ফরিদপুরে পদ্মার পানি বাড়ছেই, ডুবছে নিম্নাঞ্চল

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৯, ১৮:৩৭

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ফরিদপুরের দিকে দ্রুত গতিতে তেড়ে আসছে বন্যার পানি। প্রতি মিনিটে মিনিটে গোয়ালন্দ পয়েন্টে বাড়ছে পদ্মা নদীর পানি। বর্তমানে বিপৎসীমার ৩৪ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মার পানি। এর ফলে বন্যার আশঙ্কা করছেন জেলাবাসী।

ফরিদপুরের চরবাসী জানান, আগামী দুই দিন এই গতিতে পানি বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধরাণ করবে।
গোয়ালন্দ পয়েন্টের গেজ রিডার ইদ্রিস আলী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ওই পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি আরও ২৪ সেমি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ওই পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার (৮ দশমিক ৬৫) ৩৪ সে. মি (৮ দশমিক ৯৯) উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের কাইমদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামে গিয়ে দেখা যায় ওই এলাকার যোগযোগের একমাত্র কালুর বাজার থেকে পান্নুর দোকন পর্যন্ত সোয়া কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পাকা সড়কে এক কিলোমিটার অংশ তলিয়ে গেছে। তার মধ্যে দিয়েই শিক্ষার্থী ও পথচারীরা চলাচল করছে।

কাইমদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্রী আয়শা পারভীন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথে রাস্তায় পানি উঠে যাওয়ায় যাতায়াতের সমস্যার কথা উল্লেখ্য করে বলেন, যেভাবে পদ্মার পানি বাড়ছে তাতে আজ হয়তো স্কুলে যেতে পারলাম, কাল কি হবে বলতে পারছি না। পানিতে স্রোতও অনেক বেশি।

একই এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ মাজেদা বেগম (৫৩) বলেন, দুই-তিন দিনের পানি বেড়ে যাওয়ায় ছোট ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। এখন যাদের নৌকা নাই তারাতো বাজারেরও যেতে পারছে না।

ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান জানান, বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ইউনিয়নের কাইমদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামে কালুর বাজার থেকে পান্নুর দোকন পর্যন্ত সোয়া কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পাকা সড়কে এক কিলোমিটার অংশ তলিয়ে গেছে। এছাড়া মনসুরাবাদ এলাকায় মনসুরাবদ মোড় থেকে রিয়াজউদ্দিনের বাড়ি পর্যন্ত ইট বিছানো সড়কটির অর্ধ কিলোমিটার তলিয়ে গেছে।

মোস্তাকুজ্জমান আরও বলেন, হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের চর নটাখোলা, কবিরপুর, নর্থ চ্যানেল ও ৪২৩৮ দাগ গ্রামের ৩০০ একর আউশ ধান ও ভুট্টো পানিতে তলিয়ে গেছে।

ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ইউনিয়নের কাইমুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী, পরান বিশ্বাসের ডাঙ্গী, আয়জদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী ও শুকুর আলীর ডাঙ্গী গ্রামের সাড়ে তিনশ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

এ ব্যাপারে জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান জানান, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে সদরপুর উপজেলার ৪৫ এবং ভাঙ্গা উপজেলার ১৪টি পরিবার। তাদের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বিষয়টি তদারকিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনিটরিং সেল চালু করা হয়েছে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেরা প্রশাসক (সার্বিক) রোকসানা রহমান বলেন, ফরিদপুর এখনও বন্যা কবলিত জেলায় পরিণত হয়নি। তবে পানি বাড়ায় এ জেলার চারটি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ৫০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তিনি জানান, দুর্গতদের সাহায্যের জন্য ফরিদপুর সদর ও সদরপুরে ১৫ মেট্রিক টন করে, চরভদ্রাসনে ১০ মেট্রিক টন এবং ভাঙ্গায় ২ মে.টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ওই চার উপজেলার সরকল সরকারি কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, বন্যার সময় আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও সংশ্লিষ্ট স্কুল ও মাদ্রাসাগুলো খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলায় মোট ৯২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানান ফরিদপুরের সিভিল সার্জন এনামুল হক।

ঢাকাটাইমস/১৮জুলাই/ইএস