আপাতত বড় বন্যার আশঙ্কা নেই

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৯, ১০:৪৫

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকাটাইমস

গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পানিতে ডুবে আছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। তবে আশার কথা হলো উত্তরের প্রধান নদনদীতে পানি কমছে। আগামী কয়েক দিনে আরও কমবে বলে পূর্বাভাস মিলেছে।

বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, যমুনা নদীর পানি কিছু পয়েন্টে ১৯৮৮ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যাকে ছাড়িয়ে গেলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতি শোচনীয় হওয়ার আশঙ্কা তারা করছে না। আর ১৯৮৮ বা ১৯৯৮ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলেও তারা মনে করছেন না।

বাংলাদেশকে গত ৩১ বছরে ওই দুটি বন্যাই সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে। আর বন্যা হলেই এই দুই বছরের পরিস্থিতি তৈরি হয় কি না, এ নিয়ে কথা ওঠে।

তবে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই মূহূর্তে বড় বন্যার কোনো আশঙ্কা দেখছি না আমরা। আগামী এক সপ্তাহে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’

একই সঙ্গে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি একসঙ্গে বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেলে এবং দেশের অর্ধেক এলাকা তলিয়ে গেলে তাকে বড় বন্যা বলা হয়। 

১৯৮৮ সালে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানির উচ্চতা একসঙ্গে বেড়ে গিয়েছিল। ওই বছর দেশের ৬১ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যায়। ১৯৯৮ সালে তলিয়ে যায় ৬৮ শতাংশ এলাকা। তবে এবার এখন পর্যন্ত এতটা ভয়াবহ পরিস্থিতির হয়নি। মেঘনাও দুই কূল ভাসায়নি।

বড় বন্যার আশঙ্কা না করার আরেকটি কারণ দক্ষিণাঞ্চলে পদ্মার এখনো তুলনামূলক শান্ত অবস্থা। ১৯৮৮ সালে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মা বিপৎসীমার ৬২ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। ১৯৯৮ সালে তা ছিল ৯৪ সেন্টিমিটার ওপরে। তবে গতকাল পর্যন্ত এই নদী বিপৎসীমার নিচেই রয়েছে।

গত দুই সপ্তাহে উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে দেশের উত্তর, উত্তর পূর্বাঞ্চল ও মধ্যঞ্চলসহর সারা দেশে বন্যা পরিস্থিতির যে অবনতি হয়েছিল সেই অবস্থা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলেও মনে করছেন এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড দেশের তিনটি নদী অববাহিকার ৩৪৩ পানি সমতল পর্যবেক্ষণ পয়েন্ট রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান প্রধান নদনদীর মোট ৯৩টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনে নদীর পানি মাপে। এখন পর্যন্ত যে ৬৮টি স্টেশনের পানি বাড়ার তথ্য মিলেছে, সেখানে পানি গতকাল স্থিতিশীল ছিল। আগের দিন ২৫টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে ছিল, গতকাল সেটা কমে ২২টি হয়। অর্থাৎ তিনটিতে পানি বিপৎসীমা থেকে কমে যায়।

বরাবর বন্যা প্রথম আঘাত হাতে উত্তরবঙ্গ আর বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উত্তরে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, উত্তর পূর্বে সুরমা, কুশিয়ারায় পানি বেড়ে তলিয়ে যায় উত্তরের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, মধ্যাঞ্চলে জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শেরপুরের একাংশ, আর সিলেট অঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা।

গত সপ্তাহে পানি ক্রমেই বাড়ছিল। এক পর্যায়ে যমুনা কিছু পয়েন্টে ১৯৮৮ সালকে ছাড়িয়ে যায়। আর এরপর আতঙ্ক ছড়ায় যে বড় বন্যা হয় কি না।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া গতকাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা পানি এই মুহূর্তে কিছুটা স্থিতিশীল আছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সারা দেশে বন্যা পরিস্থিতি আরো উন্নতি হবে। চলতি সপ্তাহে সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, বগুড়ার বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হতে পারে।’

তবে উত্তরের ফুলে-ফেঁপে ওঠা নদীগুলোর পানি মধ্যাঞ্চলের পদ্মা, মেঘনা হয়ে বঙ্গোপসাগরে নামার সময় এর দুই কূল ছাপিয়ে যেতে পারে। আর পদ্মার পানি বাড়লে এর দুই তীরের জেলাগুলো প্লাবিত হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন এই কর্মকর্তা।

তাহলে ১৯৮৮ বা ১৯৯৮ সালের মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা এবার আর করছেন না- এমন প্রশ্নে আরিফুজ্জামান বলেন, ‘না। বিগত কোনো বছরের বন্যার রেকর্ড ভাঙার মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি।’

তবে পানি আপাতত নেমে গেলেও আগস্ট-সেপ্টেম্বর নাগাদ আকস্মিক বন্যার প্রবণতার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন এই কর্মকর্তা। ২০১৭ সালে জুলাইয়ের বন্যার পানি দ্রুত নেমে গেলেও সেপ্টেম্বরের বন্যাই বেশি ভুগিয়েছিল।

ঢাকাটাইমস/২০এপ্রিল/এমআর