আমাদের অনুভূতির ছায়াসঙ্গী

প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০১৯, ১২:৫০ | আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৯, ১২:৫৭

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ

আমাদের আবেগের পাহারাদার তিনি। অনুভূতির ছায়াসঙ্গী। তাঁর লেখা প্রতিটি শব্দে আঁকা মানুষের মন। মনের কত রঙ। রঙ বদলের খেলা। তিনি যতটা কাছ থেকে দেখেছেন, দেখতে পেরেছেন, তা বিরল। মধ্যবিত্তের তুচ্ছ কোনো ঘটনা গল্প হয়েছে তাঁর ছোঁয়ায়। মানুষটার ভাবনার জগৎ ছিল অসীম। কাউকে কখনো না দেখে, না স্পর্শ করে তার হৃদয়জগতে কী করে ঢুকে পড়া যায়, তিনি তা দেখিয়েছেন।

মাঝরাতে বাবার বাড়ি ফেরা। হাতে বড় মাছ। ঘুম থেকে উঠে ছেলেমেয়ের অপেক্ষা। মাছ রান্না হচ্ছে। নি¤œমধ্যবিত্তের সংসারে ঈদের খুশি। কিংবা সন্তানের ছোট্ট কোনো চাওয়াপূরণে জীবনযোদ্ধা বাবার সংগ্রাম। অভাব অনটনের বাজারে মেয়ের জন্য এক শিসি সুগন্ধি বাড়ি ফেরা। ঝুম বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া ঢাকার রাস্তায় পড়ে গিয়ে শিসিটি ভেঙে ফেলা। সুগন্ধি পানিতে মিলিয়ে সুরভিত হয় বর্ষার রাত। কিন্তু ওদিকে বাবার মনটিও শিসির সঙ্গে ভেঙে চৌচির হয়ে যায়। শব্দের বুননে ভেতরটা ‘আহ্!’ করে ওঠার মতো অনুভূতি মিলে শুধু তার লেখায়।

পেটের ক্ষুধা মেটাতে মেয়েকে বেচে দিয়েছিলেন বাবা। কিন্তু সন্তানের মায়া কি চাইলেই ভোলা যায়? সুলেখার সেই হতভাগ্য বাবা মেয়েকে দেখার জন্য ঠিকই ফিরে ফিরে গেছেন। মেয়েকে এবার দেখার জন্য। কোলে তুলে আদর করার জন্য। সুলেখা যখন অসুস্থ সেই বাবার সামনে দাঁড়ালো, পৃথিবীটা মুহূর্তে কেমন ঘোলাটে হয়ে এলো। তাকিয়ে আছি, কিন্তু কালো কালো হরফের কিছুই পড়তে পারছি না। আমি কি অন্ধ হয়ে গেলাম? পরক্ষণে ভাবনা এলো, আদৌ কি দেখতে পেতাম কখনো?

যার কথায় জিনেরা ওঠবস করেন, মানুষের তাবৎ সমস্যার সমাধান যিনি দেন তুড়িমেরে, তার স্ত্রী কি না মৃত্যুশয্যায়! স্ত্রীর জন্য কিছুই করতে পারছে না! গুণিন স্বামীর প্রতি শয্যাশায়ী স্ত্রীর আক্ষেপ। যেখানে আছে ভালোবাসাও। তারপর এক জোছনা রাতে স্ত্রীর সুস্থ হয়ে ওঠা। পরাবাস্তব গল্প ফেঁদে যিনি অশ্রুসজল মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছেন, তিনি আজও বিকল্পহীন।

এত সময় পর এসে মানুষটির নাম নেওয়া যায়। না বললেও এতক্ষণে আপনি হয়তো বুঝে গেছেন, তিনি কে। তাবৎ বিশেষণ তাঁর নামের পাশে অত্যুক্তি। তিনি নিজেই এক বিশেষণ। হুমায়ূন আহমেদ। আমাদের আত্মার আত্মীয়। প্রাণের মানুষ। মনের মানুষ।

উনিশে জুলাই, তাঁর প্রয়াণ দিন।

বিনীত শ্রদ্ধা, হে প্রিয়।

লেখক: গল্পকার ও সাংবাদিক