৮৮ সালের বন্যা ছাড়িয়েছে যমুনার পানি

প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০১৯, ২৩:০১

সাইমুম সাব্বির শোভন, জামালপুর থেকে

জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ত্রিশ বছরের রেকর্ড ভেঙে বিপৎসীমার ১৬২ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে বইছে যমুনার পানি।

১৯৮৮ সালে বন্যার সময় বিপৎসীমার ১২২ সে.মি ও ২০১৭ সালে বিপৎসীমার ১৩৪ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল যমুনা।

আর বুধবার (১৭জুলাই) বিপৎসীমার ১৬২ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী বলেন, এই মাত্রা ১৯৮৮ সালের বন্যার সময়ের চাইতে ৪০ সেন্টিমিটার বেশি।

এদিকে প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে পানি। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় বাড়ছে বানভাসীর সংখ্যা। বন্যার প্রবল পানির তোড়ে ভেসে গেছে ঘরবাড়ি, গৃহপালিত পশুপাখিসহ সহায় সম্পদ। সেই সাথে ভেসে গেছে ধান চালসহ খাদ্যসামগ্রী। অনেকেই বসত ভিটার মায়া ছাড়তে না পেরে ঘরের ভিতর মাচা করে, কেউবা টিনের চালে আশ্রয় নিয়েছেন। খাদ্য, চিকিৎসা ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে পানিবন্দি মানুষেরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ত্রাণ পেতে অপেক্ষায় প্রহর গুণছে দুর্গত এলাকায় আটকে পড়া মানুষেরা। অনেকেই নৌকা ও ভেলায় পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটছে একটুখানি আশ্রয়ের খোঁজে। অপেক্ষাকৃত উঁচুস্থান ও সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনাতে আশ্রয় নিলেও সেখানেও পানি ঢুকে পড়ায় নতুন করে আশ্রয়ের সন্ধানে দিগি¦দিক ছুটছে বানভাসীরা।

ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়নের পূর্ব বলিয়াদহ গ্রামের ৬০ বছর বয়সী আবুল হোসেন জানান, পানির ধাক্কায় ঘরে বছরের মজুদ রাখা বেড়ের ধান, আলু-পিয়াজসহ সবকছিু ভেসে গেছে। তার সাথে ভেসে গেছে ১০টি মুরগি। ঘরটিও ভেঙ্গে যাওয়ার অবস্থা। ভয়ে বাড়ির সবাইকে নিয়ে নৌকা দিয়ে পারে উঠেছে। আজ খোলা আকাশেই রাত কাটাতে হবে তাদের।

জেলার সাত উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫২টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে প্রায় চার লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার ৬ উপজেলায় ৩ লাখ মানুষ।
ত্রাণ সংকট পুরো বন্যা কবলিত এলাকাজুড়ে। ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে বানভাসীদের মধ্যে।

চিনাডুলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে লুৎফর রহমান। তিনি এ প্রতিবেদককে ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করে বলেন, কয়েকদিন থেকে খাবার সংকটে রয়েছেন তারা। এই পর্যন্ত কোনো ত্রান পাননি।

দুর্গত এলাকায় বরাদ্দকৃত ত্রাণসামগ্রী প্রয়োজনের তুলনায় যৎ সামান্য। এই নিয়ে মুখ খুলেন ইসলামপুরের চিনাডুলি ইউনিয়নের চেয়ারমান আব্দুস ছালাম। তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ খুবই কম। এত অল্প ত্রাণ দিয়ে ব্যাপক দুর্গত মানুষের চাহিদা মেটানো অসম্ভব। ইউনিয়নের সকল লোকই পানিবন্দি। এত অল্প ত্রাণ দিয়ে পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কপালে জোটে দুর্গতদের গালাগালি আর মেরে দেওয়ার অপবাদ। জেলা প্রশাসনের প্রতি ত্রাণের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

আটকেপড়া বানভাসীদের দ্রুত উদ্ধার তৎপরতার আশ^াস দেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবির। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সংকট নিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিনই ত্রাণের বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে এবং অব্যাহত থাকবে।

ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/ইএস