যুক্তরাষ্ট্রের হাতছাড়া হওয়ার পথে তুরস্ক

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৯, ২১:২৮

দেলোয়ার হোসেন, ঢাকাটাইমস

একাধিক বিতর্কিত ইস্যু থাকলেও সাম্প্রতিক রুশ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার চুক্তিকে বাস্তবায়িত করার পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরাগভাজন তুরস্ক। যেভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান তাতে আন্তর্জাতিক মহল বিস্মিত। সেই সঙ্গে পাক খাচ্ছে একটি প্রশ্ন- দীর্ঘ দিনের মার্কিন লবি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে কি এই মুসলিম প্রধান পশ্চিম এশিয়ার দেশটি।

বিবিসি রিপোর্টে বলা এখন ঝুঁকির মুখে। ওয়াশিংটন এবং ন্যাটো সামরিক জোটের অনুরোধ এবং হুমকির তোয়াক্কা না করে তুরস্ক গত সপ্তাহে রাশিয়া থেকে অত্যাধুনিক এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্রের চালান আমদানি করছে।

এর পরেই ক্ষুব্ধ হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা জানায়, তুরস্ককে একশো অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির চুক্তি তারা স্থগিত করছে। একইসাথে, তারা তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পরিকল্পনা শুরু করেছে। এর জেরে আঙ্কারা এবং ওয়াশিংটন সম্পর্কে লেগেছে দোলা।

তুরস্কের ভৌগোলিক অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কৃষ্ণসাগর ও বসফরাস প্রণালীর মতো এশিয়া-ইউরোপের মধ্যবর্তী জলপথ থাকায় তুরস্কের মধ্য দিয়েই দুই মহাদেশে যাতায়াত করা যায়। সেই কারণে কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী অপর দেশ রাশিয়ার লক্ষ্য তুরস্ককে ভিত্তি করে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ। সেই পথের কাঁটা তুরস্কের ন্যাটো জোটে থাকা। যেভাবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দোস্তি বাড়িয়েছেন তাতে চিন্তায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

এর আগে তুরস্ক তার মিত্র দেশ আমেরিকার কাছ থেকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে চেয়েছিল। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সরকার নানা টালবাহানা করে তুরস্ককে জানিয়ে দেয়- প্যাট্রিয়ট তাদের দেওয়া হবেনা। কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় তুরস্ক সরকার। তার পর থেকেই সম্পর্কে লেগেছে ভাটার টান।

তার পরেই তুরস্ক ন্যাটো জোটের প্রতিপক্ষ রাষ্ট্র রাশিয়ার কাছে ক্ষেপণাস্ত্র চেয়ে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে সেটি লুফে নেন পুতিন। শুরু হয় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র এস-৪০০ বিক্রির তোরজোড়। চাপে পড়ে আমেরিকা। তাদের তরফে তুর্কি প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করা হয় রুশ মিসাইল না কেনার। কিন্তু তিনি অনড় থাকেন।

এর পরেই শুরু হয় সম্পর্কের টানাপোড়েন। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে- তুরস্কের মতো কৌশলগত ভৌগোলিক দেশ এখন ট্রাম্প প্রশাসনের হাতের বাইরে। বরং তুর্কিরা এখন পুতিনের জন্য পোয়াবারো।

বিবিসি, আল জাজিরা, এপি সহ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার খবর, পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা চাপালেই সরাসরি ন্যাটো জোট ছেড়ে দেবে তুরস্ক। সেটা হলে ওয়াশিংটনের পক্ষে চরম ক্ষতি হবে। কারণ পশ্চিম এশিয়ার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কৌশলগত স্থানটি তখন রুশ লবিতে চলে যাবেই।

মনে করা হচ্ছে ট্রাম্পের তুলনায় পুতিনের মতো শক্তিশালী বন্ধুকেই বেশি করে চাইছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান।

 (ঢাকাটাইমস/২০জুলাই/ডিএইচ)