নুহাশ পল্লীতে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ভক্তদের হুমায়ূন স্মরণ

প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০১৯, ১৫:৫৯

গাজীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে দিনব্যাপী চলে ভক্তদের শ্রদ্ধা নিবেদন।

শুক্রবার সকাল থেকে হুমায়ুন পরিবার, ভক্ত, কবি, লেখক আর নাট্যজনেরা ভিড় করেন নুহাশ পল্লীর লিচু তলায়। ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করেন জনপ্রিয় এ লেখককে।

দিনটি উপলক্ষে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং এতিমদের খাবার বিতরণসহ নেয়া হয় নানা কর্মসূচি।

সরজমিনে দেখা গেছে, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা। হলুদ পাঞ্জাবি পরা হিমু ও নীল শাড়ি পড়ে রুপা সেজে হিমু পরিবহনের সদস্যরাও আসেন। কবরে ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করের নাট্যব্যক্তিত্ব, সাহিত্যিকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।

সবার  মিলন মেলা নুহাশ পল্লীর সুবজ ঘাস, ছায়া নিবিড় প্রান্ত হলেও এই মৃত্যুবার্ষিকীতে নেই হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও তার দুই সন্তান। চলচ্চিত্র নিয়ে একটি কোর্স করার জন্য শাওন রয়েছেন আমেরিকায়। সেখানে জেকসন হাইটসে বাঙালিদের নিয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে যোগ দেবেন শাওন।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নুহাশ পল্লীতে লেখকের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তার ছোট ভাই আহসান হাবীব, তার স্ত্রী আফরোজা আমিন, বোন সুফিয়া হায়দার, রোকসানা আহমেদ, শ্বশুর মোহাম্মদ আলী ও অন্যান্য স্বজনেরা। এ সময় ফুল দিয়ে নুহাশ পল্লীর কর্মীরাও হুমায়ূন আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে সবাই কবর জেয়ারত ও দোয়া করে হুমায়ূনের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মুজিবুর রহমান।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত দর্শনার্থীরা বলছেন, হুমায়ূন মানুষের মনি কোঠায় থাকবেন তার অমর লেখনি দিয়ে। তবে তার শূন্যতা পূরণ হওয়ার মতো নয়।

এছাড়া  ‘হিমু পরিবহন’ বাসে করে ঢাকা, ফরিদপুর, নরসিংদী ও গাজীপুর থেকে ৬০ জন তরুণ-তরুণী খালি পায়ে নুহাশ পল্লীতে আসেন। তারা হুমায়ূন আহমেদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

হিমু পরিবারের কয়েকজন সদস্য বলেন, নুহাশ পল্লীতে আসার আগে ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতার জন্য হিমু পরিবার লিফলেট বিতরণ করেছে।  এছাড়া একযোগে ৪০ জেলায় তাদের প্রিয় লেখকের স্মরণে বৃক্ষরোপন, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, বইমেলার আয়োজন করেছে। হিমুদের উদ্যোগে ইতোমধ্যে ১০টি জেলা পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে।

হুমায়ূন আহমেদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করে  শাওনের বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী বলেন, হুমায়ূনের স্বপ্ন ছিল একটি ক্যান্সার হাসপাতাল করার। কিন্তু এ বিষয়ে শাওন  হুমায়ূন পরিবারের সবার সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে  আসতে পারেনি। তবে সে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

তবে হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব বলছেন, বিশ^মানের ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য উত্তরসূরী হিসেবে আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে।

তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের সকল স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে তার অনেক স্বপ্নই বাস্তবায়িত হয়েছে। ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণসহ অনেক স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে পারিবারিকভাবে একটি মিউজিয়াম স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। তাকে নিয়ে একটি আর্কাইভ নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে গবেষণা করছেন। এ আর্কাইভ গবেষণা কাজে সহায়তা করবে।  এসময় তিনি প্রকাশক ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি হুমায়ূন আহমেদের লেখাগুলো নির্ভুলভাবে প্রকাশের অনুরোধ জানান।

আর প্রকাশকরা বলছেন, লেখক হুমায়ূন আহমেদের শূন্যতা অনুভব করলেও তার পাঠক বেড়ে চলছে। তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন যা নিয়ে এখন গবেষণা হতে পারে।

অন্য প্রকাশের স্বত্ত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম বলেন, হুমায়ূন আহমেদ মারা গেলেও তাকে নিয়েই আমরা এগিয়ে চলছি। তিনি সারাবছরই আমাদের সঙ্গে আছেন। বাংলা ভাষায় যতদিন মানুষ পড়বে, বাংলা ভাষায় লিখবে ততদিন হুমায়ূন আহমেদ আমাদের মাঝে থাকবেন।

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। তার বাবা ফয়েজুর রহমান ও মা আয়েশা ফয়েজ। ২০১২ সালে ১৯ জুলাই মারণব্যধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মারা যান।

(ঢাকাটাইমস/১৯জুলাই/এলএ)