফিনের কাছে ভিড় করেন।

মাঠে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পটুয়াখালীতে নিজ বাড়ির উদ্দেশে মরদেহ নিয়ে রওনা হন স্বজনরা। এ সময় চোখের জলে গোলাম কিবরিয়াকে কর্মস্থল থেকে শেষবিদায় জানান বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্খী ও দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা।

এর আগে মঙ্গলবার বাদ আসর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

সোমবার সকালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া। এ সময় কাভার্ডভ্যানচালক জলিল মিয়া মোটরসাইকেল আরোহী সার্জেন্ট কিবরিয়াকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যান। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে চালক ও কাভার্ডভ্যানটি আটক করে পুলিশ। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে।

পরে কিবরিয়ার অবস্থার অবনতি হওয়ায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। পরে মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু হয়।

নিহত সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া প্রায় সাড়ে ৪ বছর ধরে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী ইউনিয়নে। তার বাবা ইউনুস সরদার সুবিদখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। কিবরিয়ার দুই বছরের ওহি নামের একটি সন্তান রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/বিইউ/ইএস)