‘দাবি আছে মানলাম, শহীদ মিনারে যান, রাস্তায় কেন’

প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০১৯, ০৮:৫৪

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
বৃহস্পতিবার শাহবাগে ঢাবি শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

‘রাস্তায় সুস্থ মানুষ যেমন চলে, অসুস্থ ও বৃদ্ধ মানুষও বের হয়। যদি হাসপাতালের সামনের রাস্তা বন্ধ করে বসে থাকেন রোগীরা যাবে কই।’ কথাগুলো শাহবাগে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকে বের হয়ে সিএনজির জন্য অপেক্ষায় থাকা একজন রোগীর স্বজনের। রাজধানীর সাতটি কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো বৃহস্পতিবারও শাহবাগ চৌরাস্তায় অবস্থা নিয়ে বিক্ষোভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যে কারণে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে বাইরে বের হওয়া সাধারণ মানুষকে পড়তে হয়েছে দীর্ঘ যানজটের কবলে।

প্রায়ই নানা সময় বিভিন্ন সংগঠন তাদের নিজেদের নানা দাবি আদায়ের কৌশল হিসেবে প্রায়ই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে। নিত্য যানজটের এই নগরে কোনো প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকা মানেই দুর্ভোগ। দিনভর এমনকি গভীর রাতেও রাস্তায় থাকে ঘরমুখো মানুষ। দিনভর ব্যস্ততার পর বাড়ি ফিরতে ক্লান্ত মানুষ মেজাজ হারাচ্ছেন বলেও গবেষণায় দেখা গেছে।  

আগের দিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মিছিল করে পরে শাহবাগে জড়ো হয় ছাত্রছাত্রীরা। বন্ধ হয়ে যায় শাহবাগের চারদিকের সড়কে যান চলাচল। ফলে প্রখর রোদের মধ্যে গাড়িতে বসে থেকেই সময় পার করেন এই রুটের যাত্রীরা।

এদিকে দুর্ভোগ কমাতে বিশেষ করে শাহবাগ-প্রেসক্লাবের বিকল্প ভেন্যুতে আন্দোলনের পরামর্শ দিয়েছেন দুর্ভোগে পড়া একাধিক পথচারী। নানা সময় যারা সড়ক আটকে কর্মসূচি করেন তাদের দাবির প্রতি সহমর্মিতা থাকলেও দুর্ভোগ মানতে নারাজ তারা।

সাধারণ মানুষ সরকারের পক্ষ থেকে এসব আন্দোলনকারীর সঙ্গে সময়মত বসে সমস্যা সমাধান করার তাগিদও দিয়েছেন। বলছেন, নগরবাসীকে অযাচিত কষ্টের হাত থেকে রক্ষা করতে কম দুর্ভোগ হয় এমন স্থানে কর্মসূচি পালন করা উচিত।

এজন্য ছাত্রদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে, শ্রমিকদের বাসস্ট্যান্ডে, অন্যদের হোক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় কর্মসূচি পালনের ব্যবস্থা করার কথা বলছেন অনেকে।

পল্টনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী শহিদুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রাস্তা বন্ধ করে দেবেন যখন তখন এটার কোনো যুক্তি নাই। সমস্যা আপনার, দুর্ভোগে আমরা থাকব কেন। এর সমাধান চাই।’ফার্মগেট থেকে কখনো হেঁটে, একটু বাসে সব মিলে দুই ঘণ্টায় পল্টন পর্যন্ত আসছেন বলেও জানান শহিদুল।

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা  একজন বাসের চেকার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আরে ভাই আপনার দাবি-দাওয়া আছে মানলাম। এই জন্য রাস্তা বন্ধ করবেন, রোগীরা কেমনে যাবে? আপনি শহীদ মিনার এলাকায় যান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে আমরণ অনশন করেন, যা খুশি তাই করেন। কেউ বাধা দেবে না। আর মিডিয়া তো আপনি যেখানে বসবেন সেইখানে যাইব সমস্যা কী?’

শাহবাগে যখন এই অবস্থা তখন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এবং বিকল্প রুট দিয়ে যানবাহন যাওয়ার ব্যবস্থা করে ট্রাফিক বিভাগ। পল্টন মোড় থেকে অনেক বাস পুলিশ ডাইভারশন করে কাকরাইলের দিকে পাঠিয়ে দেয়। আবার মাঝে মাঝে কিছু গাড়ি মৎসভবন থেকে শাহবাগে না পাঠিয়ে মিন্টু রোডের দিক দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয় ট্রাফিক পুলিশ।

দুপুর ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা চলে গেলে ধীরে ধীরে সব দিক দিয়ে যানবাহন চলা শুরু করে। তবে বেলা তিনটার দিকে ভিআইপি মুভমেন্টের কারণে আবারও কিছু সময় যান নিয়ন্ত্রণ করায় নগরবাসীকে যানজটে পড়তে হয়।

অন্যদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নানা দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আমরণ অনশন পালন করছে সারা দেশের পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদের কেউ ফুটপাতে কেউ আবার মেট্রোরেলের কারণে সরু হওয়া রাস্তার অর্ধেকজুড়ে অবস্থান করেন। ফলে যানবাহন হয়ে যায় আরও ধীর।

পল্টন মোড়ে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্ট তৌফিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রেসক্লাবের সামনে পৌরসভার লোকজন, আবার শাহবাগে ছাত্ররা বসছে। তাই বিকল্প দিক দিয়ে গাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’

শাহবাগে অনেক দিন ধরে ডাব বিক্রি করছেন গফুর মিয়া। এখানকার সড়ক বন্ধ হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। তার দাবি দুটি বড় হাসপাতালের সামনে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ বন্ধ করা উচিত। বলেন, ‘এই জায়গায় গণজাগরণ মঞ্চ শুরু করছে, হেই লাইনে অহন সবাই চলতেছে। পাবলিকের যে কি কষ্ট হইতেছে হেইদিকে কারো খেয়াল নাই।’

নগর পরিকল্পনাবিদরাও বলছেন, সরকার বা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সড়কে অবস্থান করা বা আন্দোলন করা হলেও এটা মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় কখনো কখনো। ফলে আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি সহমর্মিতা থাকলেও দুর্ভোগের কারণে মানুষ এদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যারা দাবি নিয়ে মাঠে নামেন আর যারা দাবি পূরণ করবেন দুই পক্ষের আন্তরিকতায় এই দুর্ভোগ কমানো সম্ভব। অন্যথায় না। সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি পালন করুক। আর সরকারও আগেভাবে এসব দাবি নিয়ে করণীয় চিন্তা করুক। তাহলে হয়ত এমনটা থেকে কিছুটা পরিত্রাণ সম্ভব।’

(ঢাকাটাইমস/১৯জুলাই/ডব্লিউবি/জেবি)