‘হ্যালো ওসি’ নিয়ে পুলিশে অনন্য মহসিন

প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০১৯, ২০:৩৯ | আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৯, ২০:৪৮

আশিক আহমেদ

নানা ঝামেলায় পড়ে পুলিশের দ্বারস্থ হতে হয় মানুষকে। তবে এর ব্যতিক্রম এক নজির তৈরি করেছেন এক ওসি। তিনি জনগণের দোরগোড়ায় গিয়ে শুনছেন তাদেরই নানা অভিযোগের কথা। আর তাতে পড়েছে সাড়া। ওসির সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সে খবর ছড়িয়ে পড়েছে নগরীজুড়ে। এমন প্রশংসনীয় উদ্যোগের সুফলও পাচ্ছে মানুষ। তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও এ পুলিশ কর্মকর্তা ব্যতিক্রমী কিছু সেবা দিয়ে অনন্য হয়েছেন তার বাহিনীতে। তিনি মোহাম্মদ মহসিন। বর্তমানে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

জনগণের কথা শুনতে পাড়ায়-মহল্লায় হাজির হচ্ছেন মোহাম্মদ মহসিন। ‘হ্যালো ওসি’ নামে বুথ খুলে শুনছেন মানুষের নানা অভিযোগ। আর বুথে বসেই চেষ্টা করছেন তাদের সমস্যা সামাধানের। এলাকাবাসীর সাড়াও পাচ্ছেন তিনি। অনেকে তাৎক্ষণিক পুলিশি সেবা পেয়ে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন পুলিশের এ কর্মকর্তাকে।

সম্প্রতি শুরু হওয়া এ উদ্যোগের প্রথমদিন তিনি হাজির হয়েছিলেন কোতোয়ালী এলাকার চৌদ্দ জামতলায়। এলাকাটি কুখ্যাত ছিল মাদকের আখড়া হিসেবে। সে এলাকার লোকজন বুথে এসে ওসিকে বলেছেন তাদের অভিযোগের কথা। জানিয়েছেন মাদক কারবারিদের বিষয়ে নানা তথ্য। এমনকি দুই মাদক চোরাকারবারি এবং এক মাদকসেবী হ্যালো ওসি বুথে এসে প্রকাশ্যেই বলেছেন, তারা ফিরে আসতে চান স্বাভাবিক জীবনে। বাঁচতে চান সৎ পথে।

শুধু এমন উদ্যোগই নয়, আরও ব্যতিক্রমী কাজ করেছেন মোহাম্মদ মহসিন। আর সেসবের মূল্যায়ন করেছে পুলিশ প্রশাসন। প্রথমবারের মতো পুলিশের কোনও পুরুষ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি সম্প্রতি লাভ করেছেন ‘বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন অ্যাওয়ার্ড ২০১৯’ পুরস্কার। গত ২৭ জুন কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশসেরা ১০ নারী কর্মকর্তার সঙ্গে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এসময় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীও উপস্থিত ছিলেন।

সারাদেশে পুলিশে ৭ শতাংশ নারী সদস্য কাজ করেন। তাদের মধ্য থেকে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রথমবারের মতো এ পুরষ্কার দেয়া হয়। আর রাজধানী ঢাকার বাইরে এবারই প্রথম চট্টগ্রামে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল। আর প্রথম কোনও পুরুষ কর্মকর্তা হিসেবে মহসিনই একমাত্র এ পুরষ্কার পেয়েছেন।

কোতোয়ালির ওসি মহসিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘থানা-পুলিশের বিষয়ে সাধারণ মানুষের একটা ভীতি কাজ করে। মানুষ থানায় যেতে কিংবা ওসির কাছে যেতে ভয় পায়। এ কারণে সাধারণ মানুষের সঙ্গে থানা পুলিশের একটা দূরত্ব আছে।’

                              অবসরে ছেলে শাহারিয়ার মাহমুদ সায়েম ও মেয়ে মালিহা মহসিনার সঙ্গে ওসি মহসিন 

সেই দূরত্ব কমানো আর মানুষ যেন ভয় ছাড়াই সরাসরি থানা কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে তাদের সমস্যার কথা বলতে পারেন সেজন্য নিজেই বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে লোকজনের সামনে হাজির হচ্ছেন বলে জানান তিনি।

প্রতি সপ্তাহে তার থানার আওতাধীন কোনও না কোনও এলাকায় গিয়ে মানুষের কথা শুনছেন জানিয়ে মহসিন বলেন, ‘আমি ঠিক করেছি, প্রতি সপ্তাহে আমার থানার আওতাধীন একটি করে এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলব। বিট পুলিশ অফিসারের মাধ্যমে সেখানকার লোকজনকে আগে থেকে বলে রাখছি তারা যেন কথা বলতে আসেন।’

হ্যালো ওসির প্রথমদিনের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘জামতলা এলাকাটি মাদক ব্যবসায়ীদের স্পট হিসেবে পরিচিত। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। তারা সাহসের সাথে কথা বলেছে আমার সাথে। তারা পুলিশকে কীভাবে তথ্য দেবেন সে প্রক্রিয়াটিও শিখিয়ে দিয়েছি।’

মোহাম্মদ মহসিন এর আগে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের বাকলিয়া থানার ওসি ছিলেন। ওই থানার সময়েও তিনি বেশ কিছু উদ্যোগ নেন। বিশেষ করে মাদক নির্মূলে তার ভূমিকার কথা এখনও স্মরণ করে বাকলিয়া থানার মানুষ। এছাড়া নারী নির্যাতন রোধ, ইভটিজিং নিয়ে জনসচেতনতা তৈরিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভূমিকা রেখে পুলিশ কর্মকর্তা মহসিন নিজ বাহিনীতেও নিজেকে ব্যতিক্রমী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।

ঢাকাটাইমস/১৯জুলাই/ডিএম