আস্ত দ্বীপের মালিক হোন ১৪ কোটি টাকায়

প্রকাশ | ২২ জুলাই ২০১৯, ১১:০৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

কারো কাছে নিজের পছন্দ মতো বাড়ি বলতে বোঝায় নির্জন স্থানে সৌন্দর্যমন্ডিত একটি বাড়ি। যদি আপনি তাদের মতো সবার থেকে দূরে, নির্জনে কেবল আপনজনের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করেন এবং অর্থ ব্যয়ের সামর্থ থাকে, তাহলে আপনার জন্য রয়েছে এক আদর্শ বাড়ি।

স্কটল্যান্ডের ফির্থ অব ক্লাইডে অবস্থিত সাউন্ড অব বুটের উত্তরে রয়েছে ইঞ্চমারনক নামের এক দ্বীপ। এই দ্বীপেই রয়েছে এক বাড়ি, যা আপনার আদর্শ বাসস্থান হতে পারে। এর দাম পড়বে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪ কোটি ৪৬ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা। এই টাকায় শুধু বাড়িটিই নয়, কিনে নিতে পারবেন সম্পূর্ণ দ্বীপটিই।

আরও মজার বিষয় হল এই দ্বীপে বাস করবেন কেবল আপনি! ৬৬০ একরের এই দ্বীপে বিশালাকার একটি চার বেডরুমের বাড়ি ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু ছোট বাড়ি, একটি খামার, নিজস্ব ফেরি ও ফেরি ঘাট। জলপথে মূল ভূখণ্ড থেকে ১০ মিনিটের দূরত্বে রয়েছে দ্বীপটি।

১৯৮৬ সালে এই দ্বীপের শেষ বসবাসকারীও বাড়ি বিক্রি করে চলে যান। ১৯৯৯ সালে এক পরিবার এই দ্বীপটি কিনলেও তারা এই বাড়িটিকে ছুটি কাটানোর জন্য ব্যবহার করতেন। স্থায়ী ভাবে বসবাস করেননি কখনও। এখন তারাও বাড়িটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আলোচনায় আরও একবার উঠে এসেছে এই দ্বীপ।

সাড়ে চার কিমি দীর্ঘ এই দ্বীপে রয়েছে প্রায় আট কিমি দীর্ঘ তটরেখা। তবে শুধু বিশালাকায় বাড়ি বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়, এই দ্বীপে লুকিয়ে আছে নানা ইতিহাসও। ব্রোঞ্জ যুগের কবরস্থান থেকে শুরু করে নানা যুদ্ধের চিহ্ন এখনও রয়েছে এই দ্বীপে।

১৯৬০ সালে এক ব্যক্তি এই দ্বীপেই খুঁজে পান ব্রোঞ্জ যুগের এক পাথরের কবর। সেই কবরে শায়িত ছিল এক মহিলার দেহ, যা ‘কুইন অব ইঞ্চ’ নামে পরিচিত। ওই মহিলার গলায় ছিল একটি লিগনাইটের নেকলেস এবং হাতে ধরা ছিল চকমকি পাথরের ছুরি। সেই দেহ এখনও রয়েছে ওই দ্বীপে।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে বহুবার জলদস্যুদের হাতে আক্রান্ত হয়েছে এই দ্বীপ। পরবর্তীকালে স্কটিশ কম্যান্ডো এবং ফ্রেঞ্চ কানাডিয়ানরা এই দ্বীপটিকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ট্যাঙ্ক বহন করার ক্ষমতা যুক্ত জাহাজের আবিষ্কার হয়। ইঞ্চমারনক দ্বীপে এই জাহাজগুলি করে ট্যাঙ্ক আসত। সেখানেই চলত যুদ্ধের মহড়া।

কথিত আছে, স্কটিশ সন্ন্যাসী সেন্ট মারনক এই দ্বীপেই বসবাস করতেন এবং এই দ্বীপে অবস্থিত গির্জাটিও তিনিই তৈরি করেন। সেলটিক ক্রসের বিভিন্ন ভাঙা পাথরের টুকরোও পাওয়া গিয়েছে এই দ্বীপে। এই ক্রসগুলিও প্রাচীন যুগের তৈরি বলে মনে করা হয়।

১৩ শতকে নরওয়ে এবং স্কটল্যান্ডের মধ্যে হওয়া ‘লার্গ’ যুদ্ধে মৃত ব্যক্তিদের কবর দেওয়ার জন্য এই দ্বীপকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। এককালে এই দ্বীপে বসবাস ছিল ৪১ জনের, কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তারা সবাই প্রায় একই সঙ্গে এই দ্বীপ ছেড়ে চলে যান। ১৯ শতকে নেশামুক্তির জন্য অসুস্থদের এই দ্বীপে পাঠিয়ে দেওয়া হত। এক সময় অপরাধ জগতের আস্তানাও হয়ে উঠেছিল এই দ্বীপ।

বাড়িটি বিক্রির দায়িত্ব নিয়েছেন স্ট্রাট ও পার্কার নামক দুই রিয়েল এস্টেট এজেন্ট। তারা বলেন, এই দ্বীপ শুধু ঐতিহ্যে মোড়া নয়, এত বড়ো দ্বীপে খামার থাকায় যেমন দুগ্ধ জাতীয় দ্রবের ব্যবসা শুরু করাও সম্ভব।

ঢাকা টাইমস/২২জুলাই/একে