‘রাজনৈতিক পৌরসভা’ এবার গলার কাঁটা

প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০১৯, ২০:১৫ | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯, ২১:২০

নজরুল ইসলাম

পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে শতভাগ বেতন-ভাতাসহ পেনশন চান। এ জন্য তারা কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলনে নেমেছে। এখনও আন্দোলন চলছে। তাদের এই আন্দোলন অযৌক্তিক মনে হচ্ছে কর্তৃপক্ষের। খোদ তাদের দেখভাল করা স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানিয়ে দিয়েছেন, আয়ে অক্ষম পৌরসভা চান না।

রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সর্বশেষ গত রবিবার থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবস্থান নিয়েছেন।

তাদের এই আন্দোলনে দেশের ৩২৮টি পৌরসভায় তিন দিন ধরে দাপ্তরিক ও সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌরসভার বাসিন্দারা।

টানা চার দিন ধরে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না করায় শহরের অলিগলিতে জমেছে ময়লার স্তূপ। সড়কবাতি না জ্বলায় ঘুট ঘুটে অন্ধকার পৌর এলাকায়। টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। কর সংগ্রহ, নাগরিক সনদ প্রদান, ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ দৈনন্দিন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেবাগ্রহীতারা ফিরে যাচ্ছেন।

গতকাল জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের চতুর্থদিনের দ্বিতীয় কার্যঅধিবেশনে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকরা পৌরসভা প্রসঙ্গে সরকারের সিদ্ধান্ত জানতে চান।

জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সক্ষমতা না থাকলে পৌরসভা হিসেবে থাকা ঠিক নয়। কোনো পৌরসভাই আমার মনে হয় পৌরসভা হিসেবে থাকবে না, যদি তাদের আয় ও ব্যয় নির্বাহ করার সক্ষমতা না থাকে অথবা তারা যদি করতে না পারে। তাদের ব্যর্থতার জন্য পৌরসভার কর্মচারীরা সাফার করবে আমরা মনে করি বিষয়টি এভাবে দেখা ঠিক হবে না।’

পৌরসভা স্থাপনের কিছু শর্ত আছে। কোনো এলাকাকে পৌরসভা ঘোষণা করতে হলে কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত হতে হয়। প্রথমত, এলাকার তিন-চতুর্থাংশ ব্যক্তিকে অকৃষি পেশায় নিয়োজিত হতে হবে; দ্বিতীয়ত, ৩৩ শতাংশ ভূমি অকৃষি প্রকৃতির হতে হবে; তৃতীয়ত, প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব এক হাজার ৫০০ এর কম হতে পারবে না; চতুর্থত, এলাকার জনসংখ্যা ৫০ হাজারের কম হবে না। কিন্তু শতাধিক পৌরসভা আছে, যেগুলোর ক্ষেত্রে এসব শর্ত মানা হয়নি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সরকারি ব্যয় পর্যালোচনা কমিশন দেশের ৭৩টি পৌরসভা বাতিলের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সেগুলো বাতিল হয়নি, বরং এর পরেও তৈরি হয়েছে বহু পৌরসভা। এগুলো ‘রাজনৈতিক পৌরসভা’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

এমনও দেখা গেছে দেড় বা দুই হাজার ভোটে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এসব পৌরসভার নিজেদের আয় নেই, কিন্তু সরকারও পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয় না। আর এ জন্য কর্মীরাও বিশেষ করে যারা মাস্টার রোলে কাজ করেন ঠিক মতো বেতন ভাতা পান না। এরাই এবার আছেন আন্দোলনে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার কথা বলা হয় এবং এটি করতে হলে তাদের ইনকাম জেনারেশন করতে হবে এবং তাদের সক্ষম হতে হবে। তারা আয় করবে এবং ব্যয় করবে এই আদলে পৌরসভা গঠিত হয়েছে।’

বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে কয়েকশ পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী এখনও অবস্থান করছে। তারা সেখানে ‘মাস শেষে বেতন নাই, এ কেমন চাকরি ভাই’, ‘দেখ কত জ্বালা, পৌরসভায় তালা’ নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন।

আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পৌরসভার কর্মকর্তা, কর্মচারীদের শতভাগ বেতন-ভাতাসহ পেনশন চালু না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেও হুমকি দিয়েছে।

আন্দোলন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘সে আয় তারা করবে না আর এখানে এসে আন্দোলন করবেন, এটা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না। দেশ পরিচালনার ব্যবস্থাপনার জন্য সঙ্গতিপূর্ণ না।’

তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাদের বিষয়টি দেখারও আশ^াস দেন। তিনি বলেন, ‘তারপরও তাদের বিষয়টি আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখব আমাদের যদি সাহায্য করার কোনো সুযোগ থাকে। তাদের আপৎকালীন কোনো সহযোগিতা করা যায় কিনা তা আমরা দেখছি।’

পৌরসভায় স্থায়ী ও মাস্টাররোল মিলিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছেন ৩৫ হাজারের বেশি। সরকার ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অনুন্নয়ন বাজেটের আওতায় দেশের পৌরসভাগুলোর বেতন-ভাতা খাতে ১৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছিল, যা চাহিদার এক শতাংশের কম।

ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/ডিএম