পানি কমতে শুরু করলেও কমেনি বানভাসীদের কষ্ট

এনাম আহমেদ, বগুড়া
 | প্রকাশিত : ১৯ জুলাই ২০১৯, ১৭:০৮

কমতে শুরু করেছে বগুড়ায় যমুনার পানি। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় অর্ধেক সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১২৮.৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও এরপর থেকে নদীর পানি অপরিবর্তিত ছিল। তবে শুক্রবার সকাল ৯টায় নদীতে পানির পরিমাণ ৩.৫০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।

বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও কমেনি বানভাসী মানুষদের দুর্ভোগ। বাড়িঘর সম্বল হারিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়া মানুষগুলোর দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়। কারণ, নিজ বাসস্থান ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে কোনভাবে ঝুপড়ি বানিয়ে আশ্রয় নিলেও তাদের পর্যাপ্ত খাদ্য, জ¦ালানি, বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন এবং গবাদি পশুর জন্য খাদ্যের সংকট তাদের পিছু ছাড়ছে না।

এ দিকে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কারণ সরকারি হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৩১ হাজার ৫৮৫। সেখানে মাত্র দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে এবং ৩৩৭ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনকে অতিরিক্ত ত্রাণ বিতরণের র্নিদেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

নদীর এপাড় বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষজন ত্রাণসামগ্রী কিছুটা পেলেও দুর্গম চরসহ অনেকেই ত্রাণ পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে গত কয়েক দিনে বগুড়ায় যমুনা ও বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট এই তিন উপজেলার নয় হাজার ৬৫৯ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। তিন উপজেলার মধ্যে সারিয়াকান্দি সবচেয়ে বেশি বন্যাপ্রবণ এলাকা। ফলে অন্যান্য উপজেলার চেয়ে এই উপজেলায় ফসলের ক্ষতির পরিমাণও অনেক বেশি। শুধুমাত্র সারিয়াকান্দিতেই সাত হাজার ৬৭০ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। আউশ ধান এবং আমনের বীজতলার পাশাপাশি নষ্ট হয়েছে শাক-সবজি কাঁচা মরিচের জমি। ফলে বাজারে বগুড়ায় বেড়েছে শাক সবজির দাম। কাঁচা মরিচ ও শুকনা মরিচের জন্য বগুড়ার সারিয়াকান্দির নাম দেশজুড়ে রয়েছে। শহরের বাজারগুলোতে কাঁচা মরিচের দাম এখন আকাশচুম্বী।

শুক্রবার বগুড়া শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, কচুর মুখি ৪৫ টাকা, করলা ৬০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, ঢেড়শ ৬০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, মিষ্টি লাউ ৩০ টাকা, পুইশাক ২০ টাকা, লাল শাক ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এবারের বন্যায় এখন পর্যন্ত জানা গেছে, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নের ১২৯টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩১ হাজার ৫৮৫ পরিবারের ১ লাখ ২৪ হাজার ২২০ জন মানুষ। বন্যাকবলিত এই পরিবারগুলোর মধ্যে দুই হাজার ৬৫০ পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে, আর ৭৪৭ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন স্থানে।

তিন উপজেলার মোট ৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পানিবন্দি হওয়ায় সেগুলোতে পাঠদান বন্ধ আছে। দুই হাজার ৩৩০টি ল্যাট্রিন এবং দুই হাজার ৭৩৬টি নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বন্যার পানিতে শুধুমাত্র সারিয়কান্দি উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ২২২টি পুকুরের (২৫. ২৯ হেক্টর) ৭৩. ৯৭ মে. টন মাছ ভেসে গেছে। যার আনুমানিক মূল্য এক কোটি ৭২ লাখ টাকা।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ ঢাকা টাইমসকে জানান, শুক্রবার পানির পরিমাণ আরো কমতে পারে, আবার স্থিতিশীলও থাকতে পারে। তবে শনিবার সকাল থেকে পানি লাগাতার কমতে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক রায়হানা ইসলাম ঢাকা টাইমসকে জানান, এখন পর্যন্ত দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে এবং ৩৩৭ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বিতরণের জন্য। এছাড়া ১০ হাজার ৮৫০টি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত ত্রাণের জন্য স্থানীয়ভাবে সারিয়াকান্দিতে পাঁচ লাখ, সোনাতলা দুই লাখ এবং ধুনটে এক লাখ টাকার শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরো ত্রাণ সহায়তার জন্য ৫০০ মেট্রিক টন জিআর চাল, ১০ লাখ টাকা এবং ১০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবারের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৯জুলাই/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :