প্রতারক ও দালাল চক্র থেকে সাবধান

প্রকাশ | ২১ জুলাই ২০১৯, ১১:২৮ | আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯, ১১:২৯

মো. রেজাউল হোসেন
প্রতীকী ছবি

সমাজে আমরা স্বপ্ন দেখি ভালো করে চলার। কিন্তু জীবন চলার মসৃণ পথে কাঁটা ছড়িয়ে আছে সাধুবেশে শয়তান-দালাল-প্রতারক চক্র। এরা কথা বলে, দেবতার মতো কাজ করে, পরানে দাগা দেয় পুরোদস্তুর শয়তানের মতো। লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়। এরা যেমন সমাজ-সংসারের শত্রু, তেমনি মানবতা-সভ্যতারও।

এরা জমি-ফ্ল্যাট কেনা থেকে শুরু করে চাকরি দেয়া, বিদেশে নেয়া, লটারি জিতিয়ে দেয়া, গুপ্তধন, স্বর্ণের ডেকচি, টাকার কলস, অঢেল সম্পদ গড়ে দেয়া, বিয়ে ও কাঙ্ক্ষিত লোক (মেয়ে মানুষ) পাইয়ে দেয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি প্রলোভন দেখিয়ে, সুকৌশলে সুরেলা মায়াবি কণ্ঠে সুঁই হয়ে মনের মধ্যে ঢুকে যন্ত্রণাকর ফাল হয়ে বেরিয়ে যায়।

বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর, ভক্তিতে মুক্তি বিশ্বাসী সরলমনা মানুষের সর্বনাশ করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব দালাল-প্রতারকচক্র। আর যারা সর্বনাশের শিকার হচ্ছে, তারা সারা জীবনের কষ্টার্জিত অর্থবিত্ত খুইয়ে লাঠি, বাটি, থালা নিয়ে পথে বসার অবস্থা হয়েছে।

টাকার শোক নাকি প্রিয়জন হারানোর চেয়েও কয়েকগুণ বেশি। তাই ভুল পথে পা দিয়ে টাকা হারানোর শোক-কষ্ট সইতে না পেরে আত্মহত্যা করছে। প্রশাসন ও জনসাধারণ সচেতন হলেই প্রতারণা বন্ধ হবে এদের।

যেসব এলাকার জমি সরকারিভাবে বিক্রয় নিষিদ্ধ দালাল বা প্রতারক চক্র ক্রেতাকে ওই নিষেধাজ্ঞার কথা গোপন করে তার কাছে জমি বিক্রয় করতে পারেন। সেদিকে সবসময় সজাগ থাকতে হবে। নিম্নোক্ত মৌজাগুলোর জমি কোনো ক্রেতা কিনলে সেই জমি ক্রয়টি অবৈধ হবে। যেমন, ‘গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে জেলার সদর উপজেলার (ক) আড়াইশ প্রসাদ, (খ) বনঘরিয়া, (গ) বিশিয়া কুড়ি বাড়ি, (ঘ) বাড়ইপাড়া, (ঙ) উত্তর সালনা, (চ) বাউপাড়া, (ছ) বাহাদুরপুর ও (জ) মোহনা ভবানীপুর মৌজালোতে ব্যক্তি মালিকানাধীন বা সরকারি জমিতে শিল্প/কারখানা/পাকা ইমারতসহ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, কৃষি, দুগ্ধ ও মৎস্য খামার ইত্যাদি স্থাপন না করার জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২২/১১/১৯৯১ ইং তারিখে পবম (শা-৩) ১৪/৯৪/ঌ৮৮ নং স্মারকে একটি পরিপত্র জারি করে।

এ ছাড়াও সরকার যদি কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকার জমি যেকোনো সময় ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে প্রজ্ঞাপন জারি করে, তাহলে ক্রেতাকে সেই এলাকার জমি ক্রয় করতে সাবধান থাকতে হবে বলে।

অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে দালাল ও কর্মী পরিচয়ে বহিরাগতদের দাপটে অসহায় রোগীরা। দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট না পেলেও বাড়তি টাকায় সহজেই তা মিলছে দালালের কাছে। শুধু টিকিট নয়, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এর প্রতিবেদন সরবরাহ এবং হাসপাতালে আসন পাওয়াও নিয়ন্ত্রণ করছে তারা।

কেন্দ্র করে হাসপাতালে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট। পরিচ্ছন্নতাকর্মী, লিফটম্যান, গার্ডসহ হাসপাতালের অনেকেই এতে জড়িত। এ ছাড়া হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত না হয়েও পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এই সিন্ডিকেটে জড়িয়ে যাচ্ছেন। এখানে প্রতি তিনজন সাধারণ রোগীর পর একজন হাসপাতাল কর্মীকে সেবা দেওয়ার নিয়ম, একে পুঁজি করে দাপট আরও বেড়েছে দালালদের। কর্মী নয়, এমন অনেকে সেই পরিচয় দিয়ে রোগীদের হয়রানি করে যাচ্ছে।

সুস্থ ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন করতে হলে আমাদের প্রতারক ও দালাল চক্র থেকে সাবধান থাকতে হবে। এদের সমূলে উৎখাত করার জন্য সবার আন্তরিক সহযোগিতা দরকার।

লেখক: সংবাদকর্মী