অস্তিত্ব হারাতে বসেছে কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরী

প্রকাশ | ২২ জুলাই ২০১৯, ০৮:১৬

মাসুদ আলম, কুমিল্লা

নিয়ম-নীতি ভেঙে কুমিল্লার বিসিক শিল্পনগরীর বেশ কিছু প্লটে বসতবাড়ি গড়ে তোলা হয়েছে। এসব বাসাবাড়িতে কারখানার মালিকরা যেমন পরিবার নিয়ে থাকছেন, তেমনি বাড়তি টাকা আয়ের জন্য ভাড়াও দিচ্ছেন। শিল্প এলাকায় বরাদ্দ করা প্লটের অপব্যবহার বাড়ে ক্রমান্বয়ে কারখানার পরিমাণ কমে অস্তিত্ব হারানোর আশঙ্কায় কুমিল্লার বিসিক শিল্পনগরী।

অন্যদিকে জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন বিসিকের কারখানার মালিকরা। ২০১৭ সালের শেষ দিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন বিসিকের কিছু সড়কের উন্নয়ন কাজ করলেও এখনো সংস্কারের বাকি রয়েছে অধিকাংশ সড়ক। ওই সড়কগুলো সামান্য বৃষ্টিতেই পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। নেই পানি নিষ্কাশনের উন্নত কোনো ব্যবস্থা। আশপাশের এলাকার ময়লা পানি এসে বিসিকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে।

বিসিকের সংশ্লিষ্টের দাবি, সিটি করপোরেশন কয়েকটি সড়কের উন্নয়ন কাজ করলেও অধিকাংশ সড়কের এখনো বেহাল দশা। কারখানার মালিকরা উৎপাদিত মালামাল আনা-নেয়া করতে গিয়ে প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়ছেন। আমরা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি, তারা জানায় বিসিক উন্নয়নে বর্তমানে কোনো বাজেট নেই।

বিসিক শিল্পনগরীর কয়েকজন কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা বিসিক শিল্প এলাকায় বরাদ্দ করা প্লটের অপব্যবহার রোধে কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি প্লট মালিকদের চূড়ান্ত চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে শিল্প এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস না করার নির্দেশও দেওয়া হয়। তবে এরপরেও কিছু কিছু প্লট মালিকের পরিবার সেখানে বসবাস করছে।

অভিযোগ রয়েছে, কুমিল্লা বিসিক এলাকায় শিল্প-কারখানা স্থাপনের নামে সহজ শর্তে প্লট নিয়ে অনেকেই সেখানে বসবাসের জন্য বাড়ি নির্মাণ করেন। অনেকে আবার ছাত্রাবাস বা সাময়িক স্থাপনা নির্মাণ করে অন্য কাজে ব্যবহার করছেন। নীতিমালা লঙ্ঘন করে শিল্প প্লটের অবৈধ ব্যবহারকারীদের কর্তৃপক্ষ এর আগে একাধিকবার চিঠি দিয়ে সতর্ক করলেও কোনো কাজ হয়নি। এরপর গত জুলাই মাসের প্রথম দিকে বিসিক কর্তৃপক্ষ শেষবারের মতো চিঠি দিয়েছে ওই প্লট মালিকদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিসিক শিল্প এলাকায় গড়ে উঠা অধিকাংশ প্লটের চারদিকে বাউন্ডারি দিয়ে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে ভেতরে বাড়ি নির্মাণ করে মালিক অথবা ভাড়াটে পরিবার বসবাস করছে। অনেক প্লটে বাইরে কারখানার সাইনবোর্ড থাকলেও ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছে মেস। সেখানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র অথবা কর্মজীবী লোকজন বসবাস করছে। আবার কেউ প্লটের প্রথম এবং দ্বিতীয় তলায় কারখানায় ব্যবহার করে বাকিগুলো ভাড়া ও চাকরিজীবী-শ্রমজীবী মেস এবং ওষুধ কোম্পানিরসহ বিভিন্ন কোম্পানির পণ্যের গোডাউন হিসেবে ভাড়া দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) কুমিল্লা কার্যালয় সূত্র জানায়, কুমিল্লায় শিল্পের প্রসার ও বেকার সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে নগরীর আশোকতলায় ৫৪ দশমিক ৩৫ একর ভূমিতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন-বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শিল্প কারখানা করার জন্য ১৪২টি শিল্প ইউনিটের বিপরীতে ১৪৯টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। বর্তমানে ১৩৫টি চালু অবস্থায় রয়েছে। একটি বাস্তবায়নাধীন এবং বাকি ছয়টি বন্ধ হওয়ার পথে।

কারখানার জায়গায় বাড়ি তৈরি ও বাসা ভাড়ার বিষয়ে এক বাড়ির মালিক ঢাকা টাইমসকে বলেন, খালি বাসা ফেলে রেখে লাভ কী? ভাড়া দিলে কিছু আয় হবে। কারখানায় পণ্য উৎপাদক করে আগের মতো লাভ হয় না। তাই বেশির ভাগ সময় কারখানা বন্ধ রাখছেন। ভাবছেন অন্য কিছু করার জন্য। প্লটজুড়ে তৈরি করা বাড়িতে অনেকগুলো রুম রয়েছে। এর এক পাশে তারা থাকছেন। অন্য পাশের ঘরগুলো ভাড়া দিয়ে দেবেন।

রাকিব নামে এক চাল উৎপাদিত কারখানার মালিকের ছেলে বলেন, ধান থেকে আমাদের কারখানায় চাল উৎপাদন করা হয়। ওই কারখানায় আমার মা-বাবাসহ পরিবারের সবাই থাকি।

শিল্প এলাকায় বরাদ্দ করা প্লটে আবাসিক কেন? জানতে চাইলে শিল্প নগরী কর্মকর্তা হাসান আসিফ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প করার জন্য সহজ শর্তে প্লট বরাদ্দ নিয়ে অব্যবহারে বিসিকের নিয়ম ও শর্তে লঙ্ঘন করেছেন। এ ধরনের কার্যকলাপ বন্ধের জন্য তাদের কাছে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়। শিল্প-কারখানার নামে প্লট নিয়ে অবৈধ কাজে ব্যবহার বন্ধে ১২টি প্রতিষ্ঠানের মালিককে বাসস্থান সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিসিকের প্লট বরাদ্দ কমিটির সভায় কথা হয়েছে কেউ আবাসিক স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবেন না। তবে শিল্প-কারখানার নিরাপত্তার জন্য ম্যানেজার বা কর্মচারীদের থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন।’

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা বাসা নির্মাণ করে সেখানে বসবাস করছেন তাদের উচ্ছেদের জন্য আমরা চিঠি দিয়েছি। কেউ কেউ এরই মধ্যে পরিবার সরিয়ে নিয়েছেন।’

(ঢাকাটাইমস/২২জুলাই/জেবি)