প্রিয়ার ‘সাজানো গল্পে’ তীব্র প্রতিক্রিয়া

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৯, ২০:০৭ | আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৯, ২০:২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

হঠাৎ প্রিয়া সাহাকে নিয়ে তোলপাড়। কথা বলছেন মন্ত্রীরা, বিবৃতি এসেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যাতে বলা হয়েছে প্রিয়া সাজানো গল্প বলেছেন।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নেয়া হবে আইনি ব্যবস্থা। এমন বক্তব্যও এসেছে, তিনি ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীর স্বার্থে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং বিচারহীনতা নিয়ে অবিশ্বাস্য অভিযোগ তুলেছেন।

বাংলাদেশে তিন কোটি ৭০ লাখ ধর্মীয় সংখ্যালঘু উধাও হয়ে গেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করে প্রিয়া তার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। বলেছেন, বাংলাদেশে তার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে, সম্পদ দখল করা হয়েছে। এখানে এক কোটি ৮০ লাখ ধর্মীয় সংখ্যালঘু দেশ ছাড়তে চায় না। কিন্তু তাদের থাকার মতো অবস্থা নেই।

প্রিয়ার এই বক্তব্যকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আসা বিবৃতিতে একে ‘সাজানো গল্প’ বলা হয়েছে। এর পেছনে অশুভ উদ্দেশ্য কি না, সেই জিজ্ঞাসাও করা হয়েছে।

প্রিয়ার বক্তব্যের প্রতিবাদে তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন হয়েছে বাসার সামনে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। জন্মস্থান পিরোজপুরের নাজিরপুরে হিন্দু নেতাদেরকেও পাশে পাননি প্রিয়া। বলেছেন, সেখানে ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের ঘটনা নেই।

বাংলাদেশে নানা সময় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে গত ১০ বছরে যতগুলো ঘটনা এসেছে, প্রতিটাতেই প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিচার চলছে প্রতিটি ঘটনারই।

এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রিয়ার বক্তব্য সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উস্কে দেয় কি না এ নিয়েও উৎকণ্ঠার কথা এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে। এরই মধ্যে ফেসবুকে যেসব প্রতিক্রিয়া আসছে, তাতে এক জন ব্যক্তির কারণে সব হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরই কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

প্রিয়ার বক্তব্যের নিন্দা এসেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পক্ষ থেকেও। নেতারা বলছেন, ভিনদেশি নেতার কাছে নালিশ করতে পারেন না প্রিয়া। বিশেষ করে ট্রাম্পকে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে তিনি অন্যায় করেছেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রিয়া সাহা যা বলেছেন তা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, প্রিয়াকে বক্তব্য প্রমাণ করতে হবে। নইলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যে দেশের প্রেসিডেন্টের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে সেই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতও বলছেন, ধর্মীয় সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি উল্লেখযোগ্য নাম।

প্রতিক্রিয়া তীব্র

প্রিয়ার বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে আসার পরদিন গতকাল এ নিয়ে বিবৃতি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ‘প্রিয়া সাহার এই চরম মিথ্যাচার এবং সাজানো গল্পের পেছনে অশুভ উদ্দেশ্য রয়েছে। তার এই বক্তব্যের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা।’

তীব্র সমালোচনা এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পক্ষ থেকে। তিনি বলেন, ‘এই বক্তব্য পুরোপুরি মিথ্যা, সত্যের লেশমাত্র নেই। এই বক্তব্য শুধু নিন্দনীয়ই নয়, তা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আরও উৎসাহিত করবে।

ট্রাস্পের কাছে বাংলাদেশ নিয়ে অভিযোগ রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল বলেও মনে করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। বলেন, ‘অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, প্রক্রিয়া চলছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বলেছেন আইনি ব্যবস্থার কথা। বলেন, ‘দেশে আসলে তাকে (প্রিয়া সাহা) জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি যেসব তথ্য দিয়েছেন অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে তার ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন. ‘প্রিয়া সাহা নামে এক নারী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে যে অভিযোগ করেছেন তা তিনি ব্যক্তি স্বার্থেই করেছেন। নিশ্চয়ই এর পেছনে তার বা কোন গোষ্ঠীর স্বার্থ আছে। এ ধরনের দু-একজন মানুষের অভিযোগ দিয়ে বাংলাদেশের মূল চেতনাকে কখনই ধ্বংস করা যাবে না।’

কী বলছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ?

প্রিয়া সাহার এ বক্তব্যকে সংগঠনের বক্তব্য হিসেবে নয়, বরং ব্যক্তিগত অভিযোগ হিসেবে দেখছে পরিষদ। সংগঠনটির  সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘আমাদের সংগঠন এরকম কোনো বক্তব্যের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কাউকে তো বলে নাই যে, তুমি এভাবে বলবা। অতএব প্রিয়া সাহার মত প্রিয়া সাহারই।’

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ফ্রিডম অব রিলিজিয়ান নামে একটি সম্মেলন হয়। এতে আমাদের ঐক্য পরিষদের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। সেই প্রতিনিধি দলে প্রিয়া সাহা ছিলেন না।’

তাহলে প্রিয়া সাহা কীভাবে সেখানে গেলেন- এমন প্রশ্নে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে উনাকে পাঠানো হয়নি। তারপরও কেমনে গেলেন এটা মার্কিন দূতাবাস বলতে পারবে।’

তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না সেটা প্রিয়া দেশে আসার পর চিন্তা করা হবে বলেও জানান রানা দাশ।

যেভাবে সামনে এল প্রিয়ার অভিযোগ

ট্রাম্পের ওভাল অফিসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে উদ্ভট অভিযোগ করেন প্রিয়া সাহা নামে একজন নারী। তার দাবি, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু তিন কোটি ৭০ লাখ মানুষকে গুম করা হয়েছে। এখানে বিশেষ করে হিন্দুরা অমানবিক পরিবেশে আছেন। ট্রাম্প যেন হস্তক্ষেপ করেন।

তার বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

ওই অনুষ্ঠানে প্রিয়া বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ খ্রিস্টানকে গুম করা হয়েছে। এখনো সেখানে ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘু জনগণ রয়েছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ত্যাগ করতে চাই না। আমি আমার ঘর হারিয়েছি, আমার জমি নিয়ে নিয়েছে, আমার ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে কিন্তু সেসবের কোনো বিচার নেই।’ 

কে এই প্রিয়া সাহা

হোয়াইট হাউজের ওয়েব সাইটের বিবৃতিতে বাংলাদেশি এই নারীকে মিসেস সাহা পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বাংলাদেশ হিন্দু- বৌদ্ধ -খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। তবে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে যাদের যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার কথা ছিল প্রিয়া সেই তালিকায় ছিলেন না।

এছাড়াও তিনি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ‘শারি’-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। রোকেয়া হলে থাকতেন।

ছাত্রজীবনে ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছিলেন ‘মহিলা ঐক্য পরিষদ’এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য গতবছর তাকে পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

ঢাকাটাইমস/২০জুলাই/বিইউ/ডব্লিউবি