‘বিশ্বের সেরা পাঁচ ব্র্যান্ডের একটি হতে চায় ওয়ালটন’

নজরুল ইসলাম
 | প্রকাশিত : ২৩ জুলাই ২০১৯, ১৪:১৫

কোম্পানি হিসেবে ওয়ালটনের যাত্রা ১৯৭৭ সালে। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৫ সালে ইলেকট্রনিকস ব্যবসা শুরু করে। যদিও কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস পণ্য নিয়ে ওয়ালটনের উত্থান হয় ২০০৮ সাল থেকে। এই ১১ বছরে বাংলাদেশি ব্র্যান্ড হিসেবে সফলতার শীর্ষ স্থান দখল করে নিয়েছে ওয়ালটন। এটা সম্ভব হয়েছে কিছু স্বপ্নবান মানুষের কাজ আর প্রচেষ্টার মাধ্যমে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির নানা দিক নিয়ে এই সময়-এর সঙ্গে কথা বলেছেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (রেফ্রিজারেটর) গোলাম মুর্শেদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নজরুল ইসলাম

ওয়ালটনের যাত্রার সময়ের জনবল কী ছিল, এখন কী অবস্থা?

ওয়ালটনের প্রধান পণ্য ছিল রেফ্রিজারেটর। শুরুতে দিনে একশ বা দুইশ উৎপাদন করতে পারলে মনে হয়েছে অনেক হচ্ছে। সেখান থেকে প্রতিবছর দু-একটা করে ইউনিট যোগ হতে থাকে। ২০০৫ সালের জনশক্তি আর এখন যদি পুরো ওয়ালটনের জনশক্তি বা কর্মসংস্থানের হিসাব করি, আনুমানিক ২০ হাজারের মতো শুধু ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। এর বাইরে ডিস্ট্রিবিউটর আছে ১৫ থেকে ১৬ হাজার। নিজস্ব প্লাজা আছে তিনশ’র মতো। সব মিলিয়ে চিন্তা করলে ওয়ালটনের সঙ্গে এ মুহূর্তে জীবন-জীবিকায় নির্ভর করছে প্রায় লাখখানেক পরিবার।

ওয়ালটন রেফ্রিজারেটরের যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে পুরোটাই কি দেশে হচ্ছে?

হ্যাঁ। বাংলাদেশে একটা সময়ে ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ড বলতে চিন্তা করা হতো বিদেশি কয়েকটি প্রোডাক্টের কথা। আমাদের পরিচালক মহোদয়রা ভেবেছিলেন শুধু বিদেশি ব্র্যান্ড দিয়ে বাংলাদেশ চলবে কেন? তাদের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের কোনো ব্র্যান্ড দেশে রাজত্ব করবে না কেন? এই চিন্তাভাবনা থেকে ওয়ালটন রেফ্রিজারেটরের পুরোটাই দেশে তৈরি হচ্ছে। ফ্রিজের সবচেয়ে কঠিন বা ফ্রিজের হার্ট বলা হয় কম্প্রেসরকে। সেটাও আমরা বানাচ্ছি। ছোট একটা নাটবোল্ট থেকে শুরু করে পুরোটাই দেশেই তৈরি হচ্ছে। আমাদের তৈরি যন্ত্রাংশ দিয়েই রেফ্রিজারেট তৈরি হচ্ছে।

দৈনিক গড়ে কী পরিমাণ রেফ্রিজারেটর বানাচ্ছে ওয়ালটন? আমাদের পিক ও অফপিক সিজন থাকে। বর্তমানে ওয়ালটন দৈনিক ১০ হাজার ফ্রিজ বানাচ্ছে। এ বছর আমাদের ২২ লাখ ফ্রিজ বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে পরের বছরের পরিকল্পনাও সাজিয়ে ফেলেছি। ২০২০ সালে ওয়ালটন দৈনিক ১২ হাজার ফ্রিজ বানাবে।

ওয়ালটন কোন কোন দেশে পণ্য রপ্তানি করছে? মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, ভারত, মিয়ানমার, নেপালসহ আরও বেশ কিছু দেশে ওয়ালটন পণ্য রপ্তানি করছে। আমরা বর্তমানে ২৫টা দেশে পণ্য রপ্তানি করছি। এই ২৫টা দেশে আমরা সরাসরি ফ্রিজ রপ্তানি করছি। ওয়ালটনের কম্প্রেসর ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে। ফ্রিজ ছাড়াও ওয়ালটনের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হচ্ছে টেলিভিশন। আমরা জার্মানিতে টেলিভিশন রপ্তানি করেছি। আমাদের পরিকল্পনা পরবর্তী বছরে যুক্তরাষ্ট্রের মার্কেটে পৌঁছানো। এটা আমরা করতে পারব, এ বছরের শেষে বা সামনের বছরের শুরুতে।

ওয়ালটন প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের কর্মীদের কী কী সুবিধা দিচ্ছে? ওয়ালটনে যারা কাজ করেন তাদের আমরা কর্মকর্তা বা কর্মচারী বলি না। আমরা বলি ওয়ালটন পরিবার। ওয়ালটন তার পরিবারের সদস্যদের যে পরিমাণ সুবিধা দিচ্ছে, কেউ অখুশি হওয়ার মতো কারণ থাকতে পারে না। কর্মীদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। কর্মীদের ফ্যাক্টরিতে যে খাবার দেওয়া হয়, সেটা নিজেদের তৈরি। বাইরের খাবারে ভেজাল থাকতে পারে। পুষ্টিগুণ পুরোপুরি না থাকতে পারে, এসব চিন্তা থেকে নিজেরাই নিজেদের খাবার তৈরি করি।

শরীরচর্চার জন্য বিশাল একটি ব্যায়ামাগার আছে। ইনডোর খেলার মাঠ আছে। অনেক মায়েদের সন্তান দেখার মতো ঘরে কেউ নেই। তারা সন্তানকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। আমাদের ডে-কেয়ার সেন্টার আছে। সেখানে তাদের রাখা হয়। এছাড়া মেডিকেল সেবা তো আছেই।

ওয়ালটন ফ্রিজকে সেরা কেন বলব? ওয়ালটন ফ্রিজ বিএসটিআই অনুমোদিত ফাইভ স্টার রেটিং প্রাপ্ত। বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড তাদের ল্যাব থেকে আমাদের প্রতিটি প্রোডাক্ট সার্টিফাইড হওয়ার পর কোয়ালিটি কন্ট্রোলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বাজারে যায়। আমাদের পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। তাই এখানে গুণগত মান নিয়ে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

গুণগত মান ঠিক রেখে দেশের মানুষকে সাধ্যের মধ্যে রেফ্রিজারেটর দিচ্ছে ওয়ালটন। আমরা কাঁচামাল কেনার সময়ই পণ্যের গুণগত বিষয়টিকে শতভাগ নিশ্চিত করি। গ্রাহক আমাদের কম্প্রেসরের ১২ বছরের ওয়ারেন্টি পাচ্ছে। ফ্রিজের হৃৎপি- বলতে যেটা বোঝায়, সেই কম্প্রেসরে গ্রাহক নিশ্চয়তা পাচ্ছেন এক যুগ, তার ওপর সার্ভিস তো আছেই। এরপর তো চিন্তার কিছু থাকে না। সারা দেশে আমাদের ৭২টি সার্ভিস সেন্টার আছে। ভ্রাম্যমাণ টিম তো আছেই। কল করলেই গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন সেবাদাতারা। এই সুবিধা অন্য ব্র্যান্ডে নেই।

ইলেকট্রনিকস পণ্য তৈরি, বাজারজাত ও রপ্তানিতে আপনারা সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন বা আরও কী সুবিধা হলে ভালো হয়? বাংলাদেশে ইলেকট্রনিকস ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন, সেটা আসলে সরকারের শিল্পবান্ধব মনোভাবের কারণে সম্ভব হয়েছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এমনকি এবারের বাজেটেও ফ্রিজ, টিভি, এসিসহ অন্যান্য পণ্যের জন্য যে কর আরোপ করা হয়েছে, সেটা আমাদের জন্য শিল্পবান্ধব। সরকারের একটা ইতিবাচক মনোভাব এই খাতের প্রতি রয়েছে। দেশে তৈরি ইলেকট্রনিকস পণ্য রপ্তানিকে আরও উৎসাহিত করা উচিত। রপ্তানিতে প্রণোদনা দেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পাব বলে আমরা আশা করি।

বাংলাদেশে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস যন্ত্রের বাজার কেমন? বিশ্বব্যাপী একটা ট্রেন্ড হচ্ছে প্রতিবছর ২০ শতাংশ নতুন ক্রেতা বাড়ে। আমাদের এখানে সেটা যদি নাও হয় অন্তত ১৫ শতাংশ বাড়ছে। আমাদের সেভাবে পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিবছর আমরাও চাই আমাদের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানোর। তবে মার্কেটের ওঠানামার বিষয়টাও থাকবে। কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস ব্যবহারকারীদের সংখ্যা নিয়ে আমাদের ডাটা যা বলছে, সেটা ঊর্ধ্বগতিতে। আগামী পাঁচ বছর সেটা ঊর্ধ্বগতিতে থাকবে। সারা দেশে বিদ্যুতের সরবরাহ ভালো অবস্থানে চলে আসায় ঢাকার বাইরেও এর সংখ্যাটা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রেফ্রিজারেটর ছাড়াও ওয়ালটন কোন পণ্য নিয়ে বেশি মনোযোগী? ওয়ালটনের মূল গুরুত্বের জায়গায় রয়েছে ফ্রিজ, টিভি ও এসি। এর বাইরে বাকি পণ্যগুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে না, সেটা না। আসলে বিষয়টা হচ্ছে ফ্রিজ বা টিভির মতো বাকি পণ্যগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে না। কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস বলতে যা বোঝায় অর্থাৎ কমপ্লিট হোম সল্যুশন দিচ্ছে ওয়ালটন। ২০২০ সাল নাগাদ আমাদের অন্যান্য পণ্য বেশ জনপ্রিয় হবে। এক কথায় বলতে গেলে ২০২০ সাল নাগাদ একটা মানুষ কমপ্লিট সল্যুশন বলতে ওয়ালটন ছাড়া কিছুই চিন্তা করবে না।

সিএসআরের ক্ষেত্রে ওয়ালটন কী ধরনের ভূমিকা পালন করছে? সিএসআর সবারই থাকে, আমাদেরও আছে। কিছু করে ফোকাস করার চেয়ে ভালো কিছু করাটাই বড় বিষয়। দেশীয় কোম্পানি হিসেবে ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বা ট্রাস্টে ওয়ালটন পরিমাণের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি দিচ্ছে। দেশীয় কোম্পানি হিসেবে এটা একটা বিশাল বিষয়।

ওয়ালটনের পণ্যে নতুন কী কী প্রযুক্তি যোগ হচ্ছে? আগামী বছর থেকে ফ্রিজে এমন কিছু প্রযুক্তি নিয়ে আসা হবে যে, ফ্রিজের খাবারের লেভেলটা সে আপনাকে জানিয়ে দেবে। সুপারশপগুলোর সঙ্গে ট্যাগ করা থাকবে। খাবারের লেভেল কমে গেলে সেখানে তথ্য চলে যাবে। এটা অনলাইনের মাধ্যমে করা হবে। তাছাড়া ওয়ালটন ফ্রিজে এমন একটা ডিভাইস যোগ করা হবে, ফ্রিজ আপনাকে আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা জানিয়ে দেবে।

ওয়ালটনের ভিশন নিয়ে বলুন? ওয়ালটনের ভিশন হচ্ছে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের সেরা পাঁচ ব্র্যান্ডের একটা হওয়া। এটা নিয়ে কাজ করছে ওয়ালটন। আশা করছি ওয়ালটন তাদের লক্ষ্যে যেতে পারবে।

ঈদুল আজহায় রেফ্রিজারেটরের চাহিদা বাড়ে। এ সময়ে ক্রেতাদের জন্য বিশেষ কোনো অফার আছে কি? ঈদুল আজহা আমাদের মূল পিক টাইম। এখন পুরো বাংলাদেশে একটা ডিজিটাল ক্যাম্পেইন চলছে। ডিজিটাল ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য অফার বা পুরস্কার নয়। ডিজিটাল ক্যাম্পেইনে প্রোডাক্ট কেনার পর রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে মিলিয়নিয়ার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে পণ্যের রেজিস্ট্রেশন ডিজিটাইজ করা। রেজিস্ট্রেশন করার পর ফ্রিজ যদি আপনার কাছে থাকে আপনি বাংলাদেশের যেকোনো সার্ভিস পয়েন্ট থেকে আগামী দশ বছর পরও সেটা দেখাতে পারলে সার্ভিসটা পাচ্ছেন। সার্ভিসের ডিজিটাইজড করার যে বিষয়টা, সেটার জন্যই ক্যাম্পেইন করা।

(ঢাকাটাইমস/২৩জুলাই/এনআই/এজেড/এইচএফ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :