‘সরল বিশ্বাসের’ প্রসঙ্গ যে কারণে এসেছিল

প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০১৯, ১৭:২১ | আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৯, ১৮:৫৩

সঞ্জয় দে

'সরল বিশ্বাস' নিয়ে দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্য প্রায় সব টেলিভিশনে এসেছে 'স্টেটমেন্ট' আকারে। মানে এটা এমন খণ্ডিতভাবে প্রচার করা হয়েছে, যেন তিনি জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে নিজ উদ্যোগে সরকারি কর্মকর্তাদের বিষয়ে সাফাই গেয়েছেন।

বিষয়টি কি তাই? এই ভিডিওতে দেখুন, এক সাংবাদিক পাবলিক সার্ভেন্ট অ্যাক্টের এ সংক্রান্ত বিধানটি নিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কেবল আইনি ব্যখ্যাটি দিয়েছেন। ফলে এটি একটি প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে দেয়া বক্তব্য, এটা দুদক চেয়ারম্যানের স্বপ্রণোদিত কোনো স্টেটমেন্ট নয়। আবার তিনি এই বক্তব্যের মধ্যেও কোথাও বলেননি সরল বিশ্বাসে কেউ 'দুর্নীতি' করলে তা অপরাধ বিবেচিত হবে না। উনি আইনে যা আছে সেভাবেই বলেছেন, সরল বিশ্বাসে করা 'কাজ' অপরাধ বিবেচিত হবে না। এবং বিশ্বাসটি যে 'সরল' সেটা অভিযুক্তকেই প্রমাণ করতে হবে।

আপনারা যারা কানের জন্য চিলের পেছনে ছুটছেন, তারা যদি দুদক চেয়ারম্যান হতেন এবং আপনাদের কাছে কেউ যদি আইনের ব্যাখ্যা চাইতেন- আপনারা সেক্ষেত্রে এর বাইরে কী বক্তব্য দিতেন! যদি অন্য কিছু দিতেন সেটি আপনার মনগড়া কথা ছাড়া বিশেষ আর কিছুই হতো না!

এখানে আলোচনার বিষয় বড়জোর হতে পারে, আমরা দেড় শ বছরের বেশি পুরোনো এই আইনের পরিবর্তন চাই কি না। সেটি পুরোপুরি আলাদা বিতর্ক, কিন্তু অন্যায্যভাবে একজনকে বলির পাঁঠা বানানোর চেষ্টা কোনো সঠিক পদ্ধতি হতে পারে না।

দুদক আইন দ্বারা নির্ধারিত একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, ফলে আইন অনুযায়ী না চললে দুদক কিংবা তার কর্তাদের সমালোচনা করে ধুয়ে ফেলা যেতে পারে। দুদকের ভূমিকা বা নতজানু অবস্থান নিয়ে কঠোর সমালোচনার বিস্তর জায়গাও রয়েছে। কিন্তু বিকৃত তথ্যের ভিত্তিতে কাউকে অপদস্থ করার মধ্যেও কোনো ন্যায্যতা নেই।

আমরা যদি চাই- আইনের বাইরে গিয়ে দুদক হারকিউলিস হয়ে দুর্নীতি ঠেকানোর পাহারাদারি করবে- সেই চাওয়াটাও বেআইনি। আমরা একদিকে বিচারবহির্ভূত বেআইনি হত্যার দায়ে পুলিশ-র‌্যাবকে তুলোধুনো করব, আবার অন্যদিকে দুদক চেয়ারম্যান আইনের ব্যাখ্যা দিলে তাকেও শাসাতে থাকব- এই দ্বিচারিতার অবসান ঘটা জরুরি।

লেখক: সাংবাদিক