প্যারিসের চিঠি

হায়েনারা আমার বোন রেনুকে মেরে ফেলেছে

শওকত হায়াত খান বিপ্লব, ফ্রান্স
 | প্রকাশিত : ২৪ জুলাই ২০১৯, ২২:০৬

স্বপ্ন ছোট্ট তুবাকে স্কুলে ভর্তি করাবেন। অথচ কি ঘটে গেল মুহূর্তেই। মানুষরূপী হায়েনাদের শিকার হয়ে গেলেন। নির্মমভাবে রাস্তায় ফেলে এভাবে পিটিয়ে মানুষ হত্যা। কোন যুগে আছি আমরা ভাবা যায়! শুধু তা নয়, মৃত মানুষের লাশের উপরে লাফ দিয়ে উঠে যাওয়া, মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এমন আচরণ মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানাবে।

রেনুর শরীর যখন রাস্তায় পড়ে আছে থেঁতলানো সারা শরীর। রক্তমাখা মুখ, কপালের মধ্যে রক্তভেজা চুলগুলো ঘামে রক্তে লেপ্টে আছে, শেষ নিঃশ্বাস বের হবার আগেও একবার তাকিয়েছিল হায়েনাগুলোর দিকে। সেই তাকানো হয়তো ছিল আশার! শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যদি বেঁচে থাকতে পারতেন। হায়েনারা তো জানে না তুবা মামুনি তার মা ছাড়া ভাত খেতে চাইবে না।

আমার মনে হয়েছে আমার বোন রেনু হয়তো শেষ মুহূর্তেও চেষ্টা করছিল গুছিয়ে কিছু বলতে… “ভাইগো ও ভাই, আমি এখানে এসেছিলাম আমার বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করাতে”। আমি ছেলেধরা না। আমার নাম তাসলিমা রেনু। দুটো বাচ্চা আছে আমার। আমাকে মেরে ফেলবেন না। বাচ্ছাগুলোকে এতিম বানাবেন না। আমি মরে গেলে ওদের যে কেউ থাকবে না। বাসায় বাচ্চাগুলো আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে।”

কিন্তু বোবার মতো রেনু তাকিয়েই ছিল ঘোরালাগা চোখে। বিহব্বল হয়ে মাটিতে পড়ে আছে রেনু। দুটি হাত চারটি হাত লাঠি হাতে ক্রমাগত পেটাতে পেটাতে শেষ করে দিল- শুধু রেনুর জীবনটা নয়, তার সব স্বপ্ন, তার সবকিছু।

আপনারা সবাই অনেক গোছানো মানুষ। পরিপাটি ফিটফাট, নিরাপদ। রেনু, বোনটা আমার যদি এর ছিঁটেফোঁটাও স্মার্ট হতো, তাহলে কি ও বেঁচে যেত। একটু মুখ ফুটে কথা বলতে পারেনি আর আমার বোনের মুখ চিরতরে ওরা বন্ধ করে দিল।

তুবা এখনো ঠিক জানে না, ওর মা তাকে রেখে কোথায় গেছেন! তুবা এটুকু জানে মা তার নিচে গেছে তার জন্য নতুন ড্রেস আনবেন বলে। তুবার অবিরল কান্না আমাকে ব্যথিত করে, আমিবাকরুদ্ধ হচ্ছি ক্ষণে ক্ষণে। দেখতে দেখতে কিছু পশু তুবার মাকে কোনো রকম উস্কানি ছাড়াই দিনেদুপুরে এভাবে মেরে ফেলল। একটা মানুষ কতটা পশুর মতো নির্মম হলে এভাবে একটা মানুষকে মারতে পারে।

সাড়ে তিন বছরের তুবা এখনো দিন গুনছে মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাবে বলে! তুবা তিন দিন ধরে খায়নি, মা’র হাতে খাবে বলে। কিন্তু তুবা কি জানে পৃথিবীর মানুষ ওর মা’কে কি করেছে।

একজন মমতাময়ী মা'কে ছেলেধরা সন্দেহে এভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলল হায়েনারা? কি নৃশংস! কি ভয়ংকর।

এই নৃশংস খুনিদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক আমার দাবি। যদিও বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে।

দেশের মানুষদের আমি বলতে চাই আপনারা আর কোনো তুবাদের মা হারা করবেন না। গুজব ছড়াবেন না। কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে, বুঝাতে পারব না কতটুকু ব্যথা অনুভব করছি। আল্লাহ এদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন এবার অন্তত হায়েনাদের মানুষ হওয়ার তৌফিক দান করুন।

লেখক: সাংগঠনিক সম্পাদক, ফ্রান্স আওয়ামী লীগ। সাবেক সভাপতি, ছাত্রলীগ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :