‘যমজ গাড়ির’ একই নম্বর বিআরটিএর ভুলে

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৯, ০৯:২৭

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস

রাজধানীতে হুবহু দেখতে দুটি গাড়ির একই নম্বর প্লেটের দায় খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর। দুটি গাড়িকেই তারা একই নম্বর দিয়েছিল। রাজধানীর একটি সড়কে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা দুটি গাড়ির ছবি ফেসবুকে আসার পর তুমুল বিতর্ক এ নিয়ে। তৈরি হয় দুটি পক্ষ। কেউ বলেছে ছবিটি কারসাজি করা, কেউ বলেছে, একটি গাড়ির নিবন্ধন নিয়ে দুটি গাড়ি চালাচ্ছেন কেউ।

দ্বিতীয় সন্দেহটা ছিল বিআরটিএ, শুল্ক গোয়েন্দা আর পুলিশের। এ কারণে গাড়ির মালিকপক্ষকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আর তদন্তে নেমে বিআরটিএর দায় পায় শুল্ক গোয়েন্দা। আর সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এরপর এ নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করেনি।

সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বা বিআরটিএ এখন বলছে, তারা ভুল করে একই কাগজ দুই মালিককে দিয়েছিল। এটা হয়েছিল ‘ছাপার ভুলে’। আর সেটি ধরা পরার পর দুই গাড়ির মালিককে আলাদা নম্বর প্লেট দেওয়া হয়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর তদন্ত এবং তার ফলাফলের বিষয়টি ঢাকা টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক সহিদুল ইসলাম। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘গাড়ি দুটি কেনা-বেচায় শুল্ক ফাঁকির কোনো প্রমাণ পাননি গোয়েন্দারা।’

রুহুল আমিন রিপন নামে একজন ছবিটা প্রথমে ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরপরই ছবিটি ভাইরাল হয়। গাড়ি দুটির খোঁজে নামে পুলিশ, শুল্ক গোয়েন্দা ও বিআরটিএ। টয়োটার এই মডেলের কারের ছবিটা আরেকটা গাড়ির পেছন থেকে তোলা হয়েছিল। ছবিতে গাড়ি দুটির নম্বর প্লেটেই লেখা ছিল ঢাকা মেট্রো-গ ৪২-৪৬১৮।

পুলিশ, বিআরটিএ আর শুল্ক গোয়েন্দাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার দুটি কারণ ছিল। প্রথমত, এভাবে একটি নম্বর দিয়ে যদি একাধিক গাড়ি চালানো হয়, তাহলে সরকার রাজস্ব হারাবে। দ্বিতীয়ত, এভাবে ভুয়া নম্বর প্লেট দিয়ে গাড়ি চালিয়ে অপরাধ করলে নিরপরাধ ফেঁসে যেতে পারেন।

বিআরটিএ শুরুতে জানায়, গাড়িটি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ঋণে কেনা হয়েছে। মালিকানায় আসওয়াত কম্পোজিট মিলস নামে একটি পোশাক কারখানা। ৩ মার্চ গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন হয়। কিন্তু ডিজিটাল নম্বর প্লেট নিয়েছিল না মালিকপক্ষ।

ঘটনার পর তদন্তে নেমে তারা শুল্ক গোয়েন্দার গাড়ি দুটির বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কার সিলেকশন ও বিআরটিরএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্র্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। বিক্রয় প্রতিষ্ঠান তাদের জানায়, ৩ মার্চ আলাদা দুজন ব্যক্তির কাছে তারা দুটি বিক্রি করে। চার মাস পর ছবিটা ভাইরাল হলে তাদের নজরে আসে। তারা (বিক্রয় প্রতিষ্ঠান) বিআরটিএ থেকে দুই সেট কাগজ তুলে দুই গাড়ির মালিককে দেয়। যে ভুল গাড়ির ক্রেতাদেরও নজরে আসেনি।

গাড়ি দুটি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কার সিলেকশন বিডির বিক্রয় প্রতিনিধি মো. আসাদুল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বিআরটিএ থেকে ভুল করে ঢাকা মেট্রো গ ৪২-৪৬১৮ নিবন্ধন নম্বরের বিপরীতে দুই সেট কাগজ তুলে দুই মালিককে দেয়া হয়। বিআরটিএ থেকে কাগজপত্র ও নম্বর প্লেট ঠিক করে গাড়ি দুটির মালিককে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।’

শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছি। এখানে কিছু ক্রুটি ছিল। এর মধ্যে শো-রুম কর্তৃপক্ষের ক্রুটি ছিল। আর বিআরটিএর কাজে একটু ত্রুটি ছিল। সেই কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। এখন সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। ’

ক্রটির সঙে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না এমন খবরে তিনি বলেন, ‘ না.. আমরা স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানকে জানিয়েছি তারা তাদের বিষয়গুলো দেখবেন।’

নাম প্রকাশ না শর্তে বিআরটিএর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল ছিল না। একই দলিল ভুল করে দুইবার প্রিন্ট দিয়ে দুজনকে দেওয়া হয়েছিল। প্রথমে নজরে না এলেও ফেসবুকে ভাইরাল হবার পর আমরা দুই গাড়ির মালিককে ডেকে কাগজ ঠিক করে দিয়েছি।’

(ঢাকাটাইমস/২০জুলাই/এমআর)