বন্যায় ভাসছে যমুনার পাড়

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৯, ২১:০৫

রেজাউল করিম, টাঙ্গাইল

কয়েকদিনের অতিবৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পানিতে যমুনার পানি এখন বিপৎসীমা ছাড়িয়ে ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে যমুনা তীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে প্লাবিত অঞ্চলও বাড়ছে।

অন্যদিকে যমুনার পানি বাড়ায় ঝিনাই, বংশাই ও ধলেশ্বরীর নদীতেও পানি বেড়েছে। এতে জেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার পরিবার এখন পানিতে ভাসছে। এসব পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। বানভাসীদের অধিকাংশ যমুনা তীরবর্তী এলাকার। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্য সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার মানুষ। ঘর-বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় অনেকে গবাধি পশু ও পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁধ ও উঁচু বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইল অংশে বৃহস্পতিবার যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরও দুই দিন এ নদীতে পানি বাড়ার পূর্বাভাস রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক দিনের নদী ভাঙনে ইতোমধ্যে জেলার ভূঞাপুরের গোবিন্দাসীর ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার গৃহহীন ও অর্জুনা ও গাবসারা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও টাঙ্গাইল সদরের মাহমুদ নগর, নাগরপুর উপজেলার কয়েকশ’ পরিবার ও মির্জাপুরের বংশাই নদীর তীরবর্তী এলাকার বেশ কয়েকটি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।

তাদের অভিযোগ, ভাঙন রোধে কার্যকর কোনও উদ্যোগ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এদিকে বুধাবার রাতে ভূঞাপুরের তারাই এলাকায় বাঁধ ভেঙে নতুন করে আরও প্রায় ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক।

ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুনিরুজ্জামান মনির বলেন, গাবসারা ইউনিয়ন পুরোটাই চরাঞ্চল। বন্যার কারণে পুরো ইউনিয়নের সব গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। এতে বেশ কয়েকটি গ্রাম পুরোপুরি তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোন ধরনের ত্রাণ সহায়তা পাওয়া যায়নি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, জেলার ১১৭৫ হেক্টর জমির বোনা আমন, ৩৩ হেক্টর জমির রোপা আমন বীজতলা, ৬০৮ হেক্টর জমির আউশ এবং ৯৬ হেক্টর সবজি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল আজিজ জানিয়েছেন, রাস্তাঘাট ও বিদ্যালয় মাঠে পানি উঠাতে ৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।

অপরদিকে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম জানিয়েছেন, বন্যায় ৯টি উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। তবে বিদ্যালয়ের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন উভয় শিক্ষা কর্মকর্তা।

এদিকে টাঙ্গাইলে চলতি সপ্তাহে বানের পানিতে ডুবে চারজনের মৃতের সংবাদ জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলার কালিহাতী উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের চরদুর্গাপুর গ্রামের আবু সাঈদের দুই মেয়ে তানজিলা (৮) ও লিমা (৫) বানের পানিতে ডুবে মারা গেছে।

গত বুধবার একই উপজেলার পাকুটিয়া গ্রামে ঝিনাই নদীতে ডুবে কেরামত ওরফে কিপু (৭৫) নামে এক বৃদ্ধ নিখোঁজের প্রায় ৭ ঘণ্টা পর তার লাশ উদ্ধার করে ডুবুরি দল।

নিহত কিপু ওই গ্রামের মৃত কলিম উদ্দিনের ছেলে।

গত মঙ্গলবার বিকালে ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের বিদ্যুৎ মিয়ার এক বছর বয়সী ছেলে পানিতে পড়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে যমুনা, পুংলী, ঝিনাই, বংশাই ও ধলেশ্বরীর নদীতে পানি বেড়েছে। এর মধ্যে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯১ সে.মি., ধলেশ্বরী নদীর দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন ব্রিজের এখানে বিপৎসীমার ৮৯ সে.মি. এবং ঝিনাই নদীর কালিহাতী উপজেলার যোকারচর এলাকায় বিপৎসীমার ৪৫ সে.মি. উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও বাকি দুটি নদী পুংলী ও বংশাই নদী বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। আগামী দুই দিন পানি আরও বাড়তে পারে বলেও তিনি জানান।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোশারফ হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যায় বড় ধরনের ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। বন্যাকবলিতদের জন্য ২০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ তিন লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তা বিতরণ প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আরও তিনশ’ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/১৮জুলাই/নিজস্ব প্রতিবেদক/এলএ)