সন্দেহের বশে গণপিটুনি থামছেই না

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ২৩ জুলাই ২০১৯, ২২:১৭
ফাইল ছবি

পুলিশের সতর্কতা আর সরকারের তথ্য বিবরণীর পরেও গুজবের ভয়াবহতা কমছে না। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় প্রতিদিনই ঘটে চলেছে সন্দেহের বশে গণপিটুনির ঘটনা। মঙ্গলবারও দেশের চার জায়গায় কেবল সন্দেহ করেই বেশ কয়েকটি মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সন্দেহভাজনরা ছাড়াও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকে।

মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জে একটি মাদ্রাসায় চুরি করতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন এক যুবক। গাজীপুরে ঝগড়ার একপর্যায়ে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে ছেলেধরা বলে বিপাকে পড়ে স্থানীয় মানুষের পিটুনির শিকার হয়েছেন তারা দুজনেই। ঢাকার নবাবগঞ্জের বাজারে এক নারীকে সন্দেহের বশে মারধর করে পুলিশে দিয়েছে জনতা।

আর কুষ্টিয়ায় গত সোমবারের গণপিটুনির এক ঘটনায় ৩৪ জনকে আটক করা হয়েছে।

‘পদ্মা সেতুর জন্য মাথা লাগবে’ এমন একটি গুজব সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর কেবল বশবর্তী হয়েই গণপিটুনির শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন নিরীহ অন্তত ১০ জন মানুষ। তবে আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গণপিটুনিতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

প্রাথমিক তথ্য বলছে, গত ১৪ দিনে সারাদেশে গুজবের কারণে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ১০ জন মানুষ। তিনটি ঘটনা ঘটেছে রাজধানীতে। আর একই ঘটনার প্রাণে বেঁচে গেলেও আহত হয়েছে আরও অর্ধশতাধিক মানুষ।

গুজবের এই ভয়াবহতার মধ্যে পড়ে প্রাণ যাওয়া ঢাকার বাড্ডার রেনুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। সতর্কতা আসে পুলিশের পক্ষ থেকে। আর তথ্য বিবরণী দিয়ে মানুষকে সতর্ক করার পাশাপাশি কাউকে সন্দেহ হলে পুলিশকে জানাতে বলেছে সরকার। এরপরও দেশের বিভিন্ন স্থানে আজ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।

ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা রাজধানী ঢাকা ও অন্য জেলার জনবহুল স্থানগুলোতে বেশি ঘটছে। তবে গণপিটুনিতে প্রাণ হারানোর পর দেখা গেছে নিহতরা সবাই নিরীহ। কেউ বা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করতে না পেরে আর কেউ বা প্রতিবন্ধী হওয়ায় কথা বলতে না পেরে জনরোষের শিকার হয়েছেন।

ঢাকাটাইমসের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, আজ সদর উপজেলার পাইকপাড়ায় দারুল কোরআন কওমি মাদ্রাসায় ছেলেধরা সন্দেহে আলম নামে এক যুবককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ।

সদর থানার ওসি মোহাম্মদ দাউদ বলেন, ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে আহত আলম মূলত মাদকাসক্ত ও চোর। মাদ্রাসার চুরির উদ্দেশ্যে গেলে সেখানে ছেড়ে ধরা সন্দেহে তাকে গণপিটুনি দেয়া হয়। এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

গাজীপুরের প্রতিনিধি জানান, রাস্তায় স্বামী-স্ত্রী ঝগড়ার এক পর্যায়ে একে অন্যকে ছেলেধরা বলে চিৎকার করলে দুজনই গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। একই সময়ে তাদের সঙ্গে থাকা বন্ধুও পিটুনির শিকার হন। আজ সকাল ১১টা নাগাদ গাজীপুরের শ্রীপুরে নয়নপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, স্বামী-স্ত্রী ও স্বামীর এক বন্ধু রিকশায় যাচ্ছিলেন। তখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে লাগে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ের স্ত্রী রিকশা থেকে নেমে স্বামীকে ছেলেধরা বলে চিৎকার করতে শুরু করে। স্বামীকে স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ছেলেধরা বলে চিৎকার করেন। এসময় লোকজন জড়ো হয়ে গেলে স্থানীয়রা তাদের দুইজনকেই গণপিটুনি দেয়। একই সাথে রিকশায় থাকা স্বামীর বন্ধুও গণপিটুনির শিকার হন।

শ্রীপুর থানা পুলিশ জানিয়েছে, গণপিটুনির শিকার হওয়া ওই নারীর নাম তানিয়া। তিনি বেড়াইদেরচালা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা এবিএম তাজউদ্দিনের মেয়ে। স্বামীর সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে স্থানীয়রা এসে ছেলেধরা সন্দেহে দুজনকে পিটিয়ে আহত করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ ঘটনার তানিয়াকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এদিকে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজলার কলাকোপা বাগমারা বাজারে এক নারীকে সন্দেহের বসে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা। নবাবগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ গোলাম নবী শেখ জানান, বেলা ১১টার দিকে উপজেলার কলাকোপা ইউনিয়নের বাগমারা বাজার এলাকা তাকে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা।

তিনি বলেন, ২৫ বছর বয়সী ওই নারীর বাড়ি খুলনায়। তিনি কেরানীগঞ্জের রুহিতপুরে ভাড়া বাসায় থাকেন বলে তার বরাত দিয়ে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ওই নারীর গতিবিধি সন্দেহ হলে স্থানীয়রা তার সাথে কথা বলেন। নারীর কথায় সন্দেহ বেড়ে গেলে তাকে পুলিশে দেয়া হয়।

কুষ্টিয়ায় সোমবারের গণপিটুনির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩৪ জন

গত সোমবার কুষ্টিয়ায় ছেলেধরা সন্দেহে দুজনকে গণপিটুনির পৃথক দুই মামলায় ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দৌলতপুর থানার ওসি আজম খান জানান, সোমবার মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী বাড়ি থেকে বের হয়ে শিতলাইপাড়া গ্রামে গেলে এলাকাবাসী তাকে গণপিটুনি দিয়ে আহত করে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেয়। এ ঘটনায় মামলা হলে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত শিতলাইপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে গণপিটুনির সঙ্গে জড়িত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অপরদিকে সোমবার দুপুরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল এলাকায় শহিদুল নামে বেদে সম্প্রদায়ের এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করে এলাকাবাসী।

কুষ্টিয়া সদর মডেল থানার ওসি জানান, পুলিশ শহিদুলকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দিয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের সবাইকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

(ঢাকাটাইমস/২৩জুলাই/ডিএম/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :