সম্প্রীতির বন্ধন ও কিছু কথা

প্রকাশ | ২৩ জুলাই ২০১৯, ১৬:১১

ওবায়দুর রহমান

১৯৯৩ সাল থেকে ফরিদপুরে অবস্থান, রাজেন্দ্র কলেজে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে পড়াকালীন বন্ধুত্ব গনেন কর্মকার, রাজু সাহা, নিতাই শিকদার, রিংকু ব্যান্যার্জী, সোমা রয়, গৌতম সরকার, লিলি কাপুরিয়া, অসীম সাহাসহ আরও অনেকের সাথে। আমি, ফারুক, আক্কাস, খোকন, শাখাওয়াত, লিজি, চুমকি, ঝুমা, শিখা, লতা, শিউলি, মিতা, সজল, কাজল, বিপ্লব সাহা আরও কতজনের সাথে। আমরা পরস্পর পরস্পরের বাড়িতে গিয়েছি বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে। সেখানে কোনো ধর্মীয় বা জাতিগত বিভেদ ছিল না। এখনো নেই।

শিবরামপুরে গিয়েছি বন্ধু গনেনের বাড়িতে, সেখানে কাকিমার হাতের সরিষা ইলিশ রান্নার স্বাদ এখনো চোখ বুজলেই পাই। গনেনের বাবা শ্রদ্ধেয় কাকাবাবু আমাদের বন্ধুদের নিজের ছেলের মতোই স্নেহ আদর করতেন। রিংকুদের বাড়ি গিয়েছি কতবার, কত খেয়েছি আমরা বন্ধুরা দল ধরে। রিংকুদের বাড়ির প্রতিটি সদস্য বড় কাকা থেকে ছোট কাকা, কাকিমারা আমাদের সন্তান স্নেহে আদর করেছেন।

বন্ধুত্বের কারণে রিংকুদের বাড়িতে যাওয়ার সুবাদে বাড়ির বড়দা Mirtun Jo দাদা, মাইকেল দা আমাদের অনেক স্নেহ করতেন। বলতো দাদা তোরা কেমন আছিস, তেমনি ছোট যারা ছিল তারা আমাদের অনেক শ্রদ্ধা করতো। এই রকম কানাইপুরে গিয়েছি দল ধরে রাজু, নিতাই, বিপ্লব সাহাদের বাড়ি। খেয়েছি, আড্ডা দিয়েছি। কখনো আমাদের মনে হয়নি আমরা হিন্দু, মুসলমান বাড়িতে গিয়েছি। আমরা সব সময় মনে করেছি রাজুর বাড়ি, ফারুকের বাড়ি, আক্কাসের বাড়ি, শিখার বাড়ি সব আমাদের বাড়ি।

রাজুর বড়দা কমলেশ দা আমাদের ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন এখনো করেন। তার স্নেহমাখা ডাক দারা তোরা কেমন আছিস? কই সেখানেতো বিভেদ নেই। আবার কখনো আমরা দল ধরে চলে গিয়েছি শিখা, শিউলি, রুমা, ঝুমা ওদের বাসায় আড্ডা খাওয়া দাওয়া এবং তাদের মুরব্বিদের আমাদের সবার প্রতি যে আন্তরিকতা সেগুলি ভোলার নয়। ফরিদপুরে মেস বাড়িতে থেকেছি কলেজের ক্লাস শেষে গনেন, রাজু, আক্কাস, ফারুক সোহাগ আমরা আমার মুজিব বিল্ডিংয়ে ভাড়া রুমে দুপুরে এক মিল ৭ /৮ জন এক লোকমা করে খেয়েছি। কখনো মনে হয়নি আমরা হিন্দু মুসলমান। সেখানে একটি শব্দ ছিল বন্ধুত্ব। সোমা রায়ের বাসায় গিয়ে কত আড্ডা দিয়েছি, তার বাড়ি যশোর গিয়েও আড্ডা দিয়েছি। কত খেয়েছি। তার কোনো তুলনা নেই।

আমার সেই বন্ধু সোমা রায় ২০১০ সালে পরলোকে পাড়ি দিয়েছে। আমরা ব্যতিত হয়েছি, কষ্ট পেয়েছি। বন্ধু সোমা রায়ের পরলোক পরলোকগত আত্মার শান্তি কামনা করছি। ফারুকের বাড়িতে সবাই গিয়েছি দল ধরে, নিতাইয়ের বাড়িতে গিয়েছি পিকনিক করেছি আড্ডা দিয়েছি। রাজু, গনেন, রিংকু, নিতাইদের প্রতিটি পূজা পার্বনে আমরা তাদের বাড়িতে গিয়েছি, খেয়েছি। কলেজে পড়াকালীন অনেক জুনিয়র বন্ধুও ছিল আমাদের তারা আমাদের অনেক সম্মান করতো, এমন একজন পরলোকগত বিশ্বজিৎ দাস নাথু, যতদূর থেকেই দেখা হোক মামা কেমন আছো? তার এই ডাক এখনো কানে বাজে। সনাতন, রেজা, আজমল, রিজভী, দিদার, শিল্পী, কেয়া ওদের সাথে সেই যে আমাদের আত্মার সম্পর্ক। অনেক সিনিয়র ভাইদের সাথে আমাদের ছিল আত্মার সম্পর্ক, অনিমেষ দাদা, যশোধা জীবন দেবনাথ দাদা অজয় কর দাদা, সুমন বাগচী দাদা তাদের সাথে আমার ও আমাদের সম্পর্ক ভোলার নয়। আমি ও জীবনদা, অজয় দা, সুমনদা একসাথে থেকেছি একই রুমে। সে সময়ে পরিচয় হয়েছে মজিবর ভাই, শামিম ভাইসহ আরও অনেক বড় ভাইদের সাথে। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক এখনো অটুট আছে।

রামপ্রসাদ, গোপী, সুব্রত ওদের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। যা কখনো ভুলে যাওয়ার নয়। আত্মীয়তার সুবাদে ফরিদপুরে আমার শশুর বাড়ির পাশে অধিকাংশ পরিবার হিন্দু সম্প্রদায়ের। কিন্তু তারা সবাইতো আমার কাছে একই পরিবারের মতো, অ্যাডভোকেট অসীত মজুমদার কাকা, কাকি আমাকে অনেক স্নেহ করেন, আমার ছেলে মেয়েরা তাদেরকে নিজের নানা নানির মতোই জানে, পূজা, মৌ, কুমার, অমিত, বিধান, দেব, কুমার, সজল মামাদের পরিবার তারাতো আমাদের আত্মার কাছের আত্মীয়। সকালে ঘুম থেকে উঠেতো তাদেরকেই দেখি। কই আমরাতো সবাই একটা বড় পরিবারের মতো সম্প্রতির বাঁধনে বেঁধে আছি। কখনোইতো মনে হয় না আমরা ভিন্ন কিছু। আমাদের সকলেরই ওই ঢাকের শব্দে ও আজানের সুমধুর আহ্বান ঘুম ভাঙে। আমরা সবাই অসাম্প্রদায়িক ও সম্প্রতির বন্ধনে বসবাস করে আসছি। আমার শ্রদ্ধেয় স্যার কমল বৈধ্য, নিমাই রায়, গুরুদাশ পান্ডে, পন্ডিত স্যার, রনদা স্যার, অমল স্যার তাদের স্নেহ আদরের কথা কেমনে ভুলি।

সেখানে কোনো এক প্রিয়া সাহা নামক ব্যক্তি স্বার্থকেন্দ্রিক এক মহিলার আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে নালিশ করা নিয়েতো আর আমরা আমাদের হাজার হাজার বছরের বাঙালি হিন্দু-মুসলমানের অসাম্প্রদায়িক চেতনা মুছে ফেলতে পারি না। আসুন আমরা সবাই পরস্পর পরস্পরের প্রতি সম্মান দেখিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে যাই। এবং আওয়াজ তুলি ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র ও সমাজ সামাজিকতা সবার। সকলের সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ কামনা করছি।