ভারতে গণপিটুনি বন্ধে একাট্টা তারকারা

বিনোদন ডেস্ক
| আপডেট : ২৪ জুলাই ২০১৯, ১৫:৪৯ | প্রকাশিত : ২৪ জুলাই ২০১৯, ১৫:৪৭

‘জয় শ্রীরাম’ এখন যুদ্ধের স্লোগান। মুসলিম-দলিত ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের গণপিটুনি অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। গণপিটুনিতে দোষীদের জামিন অযোগ্য ধারা এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তির বিধান করতে হবে। এটা মধ্যযুগ নয়। ভারতের এক ঝাঁক তারকার লেখা চিঠিতে এমনই সব মন্তব্যে তোলপাড় গোটা দেশ। আদুর গোপালকৃষ্ণন, মণিরত্নম, অনুরাগ কাশ্যপ, অপর্না সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো ৪৯ জন তারকা তথা বিশিষ্টজনের সই করা এই চিঠি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে।

কেন্দ্র তথা মোদি সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে অবিলম্বে ধর্মের নামে এই উন্মাদনা বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিখ্যাতরা। সেখানে আদুর গোপালকৃষ্ণন, শ্যাম বেনেগালের মতো চিত্র পরিচালকরা যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, কৌশিক সেনের মতো বিশিষ্টরা।

চিঠিতে সই করেছেন চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, লেখক, সাহিত্যিক, সমাজসেবী, চিকিৎসক, পরিবেশবিদ, ভাস্কর, চিত্রকর, শিক্ষাবিদ, গায়ক, ফ্যাশান ডিজাইনারের মতো বিভিন্ন পেশার ৪৯ জন বিশিষ্টজন। নিজেদের শান্তিকামী ও গণতন্ত্রপ্রিয় দেশবাসী হিসেবে উল্লেখ করে গণপিটুনি ও ধর্মের নামে যে উন্মাদনা চলছে, তা নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সবাই। বিশেষ করে দলিত ও মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর যে অত্যাচার, গণপিটুনি-মারধর চলছে তার জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকেই দূষেছেন এই বিশিষ্টজনরা।

চিঠির শুরুতেই ভারত যে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ এবং এখানে যে জাতি-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে সবার সমানাধিকার, তার উল্লেখ করে বিশিষ্টজনদের বক্তব্য, সংবিধানই সেই অধিকার দিয়েছে। কিন্তু সেই অধিকার যে বারবার নানা ঘটনায় লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেটাই তুলে ধরতে চেয়েছেন তাঁরা।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) পরিসংখ্যান তুলে ধরে তারা বলেছেন, ২০১৬ সালে দলিতদের উপর ৮৪০টি অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে। অথচ দোষীদের বিচার হয়েছে এমন নজির প্রায় নেই। এছাড়া আরও কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা এবং রিপোর্ট উল্লেখ করে গণপিটুনি ও অন্যান্য অত্যাচারের ঘটনার পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হয়েছে চিঠিতে।

এই ধরনের ঘটনার উল্লেখ শুধু নয়, সরকার যে এসব ঘটনা কড়া হাতে দমন করতে কার্যত কোনো পদক্ষেপই দেননি, তাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। মোদিকে নিশানা করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সংসদে গণপিটুনির মতো ঘটনার নিন্দা করেছেন আপনি। কিন্তু সেটা যথেষ্ট নয়। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? আমরা মনে করি, এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করতে হবে এবং দ্রুত ও নিশ্চিতভাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। খুনের ক্ষেত্রে যদি প্যারোল ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান থাকে, তাহলে গণপিটুনির ক্ষেত্রে কেন নয়? এ দেশে কোনো নাগরিক ভয়-ভীতির মধ্যে থাকুক এটা কাম্য নয়।’

‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় মারধর, গণপিটুনির মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। হাতে গরম উদাহরণ রয়েছে। কিছুদিন আগেই বিহারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক যুবককে ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় গণপিটুনি দিয়ে মারা হয়েছে। এই নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা। তাদের বক্তব্য, ‘‘জয় শ্রীরাম স্লোগানকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। সবচেয়ে আতঙ্কের এই উন্মাদনা, এই বিশৃঙ্খলা হচ্ছে ধর্মের নামে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, জাতীয়তাবাদের মন্ত্রে ভর করেই দ্বিতীয় বার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি তথা এনডিএ দ্বিতীয় বার ভারতের ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু সরকার বা শাসক দলের বিরুদ্ধে কোনো মতামত প্রকাশ করলেই দেশদ্রোহী বলে দাগিয়ে দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই প্রবণতার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন বিশিষ্টজনরা।

সূত্র: আনন্দবাজার

ঢাকাটাইমস/২৪ জুলাই/এএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :