ব্রিটিশ ট্যাংকার আটক করেছে ইরান, উত্তেজনা চরমে

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৯, ১৭:১৬ | আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৯, ১৭:২০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

আন্তর্জাতিক আইন অমান্যের অভিযোগে উপসাগরীয় এলাকায় হরমুজ প্রণালি থেকে একটি ব্রিটিশ তেল ট্যাংকার আটক করে উপকূলে নিয়ে গেছে ইরানের এলিট ফোর্স আইআরজিসি (ইরান রেভ্যুলেশনারি গার্ড কর্পস)। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, ইরান ট্যাংকারটিকে মুক্ত না করলে ‘পরিণতি গুরুতর’ হবে।

শুক্রবার রাতে স্টেনা টেমপেরো নামের ওই ট্যাংকার আটকের খবর প্রকাশ করে আইআরজিসি। এরপর রাতেই ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা জরুরি বৈঠকে বসে। বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানের এই অগ্রহণযোগ্য কার্যকলাপের ব্যাপারে সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আন্তর্জাতিক নৌ চলাচলের স্বাধীনতার প্রতি এটা সুস্পষ্ট চ্যালেঞ্জ। লন্ডন এ ব্যাপারে আরো বেশি তথ্য সংগ্রহ ও গোটা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার চেষ্টা করছে। সাময়িকভাবে ওই এলাকা এড়িয়ে চলার জন্য যুক্তরাজ্যের নৌযানগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ব্রিটেন দাবি করেছে ইরান তাদের দুইটি ট্যাংকার আটক করেছে। ইরান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে একটি ট্যাংকার আটক করে বন্দরে নেয়া হয়েছে। আর অপর একটি ট্যাংকার তল্লাশির পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

আইআরজিসি জানিয়েছে, যে তেল ট্যাংকারটি আটক করা হয়েছে সেটি তিনটি আইন লঙ্ঘন করেছে। ১. এটি আন্তর্জাতিক পানিসীমা থেকে ইরানের পানিসীমায় ঢুকে পড়েছিল। ২. নিজেকে শনাক্তকরণ যন্ত্রপাতি (জিপিএস) বন্ধ করে রেখেছিল এবং আইআরজিসি’র পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করা হলেও তাতে ভ্রুক্ষেপ করেনি।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, তেল ট্যাংকারটি আটক করে ইরানের উপকূলে নিয়ে আসা হয়েছে এবং আইনগত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য এটিকে হরমুজগান প্রদেশের বন্দর ও নৌচলাচল বিষয়ক সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আইআরজিসির বরাতে ইরানে আধা সরকারি বার্তা সংস্থা দ্য তাসনিম জানায়, ব্রিটিশ তেলবাহী ট্যাংকার স্টেনা ইমপেরো সমস্যা করছিল বলে তথ্য ছিল ইরানের বন্দর ও উপকূলবর্তী সংস্থার কাছে। পরে বিষয়টি আইআরজিসিকে অবহিত করা হলে তারা পদক্ষেপ নেয়।

ট্যাংকার কর্তৃপক্ষ জানায়, যানটিতে ২৩ জন ক্রু আছেন, এখন সেটি উত্তরে ইরানের দিকে রয়েছে। তারা ট্যাংকারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছে না।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট ট্যাংকার আটককে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ মন্তব্য করে বলেন, জলপথে নৌ চলাচলের স্বাধীনতা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতির শিগগির সমাধান না হলে ফলাফল ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। আমরা সামরিক পদক্ষেপের কথা ভাবছি না। কূটনৈতিক উপায়ে সমাধানের কথাই ভাবছি। কিন্তু আমরা স্পষ্ট করতে চাই যে এটার সমাধান হতেই হবে। তেহরানে আমাদের রাষ্ট্রদূত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গেও এ ব্যাপারে কাজ করছি।’

ব্রিটিশ পতাকাবাহী ট্যাংকার জব্দের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি এখন যুক্তরাজ্যের সঙ্গেও ইরানের চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এ মাসের ৪ তারিখ সিরিয়ার জন্য তেল বহন করছে সন্দেহে স্পেনের উপকূলে জিব্রাল্টার দ্বীপের কাছে ইরানের সুপার ট্যাংকার গ্রেস ১-কে জব্দ করে ব্রিটেন। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার সূত্রপাত হয়। ৯ জুলাই উপসাগরীয় এলাকায় ইরানের জলসীমায় যুক্তরাজ্যের নৌযানগুলোর হুমকি রয়েছে বলে জানায় যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অভিযোগ করে, এর এক দিন পর ওই অঞ্চলে ব্রিটিশ তেলবাহী ট্যাংকারকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ইরানের জাহাজগুলো; যদিও ইরান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ঢাকাটাইমস/২০জুলাই/আরআর/ইএস