তারুণ্যের অগ্রযাত্রা হোক সম্প্রীতির পথে

প্রকাশ | ২১ জুলাই ২০১৯, ১১:৪৮

দীপক বিশ্বাস

ইতিহাস বলে, আমাদের উপমহাদেশ ছিল এমন একটি অঞ্চল যেখানে একতা বা মিলেমিশে থাকাটাই ছিল সবচেয়ে পরিচিত দৃশ্য। সুপ্রাচীন কাল থেকেই যেকোন সময়েই বাংলা জুড়ে ছিল সম্প্রীতির বন্ধন। শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞানে বিজ্ঞানে এ অঞ্চল এগিয়ে যেতে থাকে শুধুমাত্র ধর্ম, বর্ণ, জাতিভেদ ভুলে সংস্কৃতিমনা হয়ে ওঠার ফলেই। যতদিন পর্যন্ত এ উপমহাদেশ একটি মানচিত্রের অংশ ছিল, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ এর সুযোগ খুব কমই ছিল। তবে পরবর্তীতে দেশভাগ ও নানাবিধ কারণে এ অঞ্চলে শুরু হয় অসম্প্রীতি চর্চার।

বর্তমানে সময়ে এসে আমরা দেখি বৈশ্বিকভাবেই সহিংস উগ্রবাদের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উগ্রবাদের বিচিত্র ধরণ, সহিংসতার ভয়াবহতা সৃষ্টি করেছে ভিন্ন মাত্রা। এর প্রভাব থেকে বাদ যাচ্ছে না  বাংলাদেশও।  বিশেষ গোষ্ঠী বা জাতির মধ্যে নয়, বরং ধর্ম-বর্ণ, ধনী-গরিব, জাতি-শিক্ষা-বয়স নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর মধ্যে উগ্রবাদের প্রভাব লক্ষ্যনীয়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সচেতনতামূলক উদ্যোগ ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর তৎপরতায় বাংলাদেশে বর্তমানে সহিংস উগ্রবাদ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত, কিন্তু উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো তাদের কার্যক্রম সংগঠিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মূল টার্গেটই বাংলাদেশের তরুণ সমাজ, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৩ শতাংশ (বিবিএস-২০১৫)। সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া এই ধরণের কার্যক্রম এর কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যায়, এর পেছনে লুকিয়ে আছে বিশ্ব অর্থনীতির প্রভাব। সাধারণত দেখা যায় অর্থনৈতিকভাবে  সুবিধাবঞ্চিত মানুষই বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসীমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে খেয়াল করলে দেখা যাচ্ছে, সমাজের উচ্চ স্তরের তরুণ তরুণীরাও এধরণের কর্মকান্ডে জড়িয়ে সমাজ এবং দেশের জন্য বিপদ বয়ে আনছে।

গবেষকের মতে, এগুলো সংঘটিত হচ্ছে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোতে ধর্ম নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি, বেকারত্বের হার বেড়ে যাওয়া, সঠিক ধর্মীয় শিক্ষার অভাব এবং ইন্টারনেটে প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে যেতে থাকা ধর্ম এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন ভুল ধারণা। এর ফলে সঠিক পথের দিশারী হতে পারছে না অনেকেই, এবং এদেরকে লক্ষ্য করে কিছু পথভ্রষ্ঠ সুবিধাবাদীরা নিচ্ছে ফায়দা। তাদের এরূপ উদ্দেশ্য অসফল হত, যদি আমাদের সমাজে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট থাকত।

ঠিক এমন এক সময়ে সমাজে সম্প্রীতির বন্ধনকে অটুট করার উদ্দেশ্যে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের উদ্দ্যোগে শুরু হয় সোস্যাল অ্যাকশন এন্ড মোবিলাইজেশন ফর প্রিভেনশন অফ রেডিকালাইজেশন এন্ড এক্সট্রিমিজম থ্রু এনহেনসড অ্যান্ড টারগেটেড ইন্টারভেনশন (সম্প্রীতি)। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং মাদ্রাসা (ফাজিল ও কামিল) পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা চর্চার মাধ্যমে সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে এ প্রকল্পটি কাজ করে চলেছে। এ লক্ষ্যে সম্প্রীতির অসংখ্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে বিতর্ক, খেলাধুলা, নাটক, ছবি আঁকা, সিনেমা তৈরি, পথনাটক প্রদর্শন, উদ্যোক্তা তৈরি, লেখালেখি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গ্রুপ গঠন, সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, মসজিদ ভিত্তিক প্রচারণা ও অন্যান্য সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম।

সম্প্রীতি প্রকল্পটিকে সফল করার জন্য বিভিন্ন সহায়ক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিটনিক অন্যতম। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিটনিক একটি সৃজনশীল বিজ্ঞাপনী সংস্থা। বর্তমান সময়ে যেকোন উদ্যোগকে সমাজের সকল স্তরে পৌঁছে দেবার জন্য সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সর্বোপরি ডিজিটাল মাধ্যম একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। আর এ মাধ্যমে বিটনিক একটি অন্যতম সৃজনশীল সংস্থা। সম্প্রীতি প্রকল্পটিকে সকল স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য বিটনিক সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এজন্য সম্প্রীতি.কম  নামক একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত ব্লগ, ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাবলির বিশ্লেষণ ও বিভিন্ন ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। এ ওয়েবসাইটিতে সংগৃহিত কন্টেন্টগুলো অ্যাপেও বিদ্যমান যা ডাউনলোড করা যাবে প্লে স্টোর থেকে। এছাড়া বিটনিক সম্প্রীতিকে আরও সক্রিয়ভাবে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেবার জন্য সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সম্প্রীতি নামক একটি পেজ পরিচালনা করছে। তাছাড়া ভিডিও কন্টেন্ট গুলো নিয়ে রয়েছে একটি ইউটিউব চ্যানেল। এ সকল মাধ্যমে প্রচারিত/প্রকাশিত কন্টেন্টগুলোতে সকল স্তরের তরুণদের কাছ থেকে উৎসাহজনক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। 

মূলত উগ্রবাদ রুখতে আমরা জানার চেষ্টা করেছি এর ভেতরের কারণ। সেই যায়গা থেকে মূলত তরুণদের চিন্তাশীলতা বাড়াতে পারলেই এ প্রক্রিয়া আরও বেগবান হবে বলে আমরা উপলব্ধি করেছি। ফলে তরুণদেরকে বর্তমান আধুনিক সমাজিক জীবনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ের দিকনির্দেশনা ও একই সাথে বিচ্ছিন্নতার নিয়ামকগুলোর সাথে পরিচয় করানো এবং বিভিন্নতাকে গ্রহণ করে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখার মানসিকতায় উদ্ধুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের উদ্যোগকে ডিজিটাল মাধ্যমে দেশের সকল স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেও বিটনিক সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে চায়।